শেষ হয়েছে লোকসভা ভোট, মহিলা ভোটে কে করবে বাজিমাত?
সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা ভোটে দলেরই নজর ছিল মহিলা ভোটে। অতীতেও একাধিক রাজ্যে ক্ষমতা কার হাতে যাবে, তা নির্ণয় করেছে মহিলা ভোট। তাঁদের দিকে তাকিয়ে রাজ্যে রাজ্যে তৈরি হয়েছে একাধিক প্রকল্প। পিছিয়ে নেই এ রাজ্যও। কন্যাশ্রী থেকে শুরু করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের প্রতিশ্রুতি একুশের ভোটে ডিভিডেন্ড দিয়েছিল তৃণমূলকে। এ বার কি হবে? অনুদানে কাজ দেবে, নাকি সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপরে নির্যাতনের প্রভাব পড়বে গোটা রাজ্যে? মহিলা ভোটে কে করবে বাজিমাত?
২০২১। বিধানসভা ভোটের মুখোমুখি বাংলা। বাংলার দিকে দিকে একটাই স্লোগান, বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়। ভোটযুদ্ধে এই স্লোগান ঘুরিয়ে দিল সব হাওয়া। বাংলার মেয়েরা দিকে দিকে পাশে দাঁড়ালেন তাঁদের প্রিয় দিদির। তারপর? তারপর বেড়েছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের বরাদ্দ, বছর বছর মা দুর্গার বরণে হয়েছে কার্নিভাল, কন্যাশ্রী প্রকল্পে মেয়েদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে টাকা! মহিলাদের জন্য চারদিকে প্রকল্পের জোয়ার। বাংলার ৪২ জনের মধ্যে ১২ জন মহিলাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে তৃণমূল। মহিলাদের ভোটের ময়দানে নামাতে আদা-জল খেয়ে নেমেছে রাজ্যের শাসক দল। কিন্তু তৃণমূল সরকারের এই প্রকল্পগুলো কি সত্যি দাগ কাটবে বাংলার মহিলাদের মধ্যে? শুধু রাজ্য কেন গোটা দেশে দিনে দিনে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মহিলা ভোটব্যাঙ্ক। একটা সময় মহিলারা কাকে ভোট দেবেন টা নিয়ন্ত্রণ করতো বাড়ির পুরুষরা। সেদিন গেছে। তাই কি মহিলাদের মন কে জয় করবে সেই নয় বাড়ছে কম্পিটিশান? কিন্তু সে কেন্দ্র হোক আর রাজ্য শুধু কি প্রকল্প আর হাতে টাকা দিলেই মহিলা উন্নয়ন হয়? নারী সুরক্ষার কথা কি ভাবছে দুই সরকার? ভাবলে এ রাজ্যেই কামদুনি বা সন্দেশখালির নাম বারবার ওঠে? রাজ্যজুড়ে কেষ্টবিস্তুদের দাপটে জমিহারা হতে হয় শয়ে শয়ে মহিলাকে? সরকার কী ভাবছে নারীদের স্বনির্ভরতার বিষয়ে? ভাবছে কী এসএসসি মহিলা প্রার্থীদের কথা যারা দুর্নীতির জালে আটকে পড়া শিক্ষা ব্যবস্থাটার জন্য রাস্তায় বসে? যেসব মহিলা সরকারি কর্মচারীদের ডিএ আটকে কী ভাবছে রাজ্য সরকার? নাকি তাদের সংখ্যা এতই কম যে ভোটে কোনও প্রভাবই ফেলবে না? মহিলাদের জন্য কোটি কোটি টাকার প্রকল্প কী শুধুই ভোট ভিক্ষে করতে? মহিলা ভোটে এ রাজ্যে লুকিয়ে রয়েছে কোন অঙ্ক। আজকের নিউজ সিরিজ, লক্ষ্মী লাভের লড়াই।
আজকের নিউজ সিরিজে রয়েছে চারটি পর্ব, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারেই লক্ষ্মীলাভ?, লাডলি বেহনা থেকে লাখপতি দিদি, কতটা দামি মহিলা ভোট?, রাজনীতি বনাম ক্ষমতায়ন।
সেগমেন্ট ১: লক্ষ্মীর ভাণ্ডারেই লক্ষ্মীলাভ?
গোটা দেশের মধ্যে আমাদের রাজ্যেই একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। কোনও সন্দেহ নেই, রাজ্যের মহিলা ভোটারদের কাছে এটা একটা বড় আবেগ। তিনি বারবার মহিলাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এমনকি ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার আজ তাঁর স্লোগান ছিল মা – মাটি – মানুষের সরকার। রাজ্যের মায়েদের জন্যই তিনি বারবার লড়াইয়ে এগিয়ে এসেছেন। ২০২১ সালে শুরু হয়েছিল লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। ভোটের কিছুদিন আগেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের টাকা দ্বিগুন করেছেন তৃণমূল সরকার। বাড়ির মেয়েদের হাতে পাঁচশো থেকে সোজা হাজার টাকা। এই প্রকল্প রাজ্যের মহিলাদের তৃণমূলের পক্ষে টানার বড় কারণ। টাকার অঙ্ক নিয়ে প্রশ্ন করলেও প্রকল্পের বিরোধিতা করতে পারেননি বিজেপি নেতারাও। বরং মহিলা ভোট টানতে খয়রাতিই কি অন্যতম পথ? তেমনই কিন্তু স্পষ্ট হচ্ছে তাঁদের কথাতেও। কিন্তু কেমন আছেন রাজ্যের লক্ষ্মীরা? তাঁদের মাথায় ছাদ আছে? আছে পেট ভরে অন্নের সংস্থান?
