প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় সঠিক, প্রমাণ হাইকোর্টের রায়েই!

SSC Recruitment Scam: এ দিন রায় ঘোষণার পর অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "আমি বেশ কিছুদিন এই জুডিশিয়ারির অঙ্গ হিসাবে কাজ করেছিলাম। যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করেছিল, ঠকিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর দল। এদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম সকলেই রয়েছেন। হিন্দু-মুসলিম সকলের উচিত মুখ্যমন্ত্রীকে বয়কট করা।"

প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় সঠিক, প্রমাণ হাইকোর্টের রায়েই!
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।Image Credit source: TV9 বাংলা
Follow Us:
| Updated on: Apr 22, 2024 | 12:35 PM

কলকাতা: এসএসসি মামলায় (SSC Recruitment Scam Case) বড় রায় কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court)। ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করা হল। ২২ হাজারেরও বেশি বেআইনি নিয়োগ যে হয়েছিল, তাদের সবার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিল বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। এসএসসি মামলার রায় প্রকাশ হতেই উঠে এসেছে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গও। এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একাধিক বড় রায় দিয়েছিলেন তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে গ্রুপ সি কর্মীদের চাকরিও বাতিল হয়। পরে বিচারপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি রাজনীতিতে যোগ দিলে, বিরোধী ও সমালোচকরা তাঁর রায় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ দিন এসএসসি দুর্নীতি মামলায় রায় ঘোষণা হতেই প্রমাণ হয়ে গেল, প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় ভুল ছিল না।

বিচারপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে রাজনীতিতে যোগ দিতেই বিরোধীরা বিচারপতি থাকাকালীন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তাদের কথায়, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ছিল। তবে আজকের রায়ে সেই তত্ত্ব ভুল প্রমাণ হয়ে গেল।

এ দিন এসএসসি মামলার রায় ঘোষণার সময়ই প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ উঠে আসে। আইনজীবী সুদীপ্ত বসাক বলেন, “বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছিল যে তিনি প্রভাবিত হয়ে এই ধরনের রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে এটা স্পষ্ট, দুর্নীতি হয়েছিলই। পুরো প্যানেল বাতিল করা হল। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় অনেক দয়ালু, তাই পুরো প্যানেল বাতিল করেননি।”

এ দিন রায় ঘোষণার পর অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমি বেশ কিছুদিন এই জুডিশিয়ারির অঙ্গ হিসাবে কাজ করেছিলাম। যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করেছিল, ঠকিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর দল। এদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম সকলেই রয়েছেন। হিন্দু-মুসলিম সকলের উচিত মুখ্যমন্ত্রীকে বয়কট করা। আমি বর্গভীমা মন্দির অবধি পদযাত্রা করব। যোগ্য প্রার্থীরা যাতে চাকরি পান, তার প্রার্থনা করব। আমি যে কঠোরতা দেখাতে পারিনি, ডিভিশন বেঞ্চ তা দেখিয়েছে।”

প্রসঙ্গত, কলকাতা হাইকোর্টের যখন বিচারপতি ছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, সেই সময় ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানি চলছিল তাঁর বেঞ্চে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সরাসরি যুক্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। স্কুল সার্ভিস কমিশনে নিযুক্ত ৯৫২ জন নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওএমআর শিট বিকৃত করে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। প্রথমে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চে মামলা উঠলেও, পরে মামলা হস্তান্তর হয়ে যায় বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর একক বেঞ্চে। বিচারপতি বসুর বেঞ্চ ৯৫২ জনের মধ্যে ৮০৫ জনের চাকরির সুপারিশপত্র বাতিল করে তাঁদের বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয় এসএসসি-কে।

উত্তরপত্রে দুর্নীতির কথা স্বীকার করে নেয় এসএসসি-ও। ৬১৮ জনের নাম প্রকাশ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার কথাও ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ে আরও ১৫৭ জন নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক চাকরি হারান।

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ২৬৯ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। গত বছর সেপ্টেম্বরে মামলাটি ডিভিশন বেঞ্চে যায়। সেখানেও বহাল থাকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ই। অক্টোবর মাসে রাজ্য সরকারের আবেদনের ভিত্তিতে সেই রায়ের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

২০২২ সালের মে-জুন মাসে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে ৩৮১ জন গ্রুপ সি কর্মীর চাকরি বাতিল হয়। ৬০৯ জন গ্রুপ ডি কর্মীর চাকরি বাতিলেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এর পর ২০২৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে ১,৯১১ জন গ্রুপ ডি কর্মীর চাকরি যায়। চাকরি বাতিলের পাশাপাশি এই গ্রুপ ডি কর্মীদের বেতন ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দেন বিচারপতি।