উপাচার্যের ‘রুষ্মা’! ছাত্রদের ‘মাওবাদী’ তকমা থেকে সংবাদমাধ্যমকে তোপ, ফাঁস একাধিক অডিয়ো, চর্চায় বিশ্বভারতী

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, গত ১৫ জুন কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে একটি রিভিউ মিটিং ডাকেন উপাচার্য। সেই অনলাইন বৈঠকেই কোভিড নিয়ে আলোচনার পরিবর্তে একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করেন বিদ্যুৎবাবু বলে অভিযোগ।

উপাচার্যের 'রুষ্মা'! ছাত্রদের 'মাওবাদী' তকমা থেকে সংবাদমাধ্যমকে তোপ, ফাঁস একাধিক অডিয়ো, চর্চায় বিশ্বভারতী
ফাইল ফটো
Follow Us:
| Updated on: Jun 18, 2021 | 1:28 AM

বীরভূম: বিশ্বভারতী এখন ‘বিতর্ক-ভারতী’। একের পর এক বিতর্কে বার বার শিরোনামে উঠে আসছে গুরুদেবের শিক্ষাঙ্গন। প্রতিবার এই বিতর্কের মূলে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। এ বারেও, অনলাইন বৈঠকে ফাঁস হওয়া একাধিক অডিয়ো ক্লিপে বিতর্কিত মন্তব্য শোনা গেল উপাচার্যের গলায়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, গত ১৫ জুন কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে একটি রিভিউ মিটিং ডাকেন উপাচার্য। অভিযোগ, সেই অনলাইন বৈঠকেই কোভিড নিয়ে আলোচনার পরিবর্তে একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করেন বিদ্যুৎবাবু।

প্রসঙ্গ: পড়ুয়াদের ‘মাওবাদী’ তকমা

বিশ্ববিদ্য়ালয় সূত্রে খবর, অর্থনীতির অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যকে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান কয়েকজন পড়ুয়া। ফলস্বরূপ, অভিযুক্ত ফাল্গুনী পান ও সোমনাথ সৌকে তিনমাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। কিন্তু তিনমাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের ক্লাস করতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এমনকী, বিশ্ববিদ্য়ালয়ের তরফে ‘ভুয়ো মেইল’ করে সাসপেনশন (suspension) আরও তিনমাস বাড়ানো হয় বলে অভিযোগ করেন পড়ুয়ারা। সেইসময় থেকেই অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। নির্বাচন আবহে, পড়ুয়াদের অবস্থান বিক্ষোভ চলাকালীন, বোলপুরের বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করে জানান, উপাচার্যের পদত্যাগের জন্য তিনি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

VISVA BHARATI CONTROVERSY

নিজস্ব চিত্র

গত ১৫ জুনের বৈঠকে, বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে পড়ুয়াদের এই সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন উপাচার্য এমনটাই অভিযোগ। ফাঁস হওয়া সেই অডিয়ো ক্লিপে শোনা যাচ্ছে, বিদ্যুৎবাবু বলছেন, “আমাদের অনির্বাণ ডাকছেন বুদ্ধিজীবীদের বৈঠকে। আমাদের মাস্টারমশাইরাও গিয়ে হাজির হচ্ছেন। তিনটে ছাত্র মাওবাদী, সেখানে অনির্বাণ বৈঠক করে বলছেন, ‘আমরা উপাচার্যকে বহিষ্কার করব’। কেউ কোনও প্রতিবাদ করল না! উপাচার্য পাঞ্চিং ব্যাগ! মারতে থাক, যে যেভাবে খুশি মারতে থাক। আমরা চুপচাপ থাকব। ধান্দা হলে আমি…।”

যদিও, বিশ্বভারতীতে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর উপাচার্য হিসেবে নিয়োগে এবং বোলপুরে বিজেপির তরফে অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে প্রার্থী করার পেছনে বিজেপির কেন্দ্রীয় অনুশাসনের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল, তবে পরবর্তীকালে সেই ‘আঁতাত’ যে স্থায়ী হয়নি তা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে বলে অনুমান বিশ্লেষকদের। অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের পরাজয়ই কারণ এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। তবে, উপাচার্যের মুখে পড়ুয়াদের এভাবে সরাসরি ‘মাওবাদী’ তকমা দেওয়া মেনে নিতে পারেননি কেউ। উপাচার্যের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার কথা চিন্তা করছে বিশ্ববিদ্য়ালয়ের পড়ুয়া সংগঠন।

