ময়নাগুড়ি: গত এক মাসে একের পর এক নারী নির্যাতনের খবর দেখেছে বাংলা। কখনও হাঁসখালি, কখনও রায়গঞ্জ, কখনও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, আরও অনেক। আর এই তালিকায় এবার সংযোজিত হল জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির নাম। সোমবার ভোরে সমস্ত লড়াই শেষ করে মৃত্যু হয় নির্যাতিতার। মেয়ের মৃত্যুর পরই সিবিআই তদন্তের দাবি জানান নির্যাতিতার বাবা। এদিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে দাঁড়িয়েই সংবাদ মাধ্যমের সামনে কিশোরীর বাবা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, “পুলিশের উপর ভরসা নেই। সিবিআই তদন্ত চাই। মেয়েটার সঠিক বিচার চাই।” তাঁর সাফ দাবি, “সিবিআই যা বলবে আমি তাই করব। যতক্ষণ সিবিআই না আসবে আমি ততক্ষণ দেহ হাসপাতাল থেকে সরাতে দেব না।”
তবে এই প্রথম নয়। এর হাঁসখালি ধর্ষণকাণ্ডের তদন্ত হাতে নেয় সিবিআই। তখনও রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। বিরোধীরাও সিবিআই-এর পক্ষে সওয়াল করেছিল। কিন্তু গলদ কোথায়? কেন নির্যাতিতার পরিবাররা ভরসা করতে পারছেন না পুলিশের উপর? কেন নিরপেক্ষতা নিয়ে উঠছে এত প্রশ্ন? আজ হাসপাতাল থেকে ময়নাগুড়ির সেই কিশোরীর বাবা জানান, “পুলিশি ঝামেলা, আইন-কানুন অত বুঝি না! শুধু চাই সঠিক তদন্ত হোক।”
রাজ্যে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় জল গড়িয়েছে হাইকোর্টে। রাজ্যে অরাজকতার অভিযোগ তুলে শাসকদলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। আক্রান্তের পরিবার যাতে সুবিচার পায় সেই কারণে গত ১২ এপ্রিল রাজ্যে চারটি ধর্ষণের মামলায় তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্টে। দেগঙ্গা, মাটিয়া, ইংরেজবাজার এবং বাঁশদ্রোণী-এই চার জায়গায় ধর্ষণের মামলায় আইপিএস দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এদিকে আজ ময়নাগুড়িকাণ্ডে সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করল মামলাকারীরা। দ্রুত দ্রুত শুনানির আবেদনও জানিয়েছেন তাঁরা।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারীর ঘটনা। ময়নাগুড়ির ওই নাবালিকা বাড়িতে একা ছিল। সেই সুযোগে এক যুবক তার বাড়িতে ঢোকে। ছোট্ট মেয়েটির সঙ্গে পাশবিক আচরণ করে। ঘটনার পর নাবালিকার চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ছুটে আসেন এলাকার লোকজন। বিপদ বুঝে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত।
নির্যাতিতার পরিবার স্থানীয় থানায় অভিযোগও দায়ের করে। কিন্তু অভিযোগ, ওই যুবকের দাদা তৃণমূলের নেতা। সেই প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে গ্রেফতারি এড়াতে আগাম জামিন নিয়ে নেন ওই যুবক। এরপরই ফের এলাকায় ফেরেন তিনি। এদিকে গত ১৩ এপ্রিল ওই নাবালিকার বাড়িতে মুখ ঢেকে কয়েকজন যুবক ঢোকেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয় নির্যাতিতাকে।
শাসিয়ে আসে, কথার নড়চড় হলে পরিবারের লোকজনকে মেরে ফেলবে। এরপরই ভয়ে সিঁটিয়ে যায় নাবালিকা। অভিযোগ, নিজেকে শেষ করে দিতে ১৪ এপ্রিল গায়ে আগুন লাগিয়ে ফেলে। ভর্তি করা হয় জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। কিন্তু ক্রমেই অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই সোমবার ভোরে মৃত্যু হয় তার।