ঢাকা: আত্মসমালোচনার সুর শোনা গেল বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খানের গলায়। তিনি বলেন, “আমরা আইন ভঙ্গকারী জাতিতে পরিণত হয়ে গিয়েছি। বাংলাদেশে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার নিষেধ করা হয়েছিল, কিন্তু অনেকেই সেই নিয়ম মানছেন না। হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করা হচ্ছে। কীভাবে নিষেধের পরও এই কাজ হচ্ছে তা দেখা প্রয়োজন। প্রতিনিয়তই আমরা আইন ভঙ্গ করছি। মোবাইলে কথা বলার সময় রাস্তা পারাপার হওয়া বিপজ্জনক। কিন্তু সেই নিয়মের পরোয়া না করে আমরা সেটাই করছি। জেব্রা ক্রসিং মেনে রাস্তা পারাপার হচ্ছে না। আদতে আমরা কোনও নিয়মই মেনে চলছি না।”
শনিবার, ঢাকাতে প্রেস ক্লাবে নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান। সেখানেই ট্রাফিক আইন না মানা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। সেখানে তিনি আরও বলেন, “আমরা যদি ট্রাফিক আইন ভাঙার প্রবণতা কমাতে না পারি তবে রাস্তাঘাটে নিরাপত্তা কখনই আশানুরূপ ফলাফল দেবে না। সড়কে দুর্ঘটনার কারণে অনেক প্রাণ হারান। সেই ঝুঁকি কম করতে আমাদের আইন মেনে চলতে হবে।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই অকারণে যেন একজন মানুষেরও মৃত্যু না হয়। তারপরও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় ক্যান্সার বা কিডনি সমস্যা কারণে যতজন মারা যান, তার থেকে বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান জানিয়েছেন, এক দু’বছরে অবস্থার উন্নতি সম্ভব নয়। এই সড়ক নিরাপত্তাকে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি হিসেবে ভাগ করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এই অনুষ্ঠানে নিসচার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “দীর্ঘ ২৮ বছর আগে এই আন্দোলনের সময়ে অনেকেই আমাকে পাগল বলেছিল। লোকে বলত দুর্ঘটনায় নিজের স্ত্রীকে হারিয়ে হয়ত আমি পাগল হয়ে গিয়েছি। সেখান থেকে এই আন্দোলনকে এই জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে।” ইলিয়াস আরও জানিয়েছেন, এই সংগঠন করোনার সময় যথা সম্ভব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অনেকেই কেক কেটে সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করলেও সেই টাকায় নিসচা পথ দুর্ঘটনায় আহতদের দিকরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে সড়ক ও পরিবহন সচিব নজরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার বহু কারণ আছে। সেই কারণগুলির মধ্যে যেসব কারণ প্রতিরোধযোগ্য, সেই কারণগুলোর সমাধান নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ক্রমাগত চেষ্টার কমতি নেই। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে জনগণকে আরও বেশি মাত্রায় সচেতন করতে হবে। জনগণ সচেতন না হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা কঠিন। অনুষ্ঠানে বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান হামিদও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫০টি পরিবারের মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়।
আরও পড়ুন Mamata-Adani-Mahua: ভরা বৈঠকে ধমক কেন? আদানির বিরুদ্ধে সরব হয়েই কি মমতার স্নেহ-বৃত্তের বাইরে মহুয়া?