AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

মামা-ভাগ্নের ১৩ হাজার কোটি টাকা চুরির 'গল্প'

মামা-ভাগ্নের ১৩ হাজার কোটি টাকা চুরির ‘গল্প’

TV9 Bangla Digital

| Edited By: সোমনাথ মিত্র

Updated on: Apr 16, 2025 | 7:45 PM

ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যাঙ্ক প্রতারণা। যে কোম্পানির নিজস্ব সম্পদ ৫০ থেকে ৬০ কোটি, তারা কীভাবে এত কোটির ঋণ পায়? সেটা জানতেই পিএনবি-কে পরপর তিনটি চিঠি দেন হরিপ্রসাদ। উত্তর না পেয়ে পিএমও-তে অভিযোগ করেন। পিএমও-র নির্দেশে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে

২০১৬ সালের জানুয়ারি। প্রধানমন্ত্রীর দফতর বা পিএমও-তে পৌঁছল একটি চিঠি। বেঙ্গালুরুর ব্যবসায়ী হরিপ্রসাদ এসভি চিঠি জানিয়েছিলেন, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে। কেলেঙ্কারির অঙ্ক কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে যেতে পারে। সম্ভবত ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যাঙ্ক প্রতারণা। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শুরু করে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট বা ইডি। প্রথম কয়েকদিনের মধ্যেই ইডি অফিসাররা বুঝে যান, হরিপ্রসাদের আশঙ্কা ভুল তো নয়ই, বরং কেলেঙ্কারির অঙ্ক সব রেকর্ড ছাপিয়ে যেতে পারে। এই কেলেঙ্কারির পিছনে রয়েছে গীতাঞ্জলি গ্রুপের কর্ণধার মেহুল চোকসি ও তার ভাইপো নীরব মোদী।

প্রাথমিক তদন্তে ইডি অফিসাররা প্রাথমিকভাবে কী দেখেছিলেন? মূলত তিনটে জিনিস দেখেছিলেন। এক, মুম্বইয়ের পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ব্র্যাডি হাউস ব্রাঞ্চ থেকে তিনটি কোম্পানিকে ১৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার ঋণ বরাদ্দ হয়েছে। দুই, এই ১৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার ঋণ দিতে দু-ডজন লেটার অফ আন্ডারটেকিং এবং ফরেন লেটার অফ ক্রেডিট ইস্যু করা হয়েছে। লেটার অফ আন্ডারটেকিং অর্থাত্‍ ঋণের বিনিময়ে গ্যারান্টি। এর অর্থ – কোনও ব্যবসায়িক সংস্থা বাজার থেকে যে ঋণ নেবে, ব্যাঙ্ক তা শোধ করার গ্যারান্টি দিচ্ছে – এই মর্মে প্রতিশ্রুতি। ফরেন লেটার অফ ক্রেডিট মানে ওই সংস্থা বিদেশ থেকে টাকা তুলতে পারবে। এবং সেক্ষেত্রেও গ্যারেন্টার থাকবে ব্যাঙ্ক। তিন, ২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত উনিশ বার কোনও ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ছাড়াই লেটার অফ ক্রেডিট ইস্যু করা হয়েছে। অবিশ্বাস্য অঙ্কের টাকা। কোনও একটা ব্রাঞ্চের পক্ষে তা মঞ্জুর করা সম্ভবই নয়। তাই ভেঙে, ভেঙে ধাপে ধাপে লেটার অফ ক্রেডিট মঞ্জুর করার কৌশল। ব্যাঙ্কের হেড অফিস ও ওই ব্রাঞ্চের কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে যোগসাজেশ করে জালিয়াতির ছক কষা হয়েছিল। হিরের গহনার দোকানের ফ্রাঞ্চাইসির নামেও কোটি কোটি টাকা তুলেছিলেন মেহুল ও নীরব।

হরিপ্রসাদ এসভি-ও এই ফ্রাঞ্চাইসির ফাঁদে পা দিয়েই প্রতারিত হন। কীভাবে গীতাঞ্জলি জেমসের উপর হরিপ্রসাদের সন্দেহ হল? গীতাঞ্জলির সম্পত্তি ছিল ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার। অথচ সেই সংস্থাই দেশ জুড়ে এক হাজারের উপর ফ্রাঞ্চাইসি খুলতে টাকা তুলছিল। সেই সময় হরিপ্রসাদ জানতে পারেন, পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে গীতাঞ্জলি। যে কোম্পানির নিজস্ব সম্পদ ৫০ থেকে ৬০ কোটি, তারা কীভাবে এত কোটির ঋণ পায়? সেটা জানতেই পিএনবি-কে পরপর তিনটি চিঠি দেন হরিপ্রসাদ। উত্তর না পেয়ে পিএমও-তে অভিযোগ করেন। পিএমও-র নির্দেশে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে। ইডি -র প্রাথমিক তদন্তের পর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে অভিযোগ দায়ের করে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।

