জুতোর ফিতে বেঁধে কোটিপতি হয়েছিলেন পেলে!
Pele Pact, FIFA World Cup 1970: কিংবদন্তিদের কখনও মৃত্যু হয় না। তাঁদের নানা মুহূর্ত অমর কাহিনি হয়ে থাকে। সেই মুহূর্ত গুলোর মাধ্যমেই আমরা তাঁদের মনে রাখি। পেলের কেরিয়ারে এমন অসংখ্য মুহূর্ত রয়েছে। সেটা তাঁর ফুটবলার হয়ে ওঠা হোক বা বিশ্বকাপ জয়। এত অমর মুহূর্ত লিখেও শেষ করা যাবে না। ১৯৭০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের কয়েক সেকেন্ড, পেলের কেরিয়ারের তেমনই একটা মুহূর্ত। স্রেফ জুতোর ফিতে বাঁধার জন্য কয়েক কোটি দেওয়া হয়েছিল ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলারকে!
কলকাতা: আপনি রোজ জুতোর ফিতে বাঁধেন তো? কত টাকা পান বলুন তো! এক পয়সাও না। বরং আপনার জীবনের কয়েক মুহূর্ত চলে যায়। সেই সময়গুলো হিসেবে করলে দেখা যাবে, সারা জীবনে জুতোর ফিতে বাঁধতে গিয়েই অনেকগুলো দিন খরচ হয়ে গিয়েছে। আপনি আমি কিংবা আমরা না পেলেও কিংবদন্তি পেলে কিন্তু টাকা পেয়েছিলেন। আর সেটা দু-পাঁচ টাকা নয়। অঙ্কটা চমকে দেওয়ার মতো। আজ থেকে ৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে স্রেফ জুতোর ফিতে বেঁধেই কয়েক কোটির মালিক হয়েছিলেন পেলে! বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কিংবদন্তি পেলেকে হারিয়েছে বিশ্ব। বলা হয়ে থাকে, কিংবদন্তিদের কখনও মৃত্যু হয় না। এক দিকে তাই। তাঁদের নানা মুহূর্ত অমর কাহিনি হয়ে থাকে। সেই মুহূর্ত গুলোর মাধ্যমেই আমরা তাঁদের মনে রাখি। পেলের কেরিয়ারে এমন অসংখ্য মুহূর্ত রয়েছে। সেটা তাঁর ফুটবলার হয়ে ওঠা হোক বা বিশ্বকাপ জয়। এত অমর মুহূর্ত লিখেও শেষ করা যাবে না। ১৯৭০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের কয়েক সেকেন্ড, পেলের কেরিয়ারের তেমনই একটা মুহূর্ত। স্রেফ জুতোর ফিতে বাঁধার জন্য কয়েক কোটি দেওয়া হয়েছিল ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলারকে! বর্তমানের নিরিখে সেই অঙ্কটা ঠিক কত হতে পারে? এ যেন কল্পনাও করা যায় না। আর সেটা হয়েছিল দুই ভাইয়ের ইগোর লড়াইয়ে! সেই ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছিলেন মার্কিন উদ্যোগপতি জো পমপ্লিয়ানো। কী সেই ঘটনা?
অ্যাডিডাস ও পুমা, এই দুই সংস্থার নাম কে না জানে! আমাদের প্রিয় ক্রীড়াবিদরাও এই দুই ব্র্যান্ডকে এনডোর্স করেন। কিন্তু পেলেকে নিয়ে এই দুই সংস্থার কার্যত যুদ্ধ লেগে গিয়েছিল। আর তাতে লাভ হয়েছিল পেলেরই। সেই ঘটনার প্রেক্ষাপট একটু বলা যাক। দুই ভাইয়ের গল্প। অ্যাডলফ ও রুডলফ ড্যাসলার। ১৯২৪ সালে জুতোর কোম্পানি তৈরি করেছিলেন এই দুই ভাই। জার্মানির বাজারে তাঁদের তৈরি জুতোর বিশাল চাহিদা। ক্রমশ সেই ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই সম্পর্কে ভাঙন ধরে দুই ভাইয়ের। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, দু-জনের পথ দু-দিকে!
সালটা ১৯৪০। আলাদা আলাদা কোম্পানি গড়েন দুই ভাই অ্যাডলফ ও রুডলফ। যা পরিচিত হয় অ্যাডিডাস ও পুমা নামে। অ্যাডলফ ও রুডলফ একটা সময় ছিলেন সঙ্গী, আলাদা কোম্পোনি গড়ে হয়ে ওঠেন প্রতিদ্বন্দ্বী। নিজের কোম্পানির উন্নতিতে যতটা দূর যাওয়া প্রয়োজন, সব করতে প্রস্তুত ছিলেন অ্যাডলফ ও রুডলফ। বাজার ধরার জন্য সে সময় যোগ্য ব্যক্তিত্ব কিংবদন্তি পেলে। কিন্তু তাঁর সঙ্গে চুক্তি করা মানে কোম্পানি দেওলিয়াও হয়ে যেতে পারে। সে কারণে এই দুই ভাইয়ের একটি ‘শান্তি চুক্তি’ হয়, পেলের জন্য ঝাঁপাবে না কোনও সংস্থাই।
বিশ্বকাপের মঞ্চ, কিংবদন্তি পেলে খেলতে নামছেন, তাঁর পায়ে যদি ‘আমাদের’ কোম্পানির জুতো থাকে! আর সেটা সারা বিশ্ব দেখলে কোম্পানির যে তরতরিয়ে উন্নতি হবে, এ বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন দু-ভাই। কিন্তু তাঁর সঙ্গে চুক্তি করা তো আর যে সে কম্ম নয়! পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে চুক্তির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হত। পেলের সঙ্গে পুরোপুরি চুক্তি না করেও কীভাবে প্রচারে আসা যায়, সেই রাস্তা খুঁজে নিয়েছিল পুমা। আর সেই মুহূর্ত নিখুঁতভাবে বন্দি করে রাখতে ক্যামেরাম্যানকেও নিজেদের ‘টিমে’ নিয়েছিল পুমা।
পুমার তরফে পেলেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, তাঁদের কোম্পানির জুতো পরে খেলা শুরুর আগে মাঠের মাঝে শুধু ফিতে বাঁধতে হবে। আর সেই টুকুর জন্যই সে সময় প্রায় ১ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দেওয়া হয় পেলেকে। সঙ্গে ক্যামেরাম্যানকেও বড় অঙ্কের অর্থ দেয় তারা। পেলে যখন জুতোর ফিতে বাঁধবেন, সেই মুহূর্তে ক্যামেরা জুম করে পেলের জুতো দেখাতে হবে। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে পেরুর বিরুদ্ধে ম্যাচ শুরুর সময় দেখা যায়, পেলে মাঠের মাঝে জুতের ফিতে বাঁধছেন। সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা জুম করা হয়।
ম্যাচটি ব্রাজিল ৪-২ ব্যবধানে জেতে। পেলের ওই মুহূর্তের পর স্বাভাবিক ভাবেই পুমার জুতো বিক্রি আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছিল অ্যাডিডাস। সে বছর তৃতীয় বার বিশ্বকাপ জেতেন পেলে। সঙ্গে জুতোর ফিতে বাঁধার জন্য অর্থ প্রাপ্তিও ছিল।