বৌদ্ধদের কাছে পবিত্রস্থল তো বটেই, হিন্দু ও দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছেও সমান আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হল বিহারের বুদ্ধগয়া। এই মঠের মূল আকর্ষণ হল মহাবোধি মন্দির। যেখানে গৌতম বুদ্ধ সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। বৌদ্ধধর্ম অনুযায়ী, বর্তমান নেপালের লুম্বিনিতে, খ্রিস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন। রাজপরিবারের একমাত্র রাজপুত্র হয়েও তিনি মানুষের সেবায় ও আধ্যাত্মিক উন্নতির চেষ্টায় সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ৫৮৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এই দিনে গৌতম বুদ্ধ সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। পাশাপাশি ৫৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এই একই দিনে তিনি মহানির্বাণ লাভ করেছিলেন। সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্বলাভের মধ্য দিয়েই জগতে বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তিত হয়। বুদ্ধ পূর্ণিমাকে আবার বুদ্ধ জয়ন্তী (Buddha Jayanti 2021) নামেও পরিচিত।বৈদিক সাহিত্য অনুসারে, ভগবান বুদ্ধ হলেন ভগবান বিষ্ণুর অবতার এবং এই পৃথিবীতে সমস্ত জীবের প্রতি অহিংসা ও করুণার বার্তা শেখাতেই তাঁর আবির্ভাব ঘটেছিল। বিহারের বুদ্ধগয়াতেই গৌতম বুদ্ধ নির্বাণলাভ করেছিলেন। তারপর এই জায়গাতেই সাত সপ্তাহ বিভিন্ন এলাকায় থাকেন। সেগুলি আজও মহাবোধি মন্দির চত্বরেই অবস্থিত।
জানা যায়, তৃতীয় শতাব্দীতে সম্রাট অশোকের আদেশে এই মন্দির তৈরি হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে গুপ্ত বংশের রাজারা এই মন্দিরটির সংস্কার করান। পাটনা তেকে মাত্র ৯৬ কিমি দূরে অবস্থিত এই বৌদ্ধদের পবিত্র মন্দির স্থাপনে এগিয়ে আসেন চিন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, তাইওয়ান, থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। ২০০২ সালে এই মন্দির ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন: Buddha Purnima 2021: বুদ্ধ পূর্ণিমার শুভ সময় ও মাহাত্ম্য কী, জেনে নিন
মহাবোধি মন্দির- গৌতম বুদ্ধ এই বোধি গাছের তলায় নির্বাণলাভ করেছিলেন। এই পবিত্র গাছ হল মন্দিরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান। বৌদ্ধধর্মে বলা হয়েছে, এই গাছের তলায় দীর্ঘ তপসার পর রাজপুত্র সিদ্ধার্থ গৌতম নির্বাণলাভ করেছিলেন। তারপর তাঁর নাম হয় বুদ্ধ। নির্বাণলাভের পর প্রথম সপ্তাহটি এই গাছের তলাতেই কাটিয়েছিলেন। মূল মন্দিরের পশ্চিমে একটি নির্জন জায়গায় বিশালাকৃতি এই বোধি গাছটি এখনও বর্তমান। এখানে বৌদ্ধরা নিয়মিত সাধনা ও প্রার্থনা করেন। পুজাপাঠও চলে।
প্রার্থনাকক্ষ- নির্বাণলাভের পর দ্বিতীয় সপ্তাহটি কাটিয়েছিলেন এই প্রার্থনাকক্ষে। যেটি ‘অনিমেষলোচন চৈত্য’ নামে পরিচিত। মন্দিরে প্রবেশ পথের উত্তরে রয়েছে এই কক্ষটি।
চনক্রমনা
এই স্থানে নির্বাণলাভের তৃতীয় সপ্তাহে কাটিয়েছিলেন গৌতম বুদ্ধ। জানা যায়, ১৮ পা এগিয়ে ও ১৮ পা পিছিয়ে এই স্থানে সপ্তাহব্যাপী সময় কাটিয়েছিলেন।
রত্নগড় চৈত্য
চতুর্থ সপ্তাহটি এই চত্বরেই কাটিয়েছিলেন। মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বার থেকে উত্ত-পূর্বেই রয়েছে এই করত্নগড় চৈত্য।
পদ্মপুকুর
ষষ্ঠ সপ্তাহ কাটিয়েছিলেন পদ্মপুকুর চত্বরে। মূল মন্দিরের দক্ষিণে রয়েছে এই পবিত্র স্থানটি।
আরও পড়ুন: দুর্ধর্ষ রোমাঞ্চের জন্য এই ৪ উচ্চতম হোটেলগুলিতে ঢুঁ মেরে আসুন, নিরাশ হবেন না!
রাজ্যতন গাছ
গৌতম বুদ্ধের ধ্যানপর্বের শেষ সপ্তাহ কেটেছিল এখানে। এই স্থানটি পবিত্র ও ধর্মীয় স্থান হিসেবে চিহ্মিত করতে একটি বৃক্ষরোপন করা হয়েছিল। মন্দিরের দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে এই স্থানটি।
বুদ্ধের সাধনাস্থল ছাড়াও রয়েছে আরও দর্শনীয় স্থান। থাই মনাস্টেরি, মুচলিন্দ লেক, রয়্যাল ভুটান মনেস্টারি, চিনা মন্দির,ভিয়েতনামিজ মন্দির, বার্মিজ বিহার মেস্টারি, সুজাতা মন্দির, সুজাতা কুটির, ইন্দোনেশিয়ান মন্দির, জাপানিজ মন্দির, দলাই লামা প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত ও ভারতের উচ্চতম বুদ্ধ মূর্তি প্রভৃতি।