Iran-Israel War, Indian Stock Market: যুদ্ধ লেগেছে, পড়ছে শেয়ার বাজার! লোনের ইএমআই বাড়তে পারে, নাভিশ্বাস উঠছে মধ্যবিত্তের…
পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে এই প্রথম মুখ খুলেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তাঁর গলায় শোনা গেল উদ্বেগের সুর। আর তাতেই চিন্তা বেড়েছে দেশের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের। ইজরায়েল আর ইরানের মতো দুই শক্তিশালী দেশের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু হওয়ার উপক্রম হওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
বিশ্ববাজারে অশোধিত তেলের দাম কিছুটা কমে গিয়েছিল। সেই সময় আমাদের দেশে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমারও একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। এবং দেশের মূল্যবৃদ্ধি বেশ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবার সুদ কমাতে পারে বলেও আশা করেছিলো বিশেষজ্ঞ মহল। সুদ কমলে আমাদের মতো সাধারণ মধ্যবিত্তের জীবনে কিছুটা সুরাহা হত। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যা বোঝা যাচ্ছে তাতে সেই পরিস্থিতি আসবে বলে মনে হচ্ছে না।
পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে এই প্রথম মুখ খুলেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তাঁর গলায় শোনা গেল উদ্বেগের সুর। আর তাতেই চিন্তা বেড়েছে দেশের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের। ইজরায়েল আর ইরানের মতো দুই শক্তিশালী দেশের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু হওয়ার উপক্রম হওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। অপরিশোধিত তেলের দাম মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই প্রতি ব্যারেলে ৭০ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৮ ডলার। হিজবুল্লা চিফ নাসরাল্লাকে ইজরায়েল হত্যা করায় এবং ইরান ইজরায়েলে মিসাইল ছোঁড়ায় হুথি জঙ্গিদের উত্সাহ বেড়ে গেছে। লোহিত সাগর ও হরমুজ প্রণালী সংলগ্ন এলাকায় জাহাজে যে ভাবে রোজ অ্যাটাক হচ্ছে তাতে তেলের সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। তেলের পরিবহণ খরচ ইতিমধ্যেই বেড়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতি আরও কিছুদিন চললে তেলের দাম আরও অনেক বেড়ে যাবে। তাতে ধাক্কা খাবে আমাদের দেশের অর্থনীতি।
আবার, এই সুয়েজ খাল দিয়ে লোহিত সাগর হয়ে ইউরোপের সঙ্গে ব্যবসা করে ভারত। গতবছর যেখানে ভারত প্রায় ৯৫০ কোটি ডলারের বাণিজ্য করেছিল সেখানে এবছর এখনও পর্যন্ত ব্যবসা হয়েছে মাত্র ৬০০ কোটি ডলার। ৩৮ শতাংশ বাণিজ্য কমেছে শুধু ইজরায়েল-হামাসের সংঘর্ষের জেরে। এবার ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ লেগে গেল। এর পর কী হবে সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে গোটা পৃথিবী।
উপসাগরীয় যুদ্ধ নয়ের দশকের গোড়ার দিকে ভারতীয় অর্থনীতিকে ধাক্কা দিয়েছিল। সেই পশ্চিম এশিয়াতেই আবার যুদ্ধের আগুন জ্বলে ওঠায় চিন্তা বাড়ছে বিদেশমন্ত্রকের। আন্তর্জাতিক মহলে একটা আশঙ্কা করছে। ইরান এবং ওমানের মাঝখানে পারস্য উপসাগর এবং ওমান উপসাগরের সংযোগস্থলে একটা ন্যারো সি চ্যানেল হল হরমুজ প্রণালী। আশঙ্কা এটাই যে যুদ্ধ বাধায় ইরান এই চ্যানেল আটকে দিতে পারে। গোটা বিশ্বের তৈল বাণিজ্যের প্রায় ২০ শতাংশ এই হরমুজ প্রণালী দিয়েই হয়। আর আমাদের দেশ চাহিদার প্রায় ৮৫% তেলই আমদানি করে। হরমুজ প্রণালী দিয়েই সৌদি আরব, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইরান ও কাতার থেকে ক্রুড অয়েল ভারতে আসে। তাই এই রুটে কোনও সমস্যা হলে তেলের দাম বেড়ে গিয়ে আমদানি খরচ বাড়বেই। আর এর জেরে বাড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও।
আর এর মধ্যেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মানিটারি পলিসি কমিটির বৈঠক। নতুন সুদের হার ঘোষণা হওয়ার কথা এর মধ্যেই। আরবিআই আগে বলেছিল মূল্যবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশের নীচে নামলে সুদ কমানোর কথা ভাবা হবে। সত্যিই গত মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৪ শতাংশের নীচে। কিন্তু, এখন মনে করা হচ্ছে যুদ্ধের জেরে এ মাসে মূল্যবৃদ্ধি আবারও ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে আরবিআইয়ের সুদের হার না কমানোর সম্ভাবনাই বেশি। ফলে যাঁরা ভেবেছিলেন লোনের ইএমআই কমবে, তাদের আশা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
তেলের দাম বাড়ার আশঙ্কায় রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে শেয়ার বাজারেও। গত কয়েকদিনে হাজার পয়েন্ট নেমেছে সেনসেক্স। ফলে শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীদের লোকসান হয়েছে প্রায় ১৬ লক্ষ কোটি টাকা। বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকার বিদেশি পুঁজি। টাটা-আদানি সহ দেশের প্রায় ১৪টি বড় সংস্থার ইরান ও ইজরায়েলে লগ্নি আছে। এইসব সংস্থার শেয়ারের দাম পড়লে বাজারে তারও খারাপ প্রভাব পড়বে। আবার দেখুন ইরান ও ইজরায়েল দুটি দেশই ভারতের বন্ধু। ইরানের চাবাহারের বন্দরের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ায় পর ভারতের জলপথে পণ্য পরিবহণে সুবিধা হয়েছে। সঙ্গে পাকিস্তান এবং চিনকেও চাপে রাখা গেছে। আর ইজরায়েলের সঙ্গে ভারতের সাধারণ বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা বাণিজ্য তো বছর বছর বাড়ছে। দুই দেশেই পেশার কারণে বহু ভারতীয় বাস করেন। ফলে, যুদ্ধ তীব্র হলে দিল্লি কোন পক্ষ নেবে তা নিয়েও একটা একটা টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি মোটেই ভাল ঠেকছে না।