AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Explained: দুর্নীতির পাঁকে ডুবে চিনের অস্ত্র উৎপাদন, লোকসানে জেরবার শি জিনপিং

চিনা সেনার ভাঁড়ারে করুণ দশা। ধুলো জমছে মিসাইল-যুদ্ধবিমানে। কিনতে চাইছে না কেউ। ব্যাপক দুর্নীতিতে অস্ত্রের মান তলানিতে। চিনা সরকার যতই তাদের আর্থিক উন্নতির ঢাক পেটাক না কেন, তার ভিতরটা যে কতটা ফাঁপা, সেটাই এবার প্রকাশ্যে চলে এল এক রিপোর্টে। একের পর এক চিনা অস্ত্র নির্মাণকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করছে বহুদিনের বিশ্বস্ত ক্রেতা দেশগুলি। অথচ, রুশ-ইউক্রেন বা ইজরায়েল-গাজা যুদ্ধের পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়েই অস্ত্রের এখন রমরমা চাহিদা। আফ্রিকার একাধিক দেশের ভিতরের পরিস্থিতি-ও এখন টালমাটাল। এই অবস্থায় সস্তায় অস্ত্র কিনতে চিন অনেকের-ই প্রথম পছন্দ।

Explained: দুর্নীতির পাঁকে ডুবে চিনের অস্ত্র উৎপাদন, লোকসানে জেরবার শি জিনপিং
| Edited By: | Updated on: Dec 06, 2025 | 7:34 PM
Share

লাভের গুড় খেয়ে যাচ্ছে দুর্নীতির পিঁপড়ে। বেইমানি, ঠগদের কবলে চিনের অস্ত্র উৎপাদন শিল্প। অপারেশন সিঁদুর-এ ফেল করার পর এবার তলানিতে চিনা অস্ত্রের বিক্রি। দুর্নীতি ও লালফিতের ফাঁসে মার খাচ্ছে উৎপাদন। দেখানো হচ্ছে অস্ত্রের বিরাট মারণ ক্ষমতা, কিন্তু বাস্তবে পরীক্ষা করার সময় ফেল বহু নামিদামি অস্ত্রই। ব্যাপক লোকসানে বেকায়দায় শি জিনপিংয়ের সরকার।

‘অপারেশন সিঁদুর’ চিনা অস্ত্রের বাস্তব ক্ষমতা কতটুকু – সেটা দেখিয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। ফ্রান্সের রাফালের কাছে মাথা নত করতে হয়েছিল চিনা জে-৩৫ ফাইটার জেট-কে। ফেল করেছিল চিনা রেডার, ডিফেন্স সিস্টেম-ও। পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি আগলে রাখা চিনা অস্ত্রের পাঁচিল ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেয় ভারত। আর এবার চিনা প্রতিরক্ষার অন্দরের ফাঁপা ছবিটা-ও সামনে এসে গেল। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (সিপরি) নয়া রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, চিনের বহু নামীদামি অস্ত্র নির্মাতা সংস্থার ভিতরে করুণ দশা। ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি ডলারের। অথচ, সরকার বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, কেউ এই নিয়ে রা কাড়ছেন না প্রকাশ্যে। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে জাল রিপোর্ট। কিন্তু তাতেও আর চিনা অস্ত্র কিনতে রাজি হচ্ছে না কেউ।

china army

চিনা সরকার যতই তাদের আর্থিক উন্নতির ঢাক পেটাক না কেন, তার ভিতরটা যে কতটা ফাঁপা, সেটাই এবার প্রকাশ্যে চলে এল এই রিপোর্টে। একের পর এক চিনা অস্ত্র নির্মাণকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করছে বহুদিনের বিশ্বস্ত ক্রেতা দেশগুলি। অথচ, রুশ-ইউক্রেন বা ইজরায়েল-গাজা যুদ্ধের পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়েই অস্ত্রের এখন রমরমা চাহিদা। আফ্রিকার একাধিক দেশের ভিতরের পরিস্থিতি-ও এখন টালমাটাল। এই অবস্থায় সস্তায় অস্ত্র কিনতে চিন অনেকের-ই প্রথম পছন্দ। কিন্তু সিপরি-র রিপোর্ট বলছে, সেই অস্ত্র উৎপাদন শিল্প-ই এখন চিনা প্রেসিডেন্টের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, দুর্নীতি। সেই সঙ্গে সেনাকর্তাদের বেলাগাম লোভ। ফলে একের পর এক পরীক্ষায় মুখ থুবড়ে পড়ছে চিনা মিসাইল। ফলাফল দেখে আর সেই মিসাইল কিনতে চাইছে না একাধিক দেশ। বাতিল করে দিচ্ছে আগাম স্বাক্ষর করে রাখা চুক্তি।

SIPRI

রিপোর্টে সিপরি-র মিলিটারি এক্সপেনডিচার অ্যান্ড আর্মস প্রোডাকশন প্রোগ্রামের ডিরেক্টর নান তিয়ানের বক্তব্য,

একাধিক দেশ চিনের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি বাতিল করছে।

  • ২০২৪ থেকে চুক্তি বাতিলের হিড়িক বেড়েছে।
  • চিনা অস্ত্রে ভরসা রাখতে পারছে না অনেক দেশ
  • কারণ, চিনা অস্ত্র ব্যবসায় দুর্নীতির থাবা
  • বড় অঙ্কের চুক্তি বাতিলে বেকায়দায় চিনা অর্থনীতি

