সরস্বতী পুজো
বাঙালির আবেগের আর এক নাম সরস্বতী পুজো। প্রতিবছর এই দিনটি ধুমধাম করে পালন করে বাঙালি। ঘরে, স্কুলে-কলেজে পূজিত হন দেবী সরস্বতী। বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীরা মেতে ওঠে বাগদেবীর আরাধনায়। হিন্দু ধর্মানুসারে, এই দিনেই মা সরস্বতীর আবির্ভাব হয়েছিল। তাই প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে এই পুজো হয়। পুরাণ মতে, এই দিনে মা সরস্বতীর আরাধনা করলে মা লক্ষ্মী ও দেবী কালী উভয়ের আশীর্বাদ পাওয়া যায়। বাঙালির জীবনে সরস্বতী পুজোর মাহাত্ম্য অনেক। কচিকাঁচাদের হাতেখড়ি দেওয়া হয় এই দিনেই। সরস্বতী পুজো মানেই বাসন্তী রঙা শাড়ি আর ম্যাচিং পাঞ্জাবিতে সেজে ওঠা। মায়ের আলমারি থেকে সবচেয়ে পছন্দের শাড়িটা দিয়ে সরস্বতী পুজো শুরু করার রেওয়াজ একপ্রকার প্রত্যেক বাঙালি মেয়েরই। সকাল-সকাল কাঁচা হলুদ দিয়ে স্নান, তারপর বাড়ির পুজোয় অঞ্জলি সেরে ছুটতে হয় স্কুল-কলেজে। এই দিনে স্কুল-কলেজের দুয়ার খোলা থাকে প্রাক্তনীদের জন্যও। তাঁদের কাছে এটা একরকম ‘রিইউনিয়ন ডে’, সেই পুরনো ঠিকানায় ফিরে যাওয়া। গল্প-আড্ডা, খাওয়া-দাওয়ার মাঝে ফেলে আসা স্মৃতির পাতায় আরও একবার ঢুঁ মারা। তারপর সারাদিন জুড়ে থাকে আরও প্ল্যান। সরস্বতী পুজো মানে বাঙালির অঘোষিত ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। এই দিনে একরঙা শাড়ি ও পাঞ্জাবিতে জমে ওঠে বাঙালির প্রেম। হাতে-হাত রেখে ঘোরা, একসঙ্গে প্রসাদ খাওয়া… এর যে কী আনন্দ, তা একমাত্র বাঙালিই জানে! সরস্বতী পুজো মানে অনেকর কাছে দীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রথম কুলে কামড়। নানা ভাবে এই দিনটি পালন করে বাঙালি। কেউ-কেউ দল বেঁধে ছোটে পছন্দের সিনেমা দেখতে। কেউ আবার এই দিনটি তুলে রাখে শুধুমাত্র পরিবারের জন্য। আর সবশেষে, পরের দিন সকালের দধিকর্মার কথা না বললেই নয়, যার স্বাদ যেন হার মানায় সব খাবারকে।