Moynaguri Minor Harassment: চোখে জল, শরীরে অস্থিরতা, মৃত্যুর শেষ মুহূর্তে ময়নাগুড়ির নির্যাতিতা মাকে বলল…
Maynaguri Minor Harassment: একটানা ১২ দিনের সব লড়াই শেষ করে সোমবার ভোরে মৃত্যু হল ময়নাগুড়ির নির্যাতিতার।
শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি: মুখ শুকিয়ে গিয়েছে ওঁদের। রাগ, যন্ত্রণা,কষ্টে তখনও স্বাভাবিক হননি ওঁরা। ভাবতেই পারছেন না হয়ত, ছোট্ট মেয়েটা আর নেই। একটানা ১২ দিনের সব লড়াই শেষ করে সোমবার ভোরে মৃত্যু হল ময়নাগুড়ির নির্যাতিতার। মেয়েটির বাবাই মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন এদিন। জানান, সোমবার ভোর পাঁচটা নাগাদ মৃত্যু হয়েছে নির্যাতিতার। মেয়েটাকে হারানোর যন্ত্রণায় তখনও ব্যাকুল বাবা। দাঁতে-দাত চেপে জানালেন, ‘পুলিশের উপর ভরসা নেই। সিবিআই তদন্ত চাই। মেয়েটার সঠিক বিচার চাই।’ একবার নয় আবারও একই কথা বললেন, ‘আমার মেয়েটা চলে যাওয়ার আগে বলেছে, আসল আসামিকে পুলিশ ওঠায়নি। যাদের গ্রেফতার করেছে তারা নির্দোষ।’
এরপর একটু স্থির হয়ে সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনে ফের মুখ খুললেন নির্যাতিতার বাবা। বললেন, ‘পুলিশি ঝামেলা, আইন-কানুন অত বুঝি না! শুধু চাই সঠিক তদন্ত হোক। সিবিআই যা বলবে আমি তাই করব। যতক্ষণ সিবিআই না আসবে আমি ততক্ষণ দেহ হাসপাতাল থেকে সরাতে দেব না।” কথাগুলো বলে খানিকটা থামলেন। চোখ দু’টো তখনও ভেজা ‘মেয়ে হারা বাবার’। বললেন, ‘এই ঘটনায় দুই ভাই জড়িত। ওরা তো তৃণমূল করে। সুপারভাইজার আবার।…আর ওদের বুদ্ধি দিয়েছে ওদের কাকু। সে বিজেপি করে। তবে আমার কোনও দলের উপরে অভিযোগ নেই। অভিযোগ ব্যক্তির উপরে।’ আবার বললেন, ‘আমি ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে এফআইআর করি। পুলিশ ওদের ধরে। কিন্তু আরও দু’জন ছেলে বাড়িতে আসে। এসে হুমকি দিয়ে যায় বলে পুলিশের অভিযোগ তুলে নিতে। আমার মেয়েটা ভয় পেয়ে গেল। বাবা-মাকে বাঁচাতে নিজেই…’
এদিকে, মেয়েকে হারিয়ে তখনও এক প্রকার হুঁশ নেই মায়ের। হাসপাতালের মেঝেতে বসে মুখে শুধু একটাই কথা, ‘যারা আমার মেয়ের সঙ্গে এমন করল, তাদেরও যেন এই হাল হয়। ওরা যেন ছাড়া না পায়। যে ভাবে আমার মেয়ে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে গেল, ওরাও যেন শেষ হয়ে যায়।’ কাঁদতে-কাঁদতে গলা তখন শুকিয়ে গিয়েছে মহিলার। তার মধ্যেই উগরে একরাশ যন্ত্রণা। বললেন, ‘মেয়েটা কালকে থেকে হাঁপাতে-হাঁপাতে বলছিল, ‘মা আমার খুব অস্থির লাগছে। কিছু একটা কর। আমি বাঁচব না। ওকে দেখেই কেমন লাগছিল। দৌড়ে গিয়ে ডাক্তার ডাকলাম। শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল খুব। ডাক্তার এল। দেখল। তারপর আর পারল না…।
অন্যদিকে, ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা গ্রাম। এক এলাকাবাসী বললেন, “এই ঘটনায় কড়া শাস্তি চাই অভিযুক্তদের। যারা যেমন কাজ করবে, তাদের তেমন শাস্তি হওয়া দরকার।”
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও। এদিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছান সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম। বলেন, “এমন অনেক কেস আসে যেখানে জামিন হয় না। এই সব ঘটনা কেন ঘটছে তার সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এই রকম অসংখ্য বাবা-মায়েদের যন্ত্রণা বুঝতে পারছ? এই রাজ্যে কোনও মহিলাই নিরাপদ নয়।” অপরদিকে, জেলা বিজেপি সভাপতি বাপী গোস্বামী বলেন, “সদ্য যৌবনে পা দেওয়া একটা কিশোরী সে অকালে চলে গেল। শুধুমাত্র তৃণমূলের ক্যাডার বাহিনীদের জন্য। পুলিশ নিশ্চুপ। পুলিশ-প্রশাসন আগে সজাগ হলে এই ঘটনা ঘটত না।”
কী ঘটেছিল?
অভিযোগ, ২৮ ফেব্রুয়ারি ময়নাগুড়ির ওই নাবালিকা বাড়িতে একা ছিল। সেই সুযোগে এক যুবক তার বাড়িতে ঢোকে। ছোট্ট মেয়েটির সঙ্গে পাশবিক আচরণ করে। ঘটনার পর নাবালিকার চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ছুটে আসেন এলাকার লোকজন। বিপদ বুঝে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত।
নির্যাতিতার পরিবার স্থানীয় থানায় অভিযোগও দায়ের করে। কিন্তু অভিযোগ, ওই যুবকের দাদা তৃণমূলের নেতা। সেই প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে গ্রেফতারি এড়াতে আগাম জামিন নিয়ে নেন ওই যুবক। এরপরই ফের এলাকায় ফেরেন তিনি। এদিকে গত ১৩ এপ্রিল ওই নাবালিকার বাড়িতে মুখ ঢেকে কয়েকজন যুবক ঢোকেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয় নির্যাতিতাকে।
শাসিয়ে আসে, কথার নড়চড় হলে পরিবারের লোকজনকে মেরে ফেলবে। এরপরই ভয়ে সিঁটিয়ে যায় নাবালিকা। অভিযোগ, নিজেকে শেষ করে দিতে ১৪ এপ্রিল গায়ে আগুন লাগিয়ে ফেলে। ভর্তি করা হয় জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। কিন্তু ক্রমেই অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই সোমবার ভোরে মৃত্যু হয় তার।
আরও পড়ুন: Maoist Poster in Jhargram: ‘ভয়ঙ্কর খেলা’ খেলতে চেয়ে তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে ফের পোস্টার মাওবাদীদের