এই দশা অবশ্য একদিনে হয়নি। চিনা অস্ত্র উৎপাদন সংস্থাগুলির অন্দরে দুর্নীতির ঘুঘু চড়ছে ২০১২ থেকেই। শি জিনপিং ও পিপলস লিবারেশন আর্মির মূল লক্ষ্যই সেই দুর্নীতির বাসা উপড়ে ফেলা। কিন্তু সেই ডেডলাইন বারবার ফেল হচ্ছে। ২০২৩-এ সেই দুর্নীতি সেনার একেবারে উপরমহলেও মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে পড়ে। জোচ্চুরি ঢুকে পড়ে চিনা মিসাইল উৎপাদন শিল্পের অন্দরমহলের। আর্থিক কেলেঙ্কারির শিকড় সেনার এতটাই ভিতরে ঢুকে পড়ে যে চিনের শাসক কমিউনিস্ট পার্টি ৮ জন শীর্ষ সেনাকর্তাকে ‘বহিষ্কার’ পর্যন্ত করে। অক্টোবর মাসে ‘হে উইডং’ নামে দেশের সেনার নম্বর টু পদে থাকা এক জেনারেলকে-ও সরিয়ে দেওয়া হয়। এটা কোনও হেলাফেলার পদ নয়। শি-এর সরাসরি নেতৃত্বে সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের জেনারেল ছিলেন ‘হে উইডং’। সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশন চিনের সর্বোচ্চ মিলিটারি কমান্ড অর্গানাইজেশন। এশিয়া ও পশ্চিমী কূটনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা এখনও সেনার অন্দরে দুর্নীতির সামগ্রিক ছবি ও তার কী পরিণাম হতে পারে, বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই দুর্নীতি সেনার কতটা অন্দরমহল পর্যন্ত থাবা বসিয়েছে সেটাও জানার চেষ্টা চলছে।

CHINA ARMY

অস্ত্র বিক্রি-তে গতবছর থেকেই চিনের গ্রাফ ভয়াবহ নিম্নমুখী। সামগ্রিক অস্ত্র রফতানি কমেছে প্রায় ১০ শতাংশেরও বেশি। সিপরি-র রিপোর্টে ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে, যেখানে জাপান, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, ভারত, তুরস্কের অস্ত্র রফতানির হার বেড়েছে, সেখানে চিনা অস্ত্র কেনার প্রবণতা কমেছে অনেকটাই। বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি অস্ত্র প্রস্তুতকারক সংস্থার বিক্রি প্রায় ৬ শতাংশ বেড়ে গতবছর ৬৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেকর্ড ছুঁয়েছে। সেখানে চিনা আর্মস বিক্রি কমে গেছে ১০%। অথচ, আমেরিকার সঙ্গে টানটান উত্তেজনার আবহে চিন পুরোদমে অস্ত্র উৎপাদন চালিয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তব পরিসংখ্যান বলছে, সেই অস্ত্র কিনতে উৎসাহ দেখাচ্ছে না এশিয়ার-ই একাধিক দেশ। দক্ষিণ চিন সাগরে দাদাগিরির স্বপ্নে বিভোর শি এখন তাইওয়ান দখলের-ও কাউন্টডাউন শুরু করে দিয়েছেন। অথচ, ভাঁড়ারে তৈরি হয়ে পড়ে থেকে ধুলো জমছে কোটি কোটি ডলারের চিনা অস্ত্রে। SIPRI সূত্রের পরিসংখ্যান বলছে,

SIPRI GRAPH

  • চিনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র নির্মাতা সংস্থা AVIC লোকসানে
  • লোকসান হয়েছে ল্যান্ড সিস্টেম প্রোডিউসার Norinco-রও।
  • এয়ারোস্পেস ও মিসাইল নির্মাতা সংস্থা CASC-ও লোকসানে
  • এই সবকটি সংস্থাই চিনা সরকারের অধিকৃত
  • সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে দেখেছে Norinco
  • ৩১% লোকসান হয়েছে মাত্র এক বছরেই
  • ক্ষতির পরিমাণ ১৪০০ কোটি ডলার

দুর্নীতির অভিযোগে Norinco ও CASC-০র শীর্ষ পদাধিকারীদের সরিয়ে দিয়েছে কমিউনিস্ট সরকার। সংস্থার প্রাক্তন কর্তারা আবার পাল্টা সরকারের রিভিউ রিপোর্ট ও ছাত্রপত্র দিতে দেরি করার দিকে আঙুল তুলেছেন। তবে এই অভিযোগের ভিত্তিতে চিনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রক কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। প্রতিক্রিয়া জানায়নি চিনা তিন সংস্থাও। সিপরি-র আরেক শীর্ষ গবেষক শাও লিয়াং দাবি করেছেন, চিনা সেনার ব্যালিস্টিক, হাইপারসনিক ও ক্রুজ মিসাইলের দায়িত্বে থাকা ‘রকেট ফোর্স’ ক্রমশই ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। কারণ, খাতায় কলমে অ্যাডভান্সড সিস্টেম হাতে পাওয়ার কথা থাকলেও ক্রমশই তাদের ডেলিভারি ডেট পিছোচ্ছে। ২০২৭-এ পিপলস লিবারেশন আর্মি বা লালফৌজের ১০০ বছর পূর্তি হচ্ছে। সেই উপলক্ষে বেজিংয়ের রাজপথে প্যারেড করবে সেনা। দেখানো হবে চিনা সেনার ভাঁড়ারে থাকা অত্যাধুনিক সব সমরাস্ত্র। সেই ঐতিহাসিক প্যারেডের উপরেও ঘনিয়েছে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। ১৯২৭-এ গঠিত মাও সে তুংয়ের লালফৌজ এই দুর্নীতির ঘুঘুর বাসা ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারে কি না, সেদিকেই এখন তাকিয়ে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।