Jalpaiguri: জাপানি এনকেফালাইটিসের সংক্রমণ নয়, অজানা জ্বর নিয়ে মুখ খুললেন জনস্বাস্থ্য আধিকারিক
Child Death: চিকিত্সক সুশান্ত রায় মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে জানান, জ্বর নিয়ে বিশেষ চিন্তার কিছু নেই। কারণ, আক্রান্ত শিশুদের রক্তপরীক্ষা করে সেখানে যেমন জাপানি এনকেফালাইটিসের জীবাণু পাওয়া যায়নি, তেমনই চিকেনগুনিয়া, স্ক্রাব টাইফাস বা এনএস-ওয়ানের (NS-1) সংক্রমণও নেই।
জলপাইগুড়ি: অজানা জ্বরে (Unknown Fever) ভুগছে উত্তরবঙ্গের শিশুরা। ইতিমধ্যেই মৃত্য়ু হয়েছে দুই শিশুর। কেন এই জ্বরের সংক্রমণ তা জানতে ইতিমধ্য়েই স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে নমুনা পাঠানো হয়। সম্প্রতি, এ প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গের জনস্বাস্থ্য় বিষয়ক বিশেষ আধিকারিক (Special Public Health Officer) চিকিত্সক সুশান্ত রায় জানিয়েছেন, আক্রান্তদের মধ্যে ৩৯ জনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। সেই শিশুদের কারোর ক্ষেত্রেই জাপানি এনকেফালাইটিসের জীবাণু পাওয়া যায়নি। একজনের দেহে ডেঙ্গু সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চিকিত্সক সুশান্ত রায় মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে জানান, জ্বর নিয়ে বিশেষ চিন্তার কিছু নেই। কারণ, আক্রান্ত শিশুদের রক্তপরীক্ষা করে সেখানে যেমন জাপানি এনকেফালাইটিসের জীবাণু পাওয়া যায়নি, তেমনই চিকেনগুনিয়া, স্ক্রাব টাইফাস বা এনএস-ওয়ানের (NS-1) সংক্রমণও নেই। যেহেতু, স্বাভাবিক ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণই প্রকাশিত তাই আতঙ্কের প্রভূত কোনও কারণ নেই। একইসঙ্গে চিকিত্সক আরও জানান, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলেই শিশুরা এই ধরনের জ্বরের সংক্রমণে পড়ছে। তাদের মধ্য়ে যাদের অনাক্রম্যতা তলানিতে তারাই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত। তেমনই এক শিশুর মৃত্য়ু হয়েছে। তবে, ময়নাগুড়িতে যে শিশুটি মারা গিয়েছে সে সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে দাবি জনস্বাস্থ্য আধিকারিকের।
মঙ্গলবারই, ময়নাগুড়ি হাসপাতালে অস্বাভাবিক জ্বর খিঁচুনি ও শ্বাসকষ্টজনিত উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়ার মৃত্যু হয় ৮ মাসের এক শিশুর। পাল্টা, ব্লক স্বাস্থ্য় আধিকারিকের তরফে জানানো হয়, ওই শিশু প্রথম থেকেই অর্ধমৃত অবস্থায় ছিল। পরে মারা যায়। কিন্তু, মৃত শিশুর ময়নাতদন্ত করতে রাজি হয়নি পরিবার। ফলে, শিশুটি কোন রোগে আক্রান্ত তা জানা যায়নি। এ প্রসঙ্গে, চিকিত্সক সুশান্ত রায় বলেন, “এমন কোনও ঘটনা শুনিনি। যদি, এমন ঘটনা হয়ে থাকে তবে তা খতিয়ে দেখব।” পাশাপাশি আশ্বাসের সুরে তিনি বলেন, “আমাদের মেডিক্যাল টিম সবরকমভাবে প্রস্তুত রয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত আমরা এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারব।”
জলপাইগুড়িতে ইতিমধ্যেই মোট ৯৫ জন শিশু চিকিত্সাধীন। মঙ্গলবার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৩৫ জন। হাসপাতালে তারইমধ্যে শয্য়ার আকাল। একটি শয্য়ায় দুই থেকে তিনজন শিশু গাদাগাদি করে শুয়ে রয়েছে। সঙ্গে রয়েছেন শিশুদের মায়েরা। ফলে সমস্যায় পড়ছে চিকিত্সাধীন শিশুরা।
এক সপ্তাহ কাটতে চলল, কিন্তু জলপাইগুড়িতে শিশুদের অজানা জ্বর (Unknown Fever) নিয়ে এখনও বিশেষ হেলদোল নেই স্বাস্থ্য ভবনের। অসুস্থ শতাধিক। তা সত্ত্বেও কারণ অনুসন্ধানের জন্য কোনও বিশেষ টিম পাঠানো হয়নি সেই জেলায়। যা নিয়ে সরকারি চিকিৎসকদের একাংশই প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছেন। শিশুদের অসুস্থতা কেন যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না? প্রশ্ন উঠছে এই নিয়েও। বিতর্কের আরও কারণ রয়েছে। শিশুদের রোগ ম্যানেজমেন্টের জন্য যাঁকে নিয়োগ করা করা হয়েছে সেই সুশান্ত রায় একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ। যা নিয়ে কার্যত বিস্মিত একাংশের চিকিৎসকেরা। কেন স্বাস্থ্য ভবন এহেন সিদ্ধান্ত নিল তা নিয়েও ধন্দ চিকিৎসক মহলে।
নানা মহলে এই নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর অবশ্য মঙ্গলবারই জানা যায়, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে নমুনা আনানো হচ্ছে। এখানেও প্রশ্ন, সাত দিন পরে কেন নমুনা আনার কথা ভাবা হচ্ছে? আগে আনা হল না কেন? যদি নতুন ধরনের ওই ভাইরাস বা প্রজাতির উদ্রেক ঘটে, সে ক্ষেত্রে তা অনুসন্ধানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারেরও সাহায্য দরকার। কিন্তু গোটা বিষয়টি নিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ পদক্ষেপ করা হয়নি বলেই জানাচ্ছেন একাংশের সরকারি চিকিৎসকেরা। প্রশ্ন উঠছে, উত্তরবঙ্গে রোগের প্রকোপের মোকাবিলায় পদক্ষেপ করার প্রশ্নে স্বাস্থ্য ভবন কি কুণ্ঠা বোধ করছে?
অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে, কমবয়সীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে যে ধরনের ক্ষিপ্রতা প্রয়োজন, এ ক্ষেত্রে তেমনটা দেখানো হয়নি। ভুলে গেলে চলবে না, শিশুরোগ চিকিৎসায় উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ার জন্য রাজ্যের পরামর্শদাতা হিসাবে একটা দীর্ঘ সময় কাজ করছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরুণ সিংহ। জলপাইগুড়ি নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত স্বাস্থ্য ভবনের তরফে কোনও রকম যোগাযোগ করা হয়নি। যিনি রাজ্যের শিশু চিকিৎসার পথপ্রদর্শক, এই সময় তাঁর পরামর্শ নেওয়া হবে না কেন? যদিও, প্রশাসনের দাবি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সমস্ত পদক্ষেপ করা হচ্ছে। অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।
আরও পড়ুন: Exclusive: ফের কি ফুল বদল? খবর শুনেই চটলেন চন্দনা