
একদিকে দাউ দাউ করে জ্বলছে চিতা, অপরদিকে তীব্র হচ্ছে মন্ত্রোচারণের শব্দ। চারিদিক নিকষ কালো। মাঝে মাঝে ডেকে উঠছে দু’একটা শিয়াল। কোনও এক রাতে একবার যদি সেখানে যান, গা ছমছম করবে, তার গ্যারান্টি দেওয়াই যায়। আপনারা জানেন কি কলকাতার বুকে এমন এক জায়গা আছে, যেখানে মৃত্যুই শেষ নয়, বরং এক নতুন আত্মিক যাত্রার শুরু! জায়গাটা হল কেওড়াতলা মহাশ্মশান। যেখানে শুধু দেহ দাহই নয়, চলে তন্ত্রসাধনা, কালী পুজো আর গোপন রহস্যের আরাধনা। চলুন জেনে নেওয়া যাক কেওড়াতলা মহাশ্মশানের ‘শ্মশানকালী’-র রহস্যময় গল্প।
দক্ষিণ কলকাতার বুকে, আদি গঙ্গার তীরে অবস্থিত এই কেওড়াতলা মহাশ্মশান। যা শুধু একটি শ্মশানঘাট নয়, বহু সাধকের তপস্যাক্ষেত্র, বহু তান্ত্রিকের গোপন সাধনার স্থান। ১৮৭০ সালে শুরু হয়েছিল এখানে কালীপুজো। এই পুজো শুরু হওয়ার গল্প বেশ রোমহর্ষক।
কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শ্মশানকালী পুজো কীভাবে শুরু হয়েছিল?
কথিত আছে, স্থানীয় এক কাপালিক দুই ব্রাহ্মণের সাহায্য নিয়ে এই কালীপুজো শুরু করেছিলেন। তবে সেখানে দেবীমূর্তি সব জায়গার থেকে আলাদা। মা এখানে নন চতুর্ভূজা, মায়ের এখানে ২টি হাত। সেইসঙ্গে এখানে মা কালীর জিভ বের করা অবস্থায় নেই। বরং মায়ের জিভ রয়েছে মুখের ভেতর। ১৫৫ বছরের পুরনো পুজোতে এখনও সেই ধারা বজায় রয়েছে।
কেওড়াতলায় শ্মশানকালী পুজো করেন ডোমরা
কালীপুজোর দিন কেওড়াতলা মহাশ্মশানের শ্মশানকালী পুজো হয় দেখার মতো। বুকে সাহস আর মনে বল না থাকলে এখানে পুজো দেখতে যাওয়ার প্ল্যান করবেন কি না, আর একবার ভেবে নিতে পারেন। কারণ, ওইদিন মহাশ্মশানের রূপ যেন বদলে যায়। শ্মশানকালীর পুজো হবে আর শবদাহ হবে না, এমনটা এখানে কখনও হয়নি। যে কারণে একদিকে যখন শবদাহ শুরু হয়, সেইসঙ্গে পুজোর মন্ত্রোচ্চারণও হতে থাকে। এই পুজো প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এমনটা চলে আসছে। এই পরিবেশ শিহরিত করে সকলকে। এখানে ডোমেরা পুজো করেন।
চিতা জ্বলে, মায়ের পুজো চলে
জনশ্রুতি আছে যে, এখানে মা কালীর পুজো মানেই একটা না একটা শব দাহের জন্য আসবেই আসবে। আর পুজোর সময় দাউ দাউ করে জ্বলবে চিতা। সঙ্গে হোমযজ্ঞের আগুন আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানের শ্মশানে শ্মশানকালীর পুজো হয়ে আসছে। তবে সবার থেকে বেশ খানিকটা আলাদা কেওড়াতলার মহাশ্মশানের শ্মশানকালীর পুজো। এখানে পুজো করা পুরোহিতরা জানান, মায়ের পুজোতে সুরা ও মাংস দিতে হয়। সেই সঙ্গে তন্ত্রমতে পুজো হওয়ার পাশাপাশি এমন কয়েকটি ক্রিয়া করা হয়, যা কখনও প্রকাশ্যে আনা হয় না।
কী ভাবছেন? আপনিও চান নাকি এমন এক রোমহর্ষক, রোমাঞ্চে ভরপুর অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে? তা হলে কোনও এক অমাবস্যায়, কিংবা এ বছর কালী পুজোর রাতে আপনার গন্তব্য হতে পারে কেওড়াতলা মহাশ্মশান।
বিঃ দ্রঃ – এই প্রতিবেদনে যে বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে, তা হিন্দুধর্ম থেকে প্রাপ্ত তথ্য। এই বিষয়ে কোনও দায় নেই TV9 Bangla-র।