প্রসঙ্গ: অধ্যাপক-উপাচার্য তরজা

সম্প্রতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের পরিবারকে অপমান করা ও পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক মানস মাইতিকে শো-কজ করায় বিতর্কে জড়িয়েছিলেন উপাচার্য। ফের, ভূগোলের বিভাগীয় প্রধান প্রেমাংশু চক্রবর্তীর সঙ্গে একটি চিঠিতে সই করা নিয়ে বিতর্কে জড়ান বিদ্যুৎবাবু। ১৫জুনের সেই অনলাইন বৈঠকেই প্রকাশ্যে আসে সেই বিতর্কের অডিয়ো ক্লিপ। অডিয়োতে শোনা যায়, প্রেমাংশুবাবুকে সম্বোধন করে উপাচার্য বলছেন, “তুমি আমার পাঠানো চিঠিতে সই করোনি। আমি তোমার কাজ কেন করে দেব। আমিও তোমায় অনুমোদনপত্র দেব না।”

অভিযোগ, উপাচার্যকে একাধিকবার আবেদন করা সত্ত্বেও ওই অধ্যাপকের অনুরোধ রাখেননি তিনি। অধ্যাপক প্রেমাংশু চক্রবর্তীর অভিযোগ, কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে একটি চিঠি আসে। সেখানে তাঁকে সই করতে বলা হয়। কিন্তু কেন সেই সংগ্রহ করা হচ্ছিল তা নিয়ে বিশদে কিছু জানায়নি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। অধ্যাপক চক্রবর্তী সাফ জানান, তিনি না জেনে চিঠিতে সই করবেন না। এরপর, একটি ব্যক্তিগত কাজের অনুমোদনের জন্য উপাচার্যের কাছে চিঠি দেন অধ্যাপক। কিন্তু, সেই চিঠির উত্তর মেলেনি।

অভিযোগ, উপাচার্য অনুমোদন দেননি। এমনকী, অনলাইন বৈঠকেও প্রসঙ্গটির উত্থাপন করে অধ্যাপক চক্রবর্তীকে বিদ্যুৎবাবু সরাসরি আক্রমণ করেন বলে অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য অধ্যাপকদের অভিযোগ, বিশ্বভারতীর বর্তমান অবস্থা নিয়ে আচার্য নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দেন উপাচার্য। সেই চিঠিতে বিশ্বভারতীর প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা তুলে ধরা হয় বলে অভিযোগ। এমনকী, অধ্যাপকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনও আলোচনাই করেননি উপাচার্য এমনটাই অভিযোগ করা হয়। সেই চিঠিতে ২০৬ জন অধ্য়াপকের স্বাক্ষর রয়েছে এমন দাবী করে আচার্যকে চিঠি দেন উপাচার্য। অভিযোগ, ওই চিঠিতে জোর করে অধ্যাপকদের সই করানো হয়েছে আর যাঁরা সই করেননি তাঁদের প্রমোশন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে এমনকী আটকে দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গ: সংবাদমাধ্য়ম

১৫জুনের কোভিড রিভিউ বৈঠকেই আরও একটি অডিয়ো ক্লিপ ফাঁস হয়, যেখানে শোনা যাচ্ছে সরাসরি সংবাদমাধ্যমকে নিশানা করেছেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। একটি জাতীয় সংবাদপত্রের নাম করে উপাচার্য বলছেন, “ওরা একটু বামপন্থী ঘেঁষা। কোভিড নিয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এত ভাল কাজ হচ্ছে তা নিয়ে লিখবে না নিউজ। কারণ, ওতে হিট নেই। হিট দেবে না, তাই লিখবে না। আমার সমস্ত কথা রেকর্ড করে ফাঁস করা হবে, সেগুলো নিয়ে নানা লেখা ছাপা হবে…এতদূর এদের দৌড় বেড়েছে যে ন্যাশনালেও চলে যাচ্ছে…কিছুতেই ওদের আটকানো যাচ্ছে না…ওরা তো একটু বামপন্থার…ওদের তো এসব ভাল লাগবে না।” উল্লেখ্য, ওই সংবাদপত্রে উপাচার্য ও অধ্যাপকের সাম্প্রতিক তরজাটি নথিভুক্ত হয়। তারপরেই সংবাদমাধ্যমকে তোপ দাগেন উপাচার্য।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুন ১৮০ জন অধ্যাপকের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন উপাচার্য। সেই বৈঠকেই এই অডিয়ো ক্লিপ গুলি ফাঁস হয়। তবে অডিয়ো ক্লিপগুলির সত্যতা যাচাই করেনি টিভি নাইন বাংলা। এই প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন: সপাটে চড় অভিষেককে! মৃত চণ্ডীপুর-কাণ্ডের সেই অভিযুক্ত যুবক, ‘পরিকল্পিত খুন’, দাবি বিজেপির