Iran and Israel War: ইজরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইরানের, তবে কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে গেল?

Iran and Israel War: ইজরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইরানের, তবে কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে গেল?

সুপ্রিয় ঘোষ

|

Updated on: Oct 02, 2024 | 10:55 PM

Iran and Israel War: মঙ্গলবার রাতে ইরানের হামলার পরই লেবাননে মিসাইল ছুড়েছে ইজরায়েল। এই অশান্ত পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, মধ্যপ্রাচ্যের মহাসংগ্রামের মধ্যে দিয়ে কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে গেল?

অসুর বিনাশে মর্ত্যে দশভুজা। অশুভ শক্তির বিনাশে এক লড়াই। লড়াই আরএক জায়গাতেও হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে, যুদ্ধ চলছে। এবার আর কোনও সংগঠনের সঙ্গে দেশের নয়। দেশ বনাম দেশ। ইরান বনাম ইজরায়েল। সামনে দুই দেশের নাম চলে এলেও, অশান্তির প্রেক্ষাপট তো অনেক দিন ধরেই। গাজায় হামাসের হামলা, পাল্টা জবাব। হিজবুল্লার প্রধানের খুন, একটার পর একটা মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ঘটনায় জুড়তে থাকে লেবানন, ইরান। এসব দেখে অনেকে বলছেন এটা কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপট! এখন পশ্চিম এশিয়ায় যা ঘটছে বা ঘটে চলেছে তার সঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিল পাচ্ছেন অনেকেই। একইরকম প্লট। তার ফলে প্রশ্ন উঠেছে আরও এক ওয়ারফ্রন্ট কি খুলে গেল?

তেল আভিভ থেকে জেরুজালেম, দিকে দিকে ইরানের মিসাইল বৃষ্টি। ভয়ঙ্কর হামলা এবং তা ব্যর্থ হয়েছে বলে ইজরায়েল দাবি করলেও, ইরানের পাল্টা দাবি, ৯০ শতাংশ মিসাইল লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে ইরানকে কড়া হুঁশিয়ারি ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর। মঙ্গলবার রাতে ইরানের হামলার পরই লেবাননে মিসাইল ছুড়েছে ইজরায়েল। এই অশান্ত পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, মধ্যপ্রাচ্যের মহাসংগ্রামের মধ্যে দিয়ে কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে গেল?

গাজা ও লেবাননে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি হামাস, হিজবুল্লাহ এবং আইআরজিসি নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে বলে স্বীকার করেছে তেহরান। নেতানিয়াহুকে একুশ শতাব্দীর হিটলার বলে আক্রমণ ইরানের।

এক বছর আগে এই অক্টোবরেই হামাস হামলা চালিয়েছিল গাজায়। তার পর একে একে লেবাননের শিয়া সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লা এবং ইয়েমেনের বিদ্রোহী হুথি গোষ্ঠী তেল আভিভের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এই প্রথম পশ্চিম এশিয়ায় কোনও দেশ সরাসরি ইজরায়েলকে নিশানা করল। গাজায় হামলার বর্ষপূর্তির মুখে লেবাননে গ্রাউন্ড অপারেশনে নামে ইজরায়েলি সেনা। মঙ্গলবার ইজরায়েলি সেনার ট্যাঙ্ক, দক্ষিণ লেবাননে অনুপ্রবেশের পর প্রত্যাঘাত শুরু করে ইরান! মঙ্গলবার রাতে ইজরায়েলের রাজধানী তেল আভিভকে নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।

ইজরায়েলের ভূখণ্ডে আছড়ে পড়ে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র। ইরানি সেনার দাবি, ইতিমধ্যেই প্রায় ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে ইজরায়েলে। এই হামলার পরেই ইরানকে হুঁশিয়ারি দিলেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ইরানকে কঠোর পরিণতির হুঁশিয়ারি দিয়েছে আমেরিকাও।

পশ্চিম এশিয়ায় এই পর্বের শুরু হয় এক বছর আগে গাজা যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে। প্যালেস্তিনীয় সংগঠন হামাসের হামলার জবাবে গাজা আক্রমণ করে নেতানিয়াহুর বাহিনী। প্রথমে আকাশ পথে হামলা, পরে গ্রাউন্ড অপারেশনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় গাজাস্ট্রিপ। নিহত হন একের পর এক হামাস নেতা। গাজা যুদ্ধের সময় থেকেই হামাসের প্রতি সমর্থন জানাতে ইজরায়েল ওপর হামলা শুরু করে লেবাননের জঙ্গি সংগঠন হিজবুল্লা। যার জেরে লেবাবনেও হামলা শুরু করে ইজরায়েলি সেনা বাহিনী । কিন্তু পরিস্থিতি নাটকীয় বদল হয়, হামলায় হিজবুল্লা প্রধান হাসান নাসরাল্লার মৃত্যুতে। ইরানের বিরুদ্ধে বরাবরই হিজবুল্লাকে মদত দেওয়ার অভিযোগে সরব ইজরায়েল ও আমেরিকা। হিজবুল্লা প্রধান নাসরাল্লার মৃত্যুর বদলা নিতেই ইরান এই হামলা চালিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ফ্রান্স অতিরিক্ত সেনা পাঠিয়েছে মধ্য প্রাচ্যে। কোন পথে দুপক্ষকে সামাল, তা নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ।

