EURO2020 : সুস্থ হচ্ছেন এরিকসেন, জিতল ফুটবলের ‘মানবিকতা’
জ্ঞান হারান এরিকসেন। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসেন সতীর্থ ও ফিনল্যান্ডের (FINLAND) ফুটবলাররা। মাঠেই করা হয় সিপিআর(CPR)।
কোপেনহেগেনঃ প্রথমার্ধের বাকি তখন মাত্র ২ মিনিট। একটা থ্রো ইন লাগল ডেনমার্কের(DENMARK) ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের(CHRISTIAN ERIKSEN) হাঁটুতে। হঠাৎই মাঠে লুটিয়ে পড়লেন ড্যানিশ উইঙ্গার। আচমকা এই ঘটনায় স্তব্ধ কোপেনহেগেনের পার্কেন স্টেডিয়াম। বন্ধ হয়ে গেল ইউরো কাপের (EURO 2021)ডেনমার্ক-ফিনল্যান্ড (FINLAND)ম্যাচ। এরপর শুরু একরাশ আতঙ্কের প্রহর গোনা। ফুটবল বিশ্ব ফের একবার দেখল এক মানবিকতার জয়।
Fans inside Parken Stadium in Copenhagen continue to chant Christian Eriksen's name.
?️: @MicGWagner pic.twitter.com/Qf89GKmnEE
— Sportsnet (@Sportsnet) June 12, 2021
ম্যাচের বয়স তখন ৪৩ মিনিট। থ্রো ইন হাঁটুতে লাগার পর মাঠেই অচৈতন্য হয়ে পড়লেন এরিকসেন। ছুটে আসেন ডেনমার্ক দলের তাঁর সতীর্থরা। ইউরোর মঞ্চে কি ঘটে গেল মহাবিপদ? এইভাবনায় যখন ডুবতেে শুরু করেছে গোটা দুনিয়া, তখনই এরিকসেনকে প্রাথমিক সিপিআর (CPR)পদ্ধতিতে সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়া চালু করলেন অধিনায়ক সিমোন কেয়ার।অধিনায়ক যখন সতীর্থকে প্রাথমিক শুশ্রূষা দিতে ব্যস্ত, তখন গোটা দল ঘিরে রয়েছে তাঁদের। মাঠে তখন উপস্থিত এরিকসেনের গোটা পরিবার।
কতটা অসুস্থ হয়েছেন এরিকসেন, মাঠে উপস্থিত ফটোগ্রাফাররা তার কিনারা পর্যন্ত করতে পারলেননা। কারন লাল-সাদা জার্সির বাকি ৯ ড্যানিশ ফুটবলার গোল করে ঘিরে রয়েছে প্রিয় সতীর্থকে। হাতে হাত দিয়ে তৈরি করলেন এক শৃঙ্খলা। আর মাঝে অনন্ত লড়াই চালাচ্ছেন অধিনায়ক ও দলের চিকিৎসকরা। উৎকন্ঠা গিলে খাচ্ছে গোটা পার্কেন স্টেডিয়ামকে।
এরপর অধিনায়ক কেয়ার সামলালেন এরিকসেনের পরিবারকে। তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁরা। জড়িয়ে ধরে আশ্বাস দিলেন অধিনায়ক সিমোন কেয়ার। গোটা মাঠে তখন পিন পড়লেও যেন শব্দ পাওয়া যায়। প্রতিপক্ষ ফিনল্যান্ডের ফুটবলাররা বসে পড়েছেন মাটিতে। কিছুক্ষণ পর ফিরে আসে এরিকসেনের জ্ঞান। এবার মাঠ থকে বার করে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পালা শুরু।
হঠাৎই ঘটল এমন একটা দৃশ্য, যার জন্য সত্যি যেন প্রস্তুত ছিল না ফুটবল দুনিয়া। গ্যালারি থেকে উড়ে এল একাধিক ফিনল্যান্ডর পতাকা।গুরুতর অসুস্থ এরিকসেনকে যাতে গোটা দুনিয়া দেখতে না পায়, তারজন্য প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকরা ছুড়ে দিলেন দেশের পতাকা। সেই পতাকাই যেন পর্দার মত ঘিরে রাখল অসুস্থ এরিকসনকে। ফিনল্যান্ডের পতাকা দিয়ে চাদর তৈরি করেই স্ট্রেচারে করেে মাঠ থেকে বার করে আনা হল ডেনমার্কের তারকা ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন। এ দৃশ্য তো সেরা বিজ্ঞাপন হয়ে উঠল ফুটবলে মানবিকতার জয়ের। যখন মাঠ ছাড়ছেন এরিকসেন। তখন দাঁড়িয়ে রয়েছে গোটা স্টেডিয়াম। বন্ধ হল ম্যাচ।
হাসপাতালের পথে এরিকসেন। আর দুই দলকে নিয়ে রেফারি ও বাকি ম্যাচ অফিসিয়ালরা বসলেন বৈঠকে। খেলা কি শুরু করা সম্ভব এই আচমকা দুর্ঘটনার পর? অবশেষে বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হল শুরু হবে ম্যাচ। কিন্তু কিভাবে?
সিদ্ধান্ত হয়, প্রথমার্ধে বাকি ৫ মিনিট খেলা হবে। তারপর ৫ মিনিটের বিরতি। তারপর হবে দ্বিতীয়ার্ধের বাকি ৪৫ মিনিট।এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিল দুই দলই। এরিকসেনের ধাক্কা কাটিয়ে যখন ডেনমার্কের ফুটবলাররা ফের মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ঠিক তখনই এল ফোন। হাসপাতাল থেকে ভিডিও কলে এরিকসনের বার্তা, তোমরা মাঠে নামো। খেলা চালিয়ে যাও। শো মাস্ট গো অন। আর হাসপাতালের চিকিৎসসকরা জানালেন, স্থিতিশীল এরিকসেন। তবে আরও কিছু শারীরিক পরীক্ষা করতে হবে তাঁর। স্বস্তি ফিরল পার্কেন স্টেডিয়ামে। ফের বল গড়াল কোপেনহেগেনে।