North Bengal: অজানা জ্বরে জবুথবু উত্তরবঙ্গ, কোন জেলায় কত আক্রান্ত, জানাল স্বাস্থ্য দফতর
Mystery Fever: রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, জ্বরের কারণ খুঁজতে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভাইরাস প্যানেলে নমুনা পরীক্ষা করা হবে। পাশাপাশি, উপসর্গের নিরিখে কী ধরনের চিকিৎসা করতে হবে সেই সংক্রান্ত প্রোটোকল বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করছে।
উত্তরবঙ্গ: এখনও অনিয়ন্ত্রিত সংক্রমণ। উত্তরবঙ্গে বিগত ২ সপ্তাহ ধরে এক অজানা জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে একাধিক শিশু। শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, দক্ষিণ বঙ্গেও থাবা গেড়েছে এই জ্বর। রাজ্য জুড়ে প্রায় হাজার শিশু আক্রান্ত জ্বরে। সঙ্গে উপসর্গ শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, বুকে ব্যথা। কীভাবে এই জ্বর তা নিয়ে ধন্দ চিকিত্সামহলে।
উত্তরবঙ্গে বেশিরভাগ হাসপাতালে বেডের অভাবে ঠাঁই হচ্ছে না শিশুদের। করোনার (Corona)-র তৃতীয় ঢেউয়ের বাচ্চাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। রাজ্য জানিয়েছিল সেইমতো পরিকাঠামো গড়ে তারা তৈরি। কিন্তু গত এক সপ্তাহে অজানা জ্বরে যে ভাবে রাজ্যে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে, এবং হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না, তার প্রেক্ষিতে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে।
এদিকে যে জ্বর এতদিন অজানা বলা হচ্ছিল নমুনা পরীক্ষা করতেই সেই তকমাটা চলে যাচ্ছে ক্রমশ। সামনে আসছে জ্বরের নানাবিধ কারণ। মূলত RS ভাইরাস এবং ভাইরাল নিউমোনিয়ার আক্রমণেই জ্বরের প্রকোপ বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। তবে তার পাশাপাশি পরীক্ষায় বিভিন্ন ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া এবং দু একটি ক্ষেত্রে করোনা বা সোয়াইন ফ্লুয়েরও হদিশ মিলেছে বলে জানিয়েছেন চিকিত্সকেরা। স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনকে কেন্দ্র করে জ্বরের তথ্য জোগাড়ের কাজ শুরু হয়েছে গতকাল বিকাল থেকেই। জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের পরে এ বার মুর্শিদাবাদেও অজানা জ্বরে আক্রান্ত শিশুরা।
কোন জেলায় আক্রান্ত কত শিশু জানাল স্বাস্থ্য দফতর
জলপাইগুড়ি- ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ৯২। গত ২৪ ঘণ্টায় জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩১ জন শিশু। চিকিত্সার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ২৬ জনকে। জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়েছে ৫জনকে।
আলিপুরদুয়ার- ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ১১২। গত ২৪ ঘণ্টায় আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৬ জন শিশু। চিকিত্সামুক্ত ৪২ জন। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়েছে ২ জন কে।
কোচবিহার- বুধবার পর্যন্ত ১১৩ জন শিশু আক্রান্ত। গত ২৪ ঘণ্টায় কোচবিহার জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪৬ জন শিশু। হাসপাতাল থেকে মুক্ত ৫৪। মৃত ১।
কালিম্পং- ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ৫। গত ২৪ ঘণ্টায় কালিম্পং জেলা হাসপাতালে ভর্তি ২ শিশু।
দার্জিলিঙ- বুধবার পর্যন্ত আক্রান্ত ৮৬ জন শিশু। গত ২৪ ঘণ্টায় দার্জিলিং জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৮ জন শিশু। ছুটি দেওয়া হয়েছে ১৯ জনকে। দার্জিলিং জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়েছে ২ জনকে। গুরুতর অবস্থা ৩ শিশুর।
মালদা- ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ১৯৬। গত ২৪ ঘণ্টায় মালদা জেলা হাসপাতালে ভর্তি ৬৫জন। চিকিত্সামুক্ত ১৬জন। মালদায় মৃত ২ জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১৫জন শিশু।
উত্তর দিনাজপুর- বুধবার পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৭ জন শিশু রোগী। ছুটি মিলেছে ৫৩ জনের। জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়েছে ৩ জনকে। ১০ জন শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
দক্ষিণ দিনাজপুর- বুধবার পর্যন্ত আক্রান্ত ৯২। গত ২৪ ঘণ্টায় জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩২ জন শিশু। ছুটি দেওয়া হয়েছে ৪৩ জনকে। জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়েছে ১ জন শিশুকে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে ৩ জন শিশু।
