Pakistan Silent Pandemic: সাইলেন্ট প্যানডেমিকের কবলে, উজাড় হয়ে যেতে পারে পাকিস্তান!
একটা দেশ, সেখানে হঠাত্ করে মানুষজন অসুস্থ হতে শুরু করেছে। কারণ, মূলত জেনেটিক ডিসঅর্ডার বা জিনঘটিত রোগ। এমন সব অসুখ যা চিকিত্সকরা না বুঝতে পারছেন, না ধরতে পারছেন না। সঙ্গে রয়েছে ব্রেনস্ট্রোক, এইডস এবং আরও অনেক কিছু।
একটা দেশ, সেখানে হঠাত্ করে মানুষজন অসুস্থ হতে শুরু করেছে। কারণ, মূলত জেনেটিক ডিসঅর্ডার বা জিনঘটিত রোগ। এমন সব অসুখ যা চিকিত্সকরা না বুঝতে পারছেন, না ধরতে পারছেন না। সঙ্গে রয়েছে ব্রেনস্ট্রোক, এইডস এবং আরও অনেক কিছু। ১০ বছরের শিশু হঠাত্ করে ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে। আবার একদম সুস্থ মানুষও থালেসেমিয়া, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, ডাউন সিনড্রোম বা টে-স্যাসের মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেক দিন ধরেই এটা ঘটে চলেছে কিন্তু সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রক আসল কারণটাই বুঝতে পারছে না। বাধ্য হয়ে তাঁরা কয়েকটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সংস্থার দ্বারস্থ হন। বিস্তর পরীক্ষানিরীক্ষার পর এমন অবস্থার কী কারণ? সেই রহস্য উদঘাটন হল।
ওই বিশেষজ্ঞ সংস্থা জানাল, বহু বছর ধরে সাইলেন্ট প্যানডেমিকের কবলে পড়েছে ওই দেশ। কোন দেশ? সেই দেশের নাম পাকিস্তান। আর সাইলেন্ট প্যানডেমিক হল কাজিন ম্যারেজ বা তুতো বিয়ে। বহুদিন ধরেই পাকিস্তানে নিজের পরিবারের মধ্যে বিয়ের রেওয়াজ রয়েছে। গত কয়েক দশকে সেই প্রবণতা আরও বেড়েছে। কিন্তু এর ফল কী হতে পারে, কেউ খতিয়ে দেখেনি। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে দেখা যাচ্ছে, জেনেটিক ডিসঅর্ডার বা জিনঘটিত অসুখে দুনিয়ায় এক নম্বরে উঠে এসেছে পাকিস্তান।
এই কাজিন ম্যারেজের বেশ কয়েকটা স্তর আছে। ফার্স্ট কাজিন অর্থাত্ কাকার ছেলেমেয়ে, সেকেন্ড কাজিন অর্থাত্ মামা-মাসির ছেলেমেয়ে। আর তৃতীয় স্তরে এন্ডোগামিক কাজিন। অর্থাত্ একই জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ে। চিকিত্সকরা বলেন, ফার্স্ট কাজিনকে বিয়ে করলে বিপদের সম্ভাবনা বেশি। পাকিস্তানেও ঠিক সেটাই ঘটেছে। যে সব পাকিস্তানি ফার্স্ট কাজিনকে বিয়ে করছেন, তাঁদের ৩৪ শতাংশ কোনও না কোনও জিনঘটিত অসুখে আক্রান্ত। সেকেন্ড কাজিনকে বিয়ের ক্ষেত্রে সেই হার ২০ শতাংশের একটু বেশি। জনসংখ্যার বিচারে এখন দুনিয়ার প্রথম পাঁচে উঠে এসেছে পাকিস্তান। এই মুহূর্তে আড়াই কোটির বেশি পাকিস্তানি জিনঘটিত রোগে আক্রান্ত। অনেকক্ষেত্রে সেটা তাঁরা জানেন। আবার অনেকের ক্ষেত্রে পরীক্ষাও হয়নি। রোগ ধরাও পড়েনি।
ইসলামাবাদ স্কুল অফ জেনেটিক ডিজিসের প্রধান ডঃ বশির বাসাদের দাবি, এই প্রবণতা আগেও ছিল। তবে আশির দশক থেকে দেশে কাজিন ম্যারেজ হঠাত্ করে যায়। তাই জিনঘটিত অসুখ এখন মহামারির আকার নিয়েছে। তাঁর আক্ষেপ, বহু মানুষ না জেনে, নিঃশব্দেই শরীরে রোগ পুষে রাখছেন। এবং পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে তা আরও বেশি করে ছড়িয়ে যাচ্ছে। ভারত সহ এই উপ-মহাদেশে কয়েক-শো বছর আগেও কাজিন ম্যারেজের প্রচলন ছিল। তবে মূলত রাজপরিবার ও অভিজাতদের মধ্যেই কাজিন ম্যারেজ চালু ছিল। প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন গ্রন্থ যেমন মনুস্মৃতিতে কাজিন ম্যারেজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। মনুস্মৃতিতে বলা হয়, সেকেন্ড কাজিন কিংবা সেম কমিউনিটির মধ্যে বিয়ে করাই যথাযথ। তবে ভাই-বোন কিংবা খুড়তুতো ভাই-বানের বিয়ে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। সোসিওলজিস্টরা বলেন, মূলত পরিবারের সম্পদ যাতে পরিবারের বাইরে না যায়, তা নিশ্চিত করতেই কাজিন ম্যারেজের চল হয়েছিল। তবে এখন এর বাইরেও অনেক কারণে লোকজন তুতো বিয়ে করছেন। যেমন পছন্দমতো পাত্র-পাত্রী না পাওয়া, পণ দিতে না পারা ইত্যাদি, ইত্যাদি।
মুঘল আমলে একদম সাধারণ মানুষের মধ্যেও তুতো-বিয়ের রমরমা শুরু হয়। ভারতেও তুতো বিয়ের পরিসংখ্যান উপেক্ষা করার মতো নয়। এই মুহূর্তে ভারতে মোট বিয়ের কাজিন ম্যারেজ ৭ শতাংশের কম। বাংলাদেশে ১২ শতাংশ। আর পাকিস্তানে সেটা ৬৪ শতাংশ। অর্থাত্ পাকিস্তানে যে পরিমাণ বিয়ে হচ্ছে, তার মধ্যে ৬৪ শতাংশই কাজিন ম্যারেজ। এই পরিসংখ্যান দেখলেই স্পষ্ট হবে, কেন ও কী কারণে কাজিন ম্যারেজের এত বড় মূল্য চোকাচ্ছে পাকিস্তান। বাবা- মার শরীরের ঝুঁকিবহুল জিনগুলো সন্তানের শরীরে এন্ট্রি নিলে জিনগত রোগের সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যায়। আজকের দিনে এটা কোনও নতুন বা অজানা বিষয় নয়। তারপরও কাজিন ম্যারেজের পরম্পরায় রাশ টানতে পারছে না পাকিস্তান।