মরা মানুষের দাম চমকে দেবে আপনাকে! রয়েছে পিক সিজন-অফ সিজনও…
একজন আম-আদমি সারা জীবনে যা আয় করেন, মৃত্যুর পর তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ঠিকঠাক বিক্রি হলে অনেক বেশি টাকা উঠতে পারে। মানে, মৃত্যুর পর সেই ব্যক্তির দাম রাতারাতি বেড়ে যাচ্ছে। কত হতে পারে একটা ডেড বডির দাম? আন্দাজ করতে পারেন?
আচ্ছা বলুন তো একটা ডেড বডির দাম কত? হ্যাঁ, ডেড বডির দাম? কত হতে পারে একটা ডেড বডির দাম? আন্দাজ করতে পারেন? আমি বলছি। আপনি কতটা ঠিক ভাবছেন বা আদৌ ঠিকঠাক ভেবেছেন কিনা মিলিয়ে নিন। ডেড বডির দাম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম। পিক সিজনে দাম উঠতে পারে ৪০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা। অফ সিজনে দাম একটু কম। ২০ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ। হ্যাঁ, মৃতদেহের বাজারেও পিক সিজন – অফ সিজন আছে। আরজি কর হাসপাতালের মর্গে গত কয়েকবছর ধরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির চক্র ফুলেফেঁপে উঠেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। তিলোত্তমার খুন ও ধর্ষণে সিবিআই তদন্ত শুরুর পরই সেই অভিযোগ সামনে আসে। এখনও পর্যন্ত সবটাই অভিযোগ। প্রমাণ কিছুই হয়নি।
মর্গে কিংবা খোলা বাজারে ছড়িয়ে রয়েছে এক ধরণের অর্গ্যান চক্র। যেগুলো মূলত মেডিক্যাল এডুকেশনে কাজে আসে। এর বাইরে অর্গ্যান চক্রের টার্গেট সেইসব পরিবার, যাদের কাছের কোনও মানুষের অর্গ্যান ট্রান্সপ্লান্টের প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে যে কোনও অঙ্কের টাকা দিতে রাজি হয়ে যায় ওই পরিবার। এখানে একটা কথা বলা দরকার। আগে মরদেহ থেকে একটা অর্গ্যানই খুলে নেওয়া হতো। এখন গোটা দেহ থেকে এক এক করে সবকটা অঙ্গ সরিয়ে নেওয়া হয়। কোনটা কখন বিক্রির জন্য লাগবে, বলা তো যায় না!
বিষয়টা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে দ্য হিন্দুর একটা প্রতিবেদন খুঁজে পেলাম। ২০১৮-র এপ্রিল মাসের রিপোর্ট। যেখানে একদম হিসেব করে দেখানো হয়েছে, একজন আম-আদমি সারা জীবনে যা আয় করেন, মৃত্যুর পর তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ঠিকঠাক বিক্রি হলে অনেক বেশি টাকা উঠতে পারে। মানে, মৃত্যুর পর সেই ব্যক্তির দাম রাতারাতি বেড়ে যাচ্ছে। ওখানেই দেখানো হয়েছিল, একজন মানুষের মৃত্যুর পর তাঁর দেহের দাম হতে পারে ৬০ লক্ষ টাকা। এখন সেটা নিশ্চয় অনেকটা বেড়েছে। সব অঙ্গ বেচে অর্গ্যান চক্রের লোকজন কত টাকা কামাচ্ছে, ভেবে দেখুন। সেটা কয়েক কোটি টাকা হলেও আশ্চর্য হবো না। এখানে দুটো বিষয় আছে। এক, মৃতের দেহের সব অঙ্গ মোটামুটি সচল মানে বিক্রির যোগ্য থাকতে হবে। দুই, সেই সময় সেই সব অর্গ্যানের চাহিদা থাকতে হবে। ভারতে এই অবস্থা হলে, আমেরিকায় কত? বার্কলে মেডিসিন সেন্টারের দাবি, ওদেশে একজন মানুষের ডেড বডির দাম উঠতে পারে কমবেশি ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ ডলার। মানে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এখানে বলে রাখা দরকার, হিউম্যান অর্গ্যান নিয়ে ব্যবসার অচেনা দুনিয়ার ছবিটা তুলে ধরতেই আমি কতগুলো বিষয় আপনাদের সামনে রাখছি। এর পিছনে আর কোনও উদ্দেশ্য নেই। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে ব্যবসা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এনিয়ে আমাদের দেশে আইন খুবই কড়া। এটা সবসময় মাথায় রাখা প্রয়োজন। আমার পাশে উইন্ডোয় হাসপাতালের কিংবা অন্য যেসব ছবি দেখছেন, সেগুলোও জাস্ট ভিসুয়াল রিপ্রেজেন্টনেশন। এরসঙ্গে অর্গ্যান ট্রেডের কোনও সম্পর্ক নেই। যাইহোক আবার মূল প্রসঙ্গে ফিরি। ২০১৮ সালে দ্য হিন্দুর ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, দেশে অর্গ্যান ব্যবসার পরিমাণ দেড় হাজার কোটি টাকা। ২০২৪-এ তা তিন হাজার কোটিতে পৌঁছে গিয়েছে। সরকারি- সরকারি হাসপাতালের মর্গ থেকে হাসপাতালের ইনডোর, আউটডোর – কোথায় নেই এই চক্রের সদস্যরা। তবে এদের কাছে সবচেয়ে কাজের জায়গা হাসপাতালের মর্গ।
মর্গে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির দেহ থেকে অবাধে যে কোনও অঙ্গ বের করে নেওয়া হয় বলেই অভিযোগ। সব জেনেও কেউ কিচ্ছু জানে না। দেখুন, ইদানিং চিকিত্সার সুযোগ বাড়ায় অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সংখ্যাও বাড়বে। চোখ, হাত-পা, কিডনি, লিভার এমনকি হার্ট প্রতিস্থাপন এখন সাধারণ ব্যাপার। অথচ বেশিরভাগ সময়েই রোগীর চাহিদা মতো অর্গ্যান ডোনার মেলে না। আর তাই ঘুরপথে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেনার এত চাহিদা। এবার রেট চার্টের প্রসঙ্গে আসি। ‘দ্য গ্রেট অর্গ্যান মার্কেটে’ অফ সিজন – পিক সিজনের বিষয়টাও বলব। হার্ট ২০ থেকে ৫০ লাখ। লিভার ৫ থেকে ২৫ লাখ। লাঙ্গ ১৫ থেকে ২৫ লাখ। প্যানক্রিয়াস ১২ থেকে ২০ লাখ। এটা গড় বাজারদর। এই দুনিয়ায় অফ সিজন- পিক সিজন বলে নির্দিষ্ট কোনও সময় নেই। অর্গ্যান চক্রের হাতে যখন একসঙ্গে একাধিক অর্ডার আসে, তখন তাদের পিক সিজন। তুলনায় যখন অর্ডার কম, সেটা অফ সিজন। আর এটা শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা ধরে হয় না। তবে সাধারণত গরম কালে এই বাজারের দরদাম তুলনায় চড়া থাকে।