তেহরানে ঢুকে ইজ়রায়েল দেখিয়ে দিয়েছে যে, শত্রুপক্ষের ডেরায় ঢুকে সফল অভিযান চালানোর ক্ষমতা রয়েছে তাদের। একই সঙ্গে তারা উন্মুক্ত করে দিয়েছে ইরানের নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা বিভাগের দুর্বলতাকেও। গত অক্টোবরে ইজ়রায়েলের উপর সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে তাদের কোনও নেতাই যে আর নিরাপদ নয়, হামাসকে এ বার্তা দিয়েছে তেল আভিভ। আর একপরই ইরান ও ইজরায়েলের যুদ্ধ বেধে গেল। এর ফলে আমেরিকা-সহ অন্যান্য দেশেরও এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এপ্রিলের গন্ডগোলের পরে ইজরায়েলের উপরে রাশ টেনে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত কোনও ক্রমে আটকেছিল মার্কিন প্রশাসন। কিন্তু, ইরানের হামলা পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতিকে আরও খাদের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ক্ষমতার ভারসাম্যর প্রশ্নই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দু-দেশই রণংদেহী। একে-অপরকে সবক শেখাতে চায়। এমন একটা সময়ে চিন্তা বাড়াচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পথ হরমুজ প্রণালী। প্রশ্ন হচ্ছে দুই দেশের যুদ্ধের জেরে যদি ইরান হরমুজ প্রণালী আটকে দেয়, তাহলে বিশ্বে জ্বালানির দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনা। যা সত্যি হলে ঝামেলায় পড়বে ভারতের মতো তেল আমদানিকারী দেশগুলি। কারণ, তেলের দাম বাড়ায় আমদানি খরচ তো বাড়বেই। তার উপরে মূল্যবৃদ্ধি আবারও মাথাচাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। ফলে সমস্যা হবে ঋণনীতি স্থির করা নিয়ে।

ওমান ও ইরানের মধ্যে সরু সমুদ্র প্রণালী হল হরমুজ। যার এক এক জায়গা ৪০ কিমি চওড়া। দুই জাহাজের মধ্যে ২ কিলোমিটারের ফাঁক থাকে। এই জলপথ দিয়েই বিশ্বের অধিকাংশ তেল আমদানি-রফতানি হয়। ২০২২-এ হয়েছিল দিনে ২.১ কোটি ব্যারেল, বিশ্বের চাহিদার ২১ শতাংশ। সৌদি আরব দিনে ৬৩ লক্ষ ব্যারেল তেল রফতানি করে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, কুয়েত, কাতার, ইরাক করে ৩৩ লক্ষ। ইরান পাঠায় ১৩ লক্ষ ব্যারেল। বিশ্বের তেল রফতানির আমদানি-রফতানিরও প্রায় ২০ শতাংশ হয় হরমুজ দিয়ে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা যুদ্ধের জেরে না হরমুজ প্রণালী নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে ইরান। তা হলে সমস্যা অনিবার্য।

আর এই হরমুজ প্রণালীর কথা এলেই তেলের রফতানির প্রসঙ্গ আসে। আমাদের দেশের চাহিদার প্রায় ৮৫% তেল আমদানি করা হয়। হরমুজ প্রণালী দিয়েই সৌদি আরব, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী থেকে তেল এবং কাতার থেকে এলএনজি বয়ে আনে দেশীয় তেল সংস্থাগুলি। ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক এবং বর্তমান যুদ্ধের কারণে, ভারতকেও বৈশ্বিক সরবরাহের খেসারত বহন করবে। এর জেরে অপরিশোধিত তেলের দামও হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় দেশে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমার সম্ভাবনা নিয়ে আবারও প্রশ্ন চিহ্ন দেখা দিয়েছে।

তাহলে প্রত্যক্ষভাবে না হলেও তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পরোক্ষভাবে পড়তে পারে ভারতের বাজারে। এই মুহূর্তে দুই দেশের সঙ্গেই ভারতের খুবই ভাল সম্পর্ক। ইরানের চাবাহারের বন্দরের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ায় পর ভারত আফগানিস্তান, ইরান হয়ে রাশিয়া পর্যন্ত জলপথ পরিবহণে আধিপত্য কায়েম করতে পেরেছে। পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে আফগানিস্তান এবং পশ্চিম এশিয়ায় পৌঁছতে বিকল্প রাস্তা হিসেবে কাজে লাগানো যাচ্ছে। আর ইজরায়েলের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য প্রতি বছরই বাড়ছে। তার সঙ্গে রয়েছে সমরাস্ত্র কেনাবেচার বিষয়টিও। এই প্রেক্ষাপটে দুপক্ষর সঙ্গে ভারসাম্যর রাস্তা নয়াদিল্লির। এই মুহুর্তে দু দেশে হাজার হাজার ভারতীয় রয়েছেন। কেউ পড়াশোনার জন্য ,কেউ গবেষণায়, কেউ আবার নির্মাণ কাজে। তাদের নিয়ে চিন্তিত নয়াদিল্লি। ইরানে বসবাসরত ভারতীয়দের জন্য বলা হয়েছে, তার জন্য প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না বেরোন। তেহরানে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।