Sitabhog: বাহারাইনেও মিলবে ভৈরবচন্দ্র নাগের সীতাভোগ, ক্রম’বর্ধমান’ সীতাভোগ-মিহিদানার খ্যাতি
Burdwan Sweet: ভৈরবচন্দ্র নাগকে একটি বিশেষ মিষ্টি প্রস্তুত করতে বলেন।
বর্ধমান: দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে বরাবরই বাংলার মিষ্টি জগৎজোড়া। সুন্দর, স্বাদ আর গন্ধে বহুবার প্রশংসিত হয়েছে বাংলার মিষ্টি (Sweet)। কখনও রসগোল্লা, কখনও বা বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা একাধিকবার মন কেড়েছে মিষ্টি। মিহিদানার (Mihidana)পর এবার সীতাভোগ, সুদূর মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি দিল মিষ্টি।
গত মঙ্গলবার বর্ধমানের শতাব্দী প্রাচীন মিহিদানা পাড়ি দিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের বড় দ্বীপ বাহরাইনে। আর তার ঠিক এক সপ্তাহ পর এবার বর্ধমান সীতাভোগ এণ্ড মিহিদানা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সিয়েটসের উদ্যোগে ৫ অক্টোবর সকালে ভিনদেশের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিল।
এই প্রতিষ্ঠানের সহ সম্পাদক সৌমেন দাস বলেন,”সপ্তাহ খানেক আগে বাইরাইনে গিয়েছে মিহিদানা। সেখানে মিহিদানা খেয়ে মানুষজন খুবই উচ্ছ্বসিত। তাই এবার বর্ধমান থেকে একটি বাক্সে ২০০ গ্রাম সীতাভোগ ও ২০০ গ্রাম করে মিহিদানা মোট ১০০ টি বাক্স যাবে। একেবারে গাওয়া ঘি থেকে তৈরি জিআই ট্যাগযুক্ত মোট ২০ কেজি সীতাভোগ পাড়ি দিচ্ছে হামাদ বিন ঈসা আল খলিফার রাজ্য বাহরাইনের দ্বীপে আলজাজ়িরার একটি স্টোরে। মিষ্টিটি মঙ্গলবার সকালে প্রথম পৌঁছাবে বর্ধমান থেকে কলকাতায় সরকারি দপ্তর এপেডার কাছে।”
এখানে উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই বর্ধমানের সীতাভোগ, মিহিদানা জি আই স্বীকৃতি পাওয়ার পর দু’মাস আগে ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফে স্পেশাল কভারেজ দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় ডাক বিভাগের উদ্যোগে বাজারে ছাড়া হয়েছে সীতাভোগ মিহিদানাকে নিয়ে বিশেষ খাম।
কথিত আছে ১৯০৪ সালে বর্ধমানের রাজা বিজয়চন্দ মহাতাবকে রাজাধিরাজ উপাধি দেয় ইংরেজ সরকার। সেই উপলক্ষ্যে বর্ধমান রাজপ্রাসাদে এক বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে বাংলার তৎকালীন বড়লাট লর্ড কার্জন বর্ধমান সফরে আসেন। বড়লাটকে খুশি করার জন্য এবং অনুষ্ঠানকে আরও স্পেশাল করার জন্য বর্ধমানের রাজা বিজয়চন্দের নির্দেশে দুটি একদম নতুন মিষ্টি তৈরি হয়—সীতাভোগ আর মিহিদানা। আর নতুন দুই মিষ্টির স্বাদ পেয়ে বড়লাট-সহ বাকি অতিথিরা খুব খুশি হয়ে ছিলেন বলে জানা যায়।
বিজয়চাঁদ মহতাব বর্ধমানের জনপ্রিয় মিষ্টি প্রস্তুতকারক ভৈরবচন্দ্র নাগকে একটি বিশেষ মিষ্টি প্রস্তুত করতে বলেন। সেই সময় ভৈরবচন্দ্র নাগ মিহিদানা ও বর্ধমানের অপর বিখ্যাত মিষ্টান্ন সীতাভোগ তৈরি করেন। ভৈরব নাগের আদিবাড়ি ছিল পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের সাঙঘাটগোলা গ্রাম। নাগেরা ছিলেন রাজাদের খাস মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক।
সীতাভোগ তৈরির প্রধান উপাদান সীতাসের প্রজাতির গোবিন্দভোগ চাল। সীতাসের প্রজাতির গোবিন্দভোগ চাল থেকে প্রস্তুত হওয়ার কারণেই সীতাভোগের একটি নিজস্ব স্বাদ ও সুগন্ধ হয়। এই চাল গুঁড়ো করে তাতে ১:৪ অনুপাতে ছানা মিশিয়ে পরিমাণমত দুধ দিয়ে মাখা হয়। তারপর একটি বাসমতী চালের আকৃতির মত ছিদ্রযুক্ত পিতলের পাত্র থেকে ওই মিশ্রণকে গরম চিনির রসে ফেলা হয়। এর ফলে সীতাভোগ বাসমতীর চালের ভাতের মতো দেখতে লম্বা সরু সরু দানাযুক্ত হয়। এর সঙ্গে ছোট ছোট গোলাপজাম এবং কখনও কখনও কাজুবাদাম ও কিশমিশ মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়।