TV9 Bangaliana: আড্ডা সৃষ্টিশীল নাকি কর্মনাশা? কী বলছেন বিশিষ্টরা
TV9 Bangaliana: বঙ্গীয় শব্দকোষ ঘেটে জানা গিয়েছে, আড্ডা অনর্থক গল্পগুজবে সময় কাটানো।
আড্ডা দিতে গিয়ে বাবা মায়ের কাছে প্রচুর বকাবকি খেতে হয়েছে। বারবার শুনতে হয়েছে, আড্ডাই জীবনকে গাড্ডায় নিয়ে ফেলবে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? আড্ডা কি কর্মনাশা? আড্ডা থেকে একটা মানুষ কিছুই কি পায় না? বাঙালিয়ানায় এই আড্ডা নিয়ে আড্ডায় উঠে এল হরেক কথা। সঙ্গীত শিল্পী অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় যেমন বলছেন, আড্ডা তো কর্মনাশাই হবে। কারণ, কেউ তো আর কাজ করতে করতে আড্ডা দেয় না। একেবারেই যুক্তিযুক্ত কথা। কিন্তু আড্ডা দিতে দিতেই বাঙালি পিছিয়ে গেল, এমনও তো শুনতে হয়! সেক্ষেত্রে? উদ্যোগপতি সুহেল শেঠ এ কথা কোনওভাবেই মানতে নারাজ। বরং তিনি মনে করেন, বাঙালির বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কারও কোনও প্রশ্ন থাকাই উচিৎ নয়। এই আড্ডা থেকেই মুক্তচিন্তার জন্ম হতে পারে। চা, সিঙ্গারা সহযোগে সে আড্ডা নিখাদ সোনা।
সাংবাদিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্য জানালেন, বাঙালিকে আড্ডার ঐতিহ্য দিয়ে গিয়েছেন সাহেবরাই। সেরার সেরা সব নাট্যকার, সাহিত্যিকদের আড্ডা বসত সে সময়। একটু তলিয়ে ভাবলে দেখা যাবে, যাদের সেরা আড্ডাবাজের তকমা দেওয়া হয়, সেই সব বাঙালির মগজের ধারও কিন্তু মোটেই কম নয়। এ প্রসঙ্গে শঙ্করলাল সত্যজিৎ রায়ের কথা তুলে ধরেছেন। শঙ্করলালের কথায়, “একবার আমি ওনার সামনেই বসে আছি। ফোন বাজলেই দেখি ফোনটা রিসিভ করছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সবসময় ফোন ধরেন কেন? উনি উত্তর দিয়েছিলেন একটাই কারণে ধরি। এটাই আমার বাইরে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম।”
কিন্তু বঙ্গীয় শব্দকোষ ঘেটে জানা গিয়েছে, আড্ডা অনর্থক গল্পগুজবে সময় কাটানো। আগন্তুকেও উৎপল দত্তকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘প্রোডাক্টিভ আড্ডার উদাহরণ নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যা হয় তা অন্তঃসারশূন্য টোয়াডল ছাড়া কিছুই নয়।’ যদিও সঙ্গীত শিল্পী অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “আমাদের বেড়ে ওঠার মধ্যে আড্ডা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিল। সবাই মিলে এক জায়গায় জড়ো হয়ে নিজেদের কথা বলা, আইডিয়া দেওয়া। সেটা কারও ঠিক হতে পারে, কেউ ভুল হতে পারে, কেউ প্রতিভাবান বেশি, কেউ কম। কিন্তু এক জায়গায় বসে নিজেদের কথাগুলো তুলে ধরা এটার একটা অন্য গুরুত্ব। আমরা ব্যান্ড মিউজিক করি যখন সেটা বুঝি।” এমনও হয়, এই আড্ডা থেকেই বহু মানুষ নিজের ভিতরে জমিয়ে রাখা হতাশাগুলোকেও উগরে দিতে পারে। আড্ডার আসর থেকে যখন ফেরে, বুকজুড়ে তখন আনন্দের অনাবিল ধারা।