২০১৮ সালে পিএনবি কেলেঙ্কারির কথা যখন প্রকাশ্যে এল, তখন পাখি পালিয়েছে। মামা – ভাগনে ভ্যানিশ। ২০১৯ সালে লন্ডনে পু্লিশের হাতে গ্রেফতার হন ভাগনে নীরব মোদী। তারও ৬ বছর পর এবার বেলজিয়ামে ধরা পড়লেন মেহুল চোকসি। দুটি ঘটনাতেই সংশ্লিষ্ট দেশকে গ্রেফতারির অনুরোধ করেছিল কেন্দ্র। বেলজিয়াম মিডিয়ার দাবি, গ্রেফতারির আশঙ্কায় সুইজারল্যান্ডে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন মেহুল। ১৭ তারিখ রওনা হওয়ার আগে বেলজিয়াম সরকারকে মেহুলের ব্যাপারে সতর্ক করে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা। গ্রেফতার হন মেহুল।

৬ বছর ধরে নীরব মোদীকে ভারতে ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে। মেহুলের ক্ষেত্রেও কাজটা সম্ভবত তার থেকেও কঠিন। ব্যাঙ্ক প্রতারণা সামনে আসার কয়েক মাস আগে অ্যান্টিগুয়ার নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন মেহুল। ভারতের হস্তক্ষেপে ২০২২ সালে মেহুলের নাগরিকত্ব খারিজ করে অ্যান্টিগুয়ার প্রশাসন। সেই সিদ্ধান্তকে ওই দেশের শীর্ষ আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছেন মেহুল। মামলা এখনও চলছে এবং মামলার রায় না আসা পর্যন্ত তিনি অ্যান্টিগুয়ার নাগরিক। তারপর মেহুলের দ্বিতীয় স্ত্রী বেলজিয়ামের নাগরিক। ওই দেশের আইন স্ত্রী বেলজিয়ান হলে স্বামী নমিনেশন সিটিজেনশিপের সুবিধা পান। অর্থাত্‍ পুরোপুরি নাগরিক না হয়েও নাগরিকত্বের অধিকাংশ সুবিধাই পাবেন মেহুল। তাকে ভারতে আনার কাজটা খুব একটা সহজ হবে না। তারপর মেহুল পিঠের যন্ত্রণা ও ক্যান্সারে ভুগছেন বলে দাবি আইনজীবীর। এসব ক্ষেত্রে ইউরোপের ফৌজদারি আইনে অভিযুক্তকে ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। এসবের পরেও এক্ষেত্রে ভারতের একটা অ্যাডভান্টেজ আছে।

২০২০ সালে বেলজিয়াম – ভারত প্রত্যার্পণ চুক্তি সই করেছিল এনডিএ সরকার। লেজেন্ডারি ক্রিমিনাল ল-ইয়ার উজ্জ্বল নিকমের দাবি, মেহুল বিরাট আর্থিক প্রতারণা, ব্যাঙ্ক জালিয়াতিতে অভিযুক্ত। দুই দেশের আইনেই সেটা গুরুতর অপরাধ। এবং মেহুলের বিরুদ্ধে যাবতীয় প্রমাণ ইডি এবং সিবিআইয়ের কাছে রয়েছে। তাই কিছুটা সময় লাগলেও মেহুলকে ভারতে ফেরাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। মোদী সরকার সূত্রে খবর, প্রত্যার্পণ প্রক্রিয়া চালাতে মঙ্গলবারই বেলজিয়াম রওনা হচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিশেষ টিম। মেহুলকে প্রত্যার্পণে সরকারি ভাবে আবেদনও করবে কেন্দ্র। কয়েকদিন আগে মুম্বই হামলায় অন্যতম চক্রী তাহাউর হুসেন রানাকে ভারতে ফিরিয়েছে এনআইএ। হাই প্রোফাইল অপরাধীদের মধ্যে দাউদ ইব্রাহিম, ছোটা শাকিল, বিজয় মালিয়ারা এখনও ভারতের ধরাছোঁয়ার বাইরে।