সেগমেন্ট ২: লাডলি বেহনা থেকে লাখপতি দিদি
আদি অনন্ত কাল থেকে, সব দেশের সমাজ সংস্কারকরা একটা কথা বারবার বলে এসেছেন যে, কোনও সমাজের অগ্রগতির জন্য মহিলাদের এগিয়ে আসাটা খুব খুব জরুরি। খাঁটি কথা। আমাদের দেশের মতো গণতান্ত্রিক কাঠামোতে নির্ভরশীল ব্যবস্থায় সমাজ ও দেশ গড়ার অন্যতম হাতিয়ার ভোট, তখন ভোটের লাইনেও বা মেয়েরা পিছিয়ে থাকবে কেন? লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী বা রূপশ্রীর কামাল ভোটবাক্সে কতটা পড়ে তা দেখার জন্য আমাদের ৪ তারিখ অবধি অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু শুধু আমাদের রাজ্য কেন? আমাদের রাজ্যের মতোই মহিলাদের মন জয় করতে তো এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন রাজ্য। আরও নতুন নতুন প্রকল্পের নাম উঠে আসছে ভোটের প্রচারে। দেশজুড়ে লক্ষ্মীর ভান্ডারের মত কোন কোন প্রকল্প চলছে? কারা চালাচ্ছে সেই প্রকল্প? আর তার প্রভাব কতটা পড়ছে এই নির্বাচনে? দেখাব আজকের দ্বিতীয় পর্বে।
সেগমেন্ট ৩: কতটা দামি মহিলা ভোট?
প্রোপাগান্ডা। বাংলায় মানে করলে দাঁড়ায় উদ্দেশ্যপূর্ণ প্রচার। প্রোপাগান্ডা সাধারণত আংশিক সত্য বা আংশিক মিথ্যাকে প্রচার করে। অর্থাৎ প্রোপাগান্ডা অনেকটা গ্লাস অর্ধেক ভর্তি বা অর্ধেক খালির মত। প্রোপাগান্ডা অনেকটা নাকি সন্দেশখালির মত। সন্দেশখালির কথায় আসবো কিন্তু তার আগে বলি পল জোসফ গোয়েবলসের কথা। হিটলারের প্রচারমন্ত্রী পল জোসেফ গোয়েবলস বিশ্বাস করতেন, একটা মিথ্যে হাজার বার বললে সত্যি হয়ে যায়। সন্দেশখালিতে কি একটা মিথ্যেকে হাজারবার বলার চেষ্টা করা হয়েছে? বিজেপি সহ বিরোধীরা কি ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে অভিযোগ করেছেন? সন্দেশখালিতে যেসব মহিলা নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন তাঁরা কি সব গোয়েবলসের থিওরিতে বিশ্বাস করেন? নাকি সন্দেশখালিতে হাজারটা সত্যিকে ঢাকতে, একটা মিথ্যেকে সত্যি বলে প্রচারের চেষ্টা চলছে? সন্দেশখালির অভিযোগ মিথ্যা। দাবি করছে তৃণমূল। হাতিয়ার একটার পর একটা ভিডিও ফুটেজ। যে ফুটেজগুলো তৃণমূল দেখাচ্ছে, আর বলছে সন্দেশখালির সব অভিযোগ ঝুট হ্যায়! শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ঝুট হ্যায়! কিন্তু কেন সবকিছুকে ঝুট প্রমান করবার চেষ্টা? সন্দেশখালিতে কি সত্যি কিছু হয়নি? সবটাই সাজানো? অভিযোগ উঠছে ভোট কেনারও। কিন্তু কেন? কেন বলুন তো? সন্দেশখালির নারীরা বদলে দিতে গোটা রাজ্যে মহিলা ভোটের ছবি? ভোটের হাওয়ায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ সন্দেশখালির মহিলাদের মুখ বন্ধ রাখা? দেখাব আজকের তৃতীয় পর্বে।
সেগমেন্ট ৪: রাজনীতি বনাম ক্ষমতায়ন
পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা নারীদের জন্য আসন সংরক্ষন বেড়েছে। প্রতিশ্রুতি একাধিক জনমুখী প্রকল্পের। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মত প্রকল্প দেশে মডেল হয়ে উঠছে? কিন্তু প্রশ্ন একটাই। এই ধরণের প্রকল্পগুলোতে আদৌ কি মহিলারা স্বনির্ভর হচ্ছেন? আর এই টাকার অঙ্কের পাশাপাশি, সামাজিক সুরক্ষা, সম্মান পাচ্ছেন নারীরা? নাকি সমস্তটাই শুধু ভোটের অঙ্ক? সেটাই দেখাব আজকের চতুর্থ অর্থাৎ শেষ পর্বে, আজকের শেষ পর্ব, রাজনীতি বনাম ক্ষমতায়ন।