পূর্ব মেদিনীপুর: পুজোর আগেই প্লাবিত বঙ্গ। বানভাসি বঙ্গের এই অবস্থার জন্য সরাসরি ডিভিসিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বঙ্গ-বন্যা প্রসঙ্গে স্পষ্টই ‘ম্যান-মেড’ তত্ত্বকেই প্রতিষ্ঠা করেছেন মমতা (Mamata Banerjee)। পাল্টা, ডিভিসির তরফ থেকে বলা হয়েছে জল কতটা ছাড়া হচ্ছে তা রাজ্যকে জানিয়েই করা হচ্ছে। রাজ্য়ে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এ বার সরাসরি মমতাকেই নিশানা করলেন শুভেন্দু (Suvendu Adhikari)।
শনিবার, তমলুকের কাঁকটিয়া বাজারে গান্ধী জয়ন্তী পালন করতে এসে নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক বলেন, “দিদিমণির জন্যই রাজ্যে বন্যা এসেছে। নিজের মুখ্য়মন্ত্রীর চেয়ার বাঁচাতে ভবানীপুর নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন দিদিমণি। প্রি-মরশুমি কাজ যা দেড়-দুই শতক ধরে চলে আসছে সেই সব কাজ করেননি তিনি। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ১৮ হাজার কোটি টাকার ভাতা দিতে ব্যস্ত ছিলেন। ফলে বাঁধ মেরামত হয়নি। কোনও পরিকল্পনা না করার ফলেই এই পরিস্থিতি।”
এখানেই থামেননি অধিকারী পুত্র। আরও এক ধাপ সুর চড়িয়ে তিনি বলেন, “দুর্বল বাঁধের মেরামত হয়নি। অতিবর্ষণে ভেঙে গিয়েছে। নিজের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার বাঁচাতে ৫০ লক্ষ মানুষকে ডুবিয়েছেন তিনি। এই অপরাধ ঈশ্বরও ক্ষমা করবেন না। রাস্তাগুলোর বেহাল দশা। সর্বত্র একই ছবি। এখানে ডিভিসির কোনও দোষ নেই। সবই বানিয়ে বানিয়ে বলছেন দিদিমণি।”
ডিভিসি সূত্রে খবর, মাইথন জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়িয়ে ১ লক্ষ ১৫ হাজার কিউসেক করা হয়েছে। দিনে মোট দেড় লক্ষ কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত এই হারেই জল ছাড়ার পরিমাণ বজায় রেখেছে ডিভিসি। অন্যদিকে, পাঞ্চেত ড্যাম থেকে জল ছাড়া হচ্ছে ৩৫ হাজার কিউসেক হারে। ঝাড়খণ্ডে যদি ফের বৃষ্টি হয় তবে জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে বলেই সূত্রের খবর। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) অভিযোগ করেছেন, রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে জল ছাড়া হচ্ছে। বঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি ম্যান-ম্যাড বলে অভিযোগ করেছেন মমতা।
দু’মাস আগে বন্যা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিভিসি ইস্যুতে সরকারিভাবে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি। চারপাতা সেই চিঠির প্রথম লাইনেই মুখ্য়মন্ত্রী লিখেছেন এই বন্যা ‘ম্যান মেড’। পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক সীমারেখা স্পষ্ট করে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ডিভিসির জল ছাড়ার জন্যই ডুবতে বসেছে হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলা। যদিও পাল্টা ডিভিসির পক্ষ থেকে সে সময় জানানো হয়েছিল, রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে একটুও জল ছাড়ে না তারা। জল ছাড়ার পুরো বিষয়টিই রাজ্যের গোচরে রয়েছে। এবারও সেই একই তত্ত্ব খাঁড়া করেন মুখ্যমন্ত্রী।
দুর্গত এলাকাগুলিতে ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও এনডিআরএফ টিম। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে পৌঁছেছে ২ কলম সেনা। দুর্গতদের উদ্ধারকাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই ৮ হাজার মানুষ দুর্গম এলাকা থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে। এই খবরটি সম্প্রচারিত হওয়ার সময়ই খবর আসে, হাওড়ার নরনারায়ণচকের একটি বাঁধ ভেঙে ভেসে যায় গোটা গ্রাম।
ইতিমধ্যেই নবান্নে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। জেলাশাসক ও পুলিশ সুুপারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। বৈঠকে ছিলেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। ইতিমধ্যেই একাধিক জায়গায় দুর্গতদের উদ্ধারে পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী, নামানো হয়েছে এনডিআরএফ টিম।
আরও পড়ুন: Adir Chowdhury: ‘দিদির মুখে গ্যাস ভরছেন ঝুলন দাদু’, পিকে-কে তীব্র কটাক্ষ অধীরের
আরও পড়ুন: North Bengal: অজানা জ্বরে জবুথবু উত্তরবঙ্গ, কোন জেলায় কত আক্রান্ত, জানাল স্বাস্থ্য দফতর