উত্তর দিনাজপুর: TV9-এর খবরে সিলমোহর। বিজেপি (BJP) ছাড়লেন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে দল ছাড়লেন তিনি। সম্প্রতি দলে থেকেও বেসুর বাজতে শুরু করেছিলেন এই বিধায়ক। তাঁকে শোকজও করেছিল পদ্ম শিবির। এরপর শুক্রবার শেষে দল ছাড়েন বিজেপি বিধায়ক।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে রায়গঞ্জের সাংসদ প্রাক্তন মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীকে ‘মীরজাফর’ বলে কটাক্ষ করে অভিযোগ করেন, সাংসদ হওয়ার দেবশ্রী এলাকা থেকেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছেন। এমনকী দেবশ্রী তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন বলেও অভিযোগ করেন। বিজেপি বিধায়কের কথায়, “এরপরের লোকসভা নির্বাচনে দেবশ্রী বিজেপির টিকিট পেলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে।” এরপরেই কৃষ্ণ কল্যাণী স্পষ্ট করেন তিনি দল ছাড়ছেন। তবে তিনি কোনও অন্য দলে যোগ দেবেন কি না তা স্পষ্ট করেননি কৃষ্ণ।
কিছুদিন আগে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বিধায়ককে শোকজ নোটিস দেওয়া হয়েছিল। সেই নোটিসে উল্লেখ করা হয়, ‘আপনার কিছু বিতর্কিত মন্তব্য মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে এবং ভারতীয় জনতা পার্টির সম্মানে আঘাত করেছে। পার্টির সংবিধানে দলের জন প্রতিনিধি এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কার্যকর্তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রুপ দলবিরোধী কাজ। আপনি রায়গঞ্জের মাননীয়া সাংসদ এবং মাননীয় রাজ্য সভাপতির বিরুদ্ধে বার বার প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন। আপনাকে সতর্ক করা হচ্ছে, এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকুন। এমন কেন করলেন তিন দিনের মধ্যে জানান।’
সম্প্রতি বিজেপির উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকারের সঙ্গে রায়গঞ্জের দলীয় বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীর কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। রায়গঞ্জের বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান, জেলা কমিটির কোনও দলীয় কর্মসূচিতে আর তিনি থাকবেন না।
কৃষ্ণ অভিযোগ তোলেন, জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকার ষড়যন্ত্র করছে তাঁর বিরুদ্ধে। বার বার দলীয় রাজ্য নেতৃত্বকে এই বিষয়ে জানানোর পরও কোনও লাভ হয়নি তাঁর। উল্টে বাসুদেব সরকার এখনও তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন বলে দাবি করেন কৃষ্ণ। একই সঙ্গে রায়গঞ্জের বিজেপি সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীর বিরুদ্ধেও সরব হন তিনি। তাঁর দাবি, রায়গঞ্জের মানুষ তাঁদের সাংসদকে এলাকাতেই পান না।
রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী তাঁকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন বলেও অভিযোগ করেন কৃষ্ণ কল্যাণী। কৃষ্ণ বলেন, “উনি তো রায়গঞ্জ থেকে বিধানসভায় নির্বাচনে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। উনি নাকি মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়েও ছিলেন। এখন শুনছি উনি নাকি রাজ্য সভাপতি হবেন। উনি রাজ্য সভাপতি হলে ১০ জন বিধায়ক-ও বিজেপিতে থাকবেন না।” এই নিয়ে তুমুল শোরগোল শুরু হয় জেলা বিজেপির অন্দরে।
পাল্টা দেবশ্রী চৌধুরীও বলেন, “কৃষ্ণের মানসিক সমস্যা হয়েছে। আমি ওর ব্যাপারে কিছু বলব না। আমি সংগঠন থেকে উঠে এসেছি।” তবে বিষয়টি যে দল মোটে হালকা ভাবে নিচ্ছে না তা দিলীপ ঘোষ আগেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। বিজেপি নির্ধারিত নিয়ম-অনুশাসনে চলা দল। নতুনরা এসে তা অনেক ক্ষেত্রেই বুঝে উঠতে না পারায় এ ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে মন্তব্য করেছিলেন দিলীপ।
তবে এই প্রথম নয়, বাবুল সুপ্রিয় দলত্যাগের পর কৃষ্ণ কল্যাণী বলেন, “বাবুল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা তাঁর ব্যক্তিগত। তবে একজন লোক তো এমনি এমনি দল ছাড়েন না। দলে যথাযথ সম্মান না পেলে দলত্যাগ তো করবেনই। বাবুলও তাই করেছেন। তিনি যোগ্য সম্মান পাননি। দলে বারবার অসম্মানিত হয়েছেন। তাই দল ছেড়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমি দলের কাছে আমার মতামত জানিয়েছি। দল ঠিক করবে যে জেলা সংগঠনে নজর দেবে না আমার কথায় অধিক গুরুত্ব দেবে। আমি এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। দলের উচ্চ নেতৃত্বের উপর তা নির্ভর করে। দলে কাজ করতে কেবল আমার নয়, অনেকেরই কষ্ট হচ্ছে। তাই সিদ্ধান্তটা আপাতত দলের উপর ছেড়েছি। সেই ভিত্তিতেই আমি চূড়ান্ত পদক্ষেপ করব।” শুক্রবার অবশেষে চূড়ান্ত পদক্ষেপ করেন বিজেপি বিধায়ক।
আরও পড়ুন: Adir Chowdhury: ‘দিদির মুখে গ্যাস ভরছেন ঝুলন দাদু’, পিকে-কে তীব্র কটাক্ষ অধীরের
আরও পড়ুন: North Bengal: অজানা জ্বরে জবুথবু উত্তরবঙ্গ, কোন জেলায় কত আক্রান্ত, জানাল স্বাস্থ্য দফতর