উল্লেখ্য, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে জলপাইগুড়ি থেকে পাঠানো ১১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে দু’টি ইনফ্লুয়েঞ্জা বি, দু’টি আরএস ভাইরাস ধরা পড়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে যে ৪৯ টি নমুনা এসেছিল তার মধ্যে ১টি ডেঙ্গু এবং ১ টি জাপানি এনকেফালাইটিসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
অন্যদিকে, আসানসোল জেলা হাসপাতালে জ্বরের উপসর্গ (Mystery Fever) নিয়ে ভর্তি রয়েছে ১৪৮ জন শিশু। সকলেরই একই ধরনের উপসর্গ দেখা গিয়েছে। জ্বর ছাড়াও শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ও খিঁচুনি দেখা দিয়েছে। করোনা পরীক্ষা করার পরেও রিপোর্ট নেগেটিভ আসে আক্রান্তদের। প্রাথমিকভাবে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ বলে মনে হলেও ওই ভাইরাসের নমুনা না মেলায় জ্বরের (Mystery Fever) কারণ নিয়ে ধন্দে চিকিত্সকেরা। ইতিমধ্যেই, মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছেন জেলা মুখ্য় স্বাস্থ্য আধিকারিক। পাশাপাশি, কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনেও জ্বরের কারণ ধরা না পড়ায় নমুনা পাঠানো হয়েছে পুণের ভাইরোলজিক্যাল ল্যাবে। অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুর্গাপুর (Durgapur) মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪২ জন শিশু। বিশেষ টিম তৈরি করে চিকিৎসা শুরু করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত কয়েকদিনে হুঁশ না ফিরলেও অবশেষে তৈরি হয়েছে কমিটি। আজ স্বাস্থ্য ভবনে দিনভর দফায় দফায় বৈঠক হয় এই বিষয়ে। অজানা জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গি, ডায়ারিয়া, ম্যালেরিয়া নিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় সবকটি মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি, অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম। এরপর দুপুর দেড়টায় জলপাইগুড়ির ঘটনার প্রেক্ষিতে গঠিত আট সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। সেই বৈঠকের সূত্র ধরে বিকেলে ফের জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, ডেপুটি সিএমওএইচ টু, এমএসভিপি, জেলা হাসপাতালের সুপার, নিকু-পিকু-আইসিইউ ইনচার্জ এবং প্রতিটি হাসপাতালের একজন শিশুরোগ চিকিৎসকের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ কমিটির উপস্থিতিতে বৈঠক করেন স্বাস্থ্য সচিব।
জ্বরের প্রাদুর্ভাব নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “বছরের এ সময় প্রতিবারই শিশুদের মধ্যে ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়। এ বছর সংখ্যাটা বেশি। তার মানে এই নয় যে কিছুই ঘটেনি। রোগ যখন হচ্ছে। শিশুদের আইসিইউয়ে ভর্তি যখন করতে হচ্ছে তখন কিছু একটা কারণও নিশ্চিত রয়েছে।” পাশাপাশি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর কী কী পদক্ষেপ করতে চলেছে তাও স্পষ্ট করেন স্বাস্থ্য় অধিকর্তা।
রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, জ্বরের কারণ খুঁজতে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভাইরাস প্যানেলে নমুনা পরীক্ষা করা হবে। পাশাপাশি, উপসর্গের নিরিখে কী ধরনের চিকিৎসা করতে হবে সেই সংক্রান্ত প্রোটোকল বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করছে। দ্রুত তা জেলাস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ভাইরাল প্যানেলে পরীক্ষা খরচসাপেক্ষ। তাই কোভিড, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, স্ক্রাব টাইফাস ধরা না পড়লে ভাইরাস প্যানেল করতে বলা হয়েছে। পিএম কেয়ার্সে পাওয়া ভেন্টিলেটরকে পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর, হাই ফ্লো ন্যাজাল অক্সিজেন মাস্কে রূপান্তরিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বাড়তি HFNO দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: Murshidabad: অজানা জ্বরে আক্রান্ত ১৫০, মেডিক্যাল কলেজে মেঝেতেও শুয়ে শিশুরা!
আরও পড়ুন: Jalpaiguri: জাপানি এনকেফালাইটিসের সংক্রমণ নয়, অজানা জ্বর নিয়ে মুখ খুললেন জনস্বাস্থ্য আধিকারিক