Unknown Fever: কখনও হার্ট অ্যাটাক, কখনও হাই সুগার, অজানা জ্বরে নাবালিকার মৃত্যুতে বিভ্রান্ত পরিবার!
Child Death: হাসপাতাল সূত্রে খবর, রিনা সেন নামের ওই নাবালিকা শুক্রবার তীব্র শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।
উত্তর দিনাজপুর: ক্রমেই বিপদ বাড়াচ্ছে অজানা জ্বর (unknown Fever)। শ্বাসকষ্ট ও জ্বরের উপসর্গ নিয়ে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেই শনিবার সকালে মৃত্যু হয় এক শিশু কন্যার। হেমতাবাদের ইসলামপুরের বাসিন্দা রিনা সেন নামে ওই নাবালিকার মৃত্যু হল তা স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না চিকিত্সকেরা। হাসপাতালর কর্তৃপক্ষের অবশ্য যুক্তি, ওই শিশুটি কোমর্বিড ছিল। সেখান থেকেই মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু মাত্র ১০ বছর বয়সী শিশু কোমর্বিড? প্রশ্ন তুলছে সংশ্লিষ্ট মহল।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, রিনা সেন নামের ওই নাবালিকা শুক্রবার তীব্র শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর আগে মেডিক্যাল কলেজে একাধিক শিশু আক্রান্ত হলেও জেলায় প্রথম জ্বরে প্রথম মৃত্যু ঘটল বলেই জানাচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। যদিও, প্রশাসনের তরফ থেকে এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
মৃতার পরিজনদের অভিযোগ, চিকিত্সকেরা মৃত্যুর কোনও সঠিক কারণ দর্শাতে পারছেন না। কখনও বলছেন, রোগীর হাই সুগার ছিল, কখনও বলছেন হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যু হয়েছে। কোনও একটি কারণ দেখাতে পারছেন না তাঁরা। কেন এই পিঠ বাঁচানো মনোভাব, অভিযোগ পরিবারের।
মৃতার এক পরিজনের কথায়, “আমরা মেয়েটাকে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি করি। শনিবার সকালে ওকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর আর বেঁচে ফিরল না মেয়েটা। ডাক্তার নানাসময়ে নানা কথা বলছে। কখনও বলছে হাই সুগার, কখনও বলছে হার্ট অ্যাটাক! এতটুকু বাচ্চার এমন হওয়া সম্ভব নাকি! আমরা সঠিক কারণ টা জানতে চাই।”
অজানা জ্বরের সংক্রমণে ইতিমধ্যেই রাজ্য মৃত্যু হয়েছিল ৫ জনের। শনিবার সেই সংখ্যাটা বেড়ে হল ৬। গোটা রাজ্যে ইতিমধ্যেই জ্বরে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। যদিও বৃহস্পতিবার বিকেলে পিজিতে বৈঠকের পর খোদ রাজ্যের মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, সরকার খতিয়ে দেখে এটা বুঝেছে কোন অজানা জ্বর নয়। বরং এটি মরসুমি জ্বর। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানান, করোনার কারণে শিশু চিকিত্সা পরিকাঠামো সম্প্রতি অনেকটাই সম্প্রসারিত হওয়ায় সব জ্বরের শিশুই পর্যাপ্ত পরিষেবা পাচ্ছে।
এদিকে, রাজ্য জুড়ে একের পর এক শয্যা সঙ্কটের ছবি সামনে এসেছে। মুর্শিদাবাদ, শিলিগুড়ি-সহ একাধিক এলাকার হাসপাতালে দেখা গিয়েছে জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের জন্য বেড নেই। কখনও হাসপাতালের মেঝেতে, কখনও বাথরুমের সামনে, কখনও করিডরে শুয়ে রয়েছে শিশুরা। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে এত নিশ্চিন্ত প্রশাসন উঠছে প্রশ্ন। রাজ্যে শিশুদের আক্রান্ত হওয়া নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকে চিঠি লিখেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা।
রাজ্য জুড়ে অজানা জ্বরের এই দাপটকে ‘মরসুমি জ্বর’ বলেই ব্যাখ্যা করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। আশ্বাস দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জ্বরের প্রাদুর্ভাব নিয়ে অবশেষে মুখ খুলেছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “বছরের এ সময় প্রতিবারই শিশুদের মধ্যে ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়। এ বছর সংখ্যাটা বেশি। তার মানে এই নয় যে কিছুই ঘটেনি। রোগ যখন হচ্ছে। শিশুদের আইসিইউয়ে ভর্তি যখন করতে হচ্ছে তখন কিছু একটা কারণও নিশ্চিত রয়েছে।” পাশাপাশি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর কী কী পদক্ষেপ করতে চলেছে তাও স্পষ্ট করেন স্বাস্থ্য় অধিকর্তা।
রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, জ্বরের কারণ খুঁজতে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভাইরাস প্যানেলে নমুনা পরীক্ষা করা হবে। পাশাপাশি, উপসর্গের নিরিখে কী ধরনের চিকিৎসা করতে হবে সেই সংক্রান্ত প্রোটোকল বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করছে। দ্রুত তা জেলাস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ভাইরাল প্যানেলে পরীক্ষা খরচসাপেক্ষ। তাই কোভিড, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, স্ক্রাব টাইফাস ধরা না পড়লে ভাইরাস প্যানেল করতে বলা হয়েছে। পিএম কেয়ার্সে পাওয়া ভেন্টিলেটরকে পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর, হাই ফ্লো ন্যাজাল অক্সিজেন মাস্কে রূপান্তরিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বাড়তি HFNO দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: Unknown Fever: বড়দের থেকেই RSV ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা, দাবি জনস্বাস্থ্য আধিকারিকের