ডিজিটাল দুনিয়া। প্রযুক্তির হাত ধরে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে বিশ্ব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার বাড়ছে। তার সঙ্গে তাল রেখে এবার স্থায়ী অ্যাকাউন্ট নম্বরে (PAN) কিউআর কোড যোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পর নানা প্রশ্ন উঠছে। প্যান কার্ডে কিউআর কোড যোগ করে কী সুবিধা পাওয়া যাবে? এখন যাঁদের স্থায়ী অ্য়াকাউন্ট নম্বর রয়েছে, তাঁদের কি নতুন করে প্যান কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে? কিউআর কোড যোগ হলে প্যান কার্ড কি আর বয়ে বেড়াতে হবে না?
প্যান কার্ড কী?
দেশের আয়করদাতাদের চিহ্নিত করতে আয়কর আইন মেনে প্যান কার্ড ইস্যু করা হয়। ১৯৭২ সাল থেকে আয়কর আইন মেনে প্যান কার্ডের ব্যবহার হয় দেশে। এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র ৭৮ কোটি প্যান কার্ড জারি করেছে। তার মধ্যে ৯৮ শতাংশই ব্যক্তিগত। প্যান কার্ডে থাকে ১০ সংখ্যার নম্বর।
প্যান কার্ড কী কাজে লাগে?
আর্থিক লেনদেন-সহ একাধিক কাজে প্রয়োজন প্যান কার্ড। ট্যাক্স ফাইল করতে প্যান কার্ডের প্রয়োজন। পরিচয়পত্র হিসেবেও কাজে লাগে। কেউ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে চাইলে প্যান কার্ড প্রয়োজন। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে লাগে স্থায়ী এই অ্যাকাউন্ট নম্বর। ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদনেও প্রয়োজন হয়। ব্যাঙ্কে ৫০ হাজার টাকার বেশি জমা করতে গেলে আপনাকে প্যান কার্ডের নম্বর দিতে হবে।
প্যান ২.০ প্রকল্প-
৫২ বছরের পুরনো এই প্যান কার্ড ব্যবস্থাকে প্রযুক্তির সঙ্গে তাল রেখে আধুনিকীকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা গত ২৫ নভেম্বর প্যান ২.০ প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নেয়। এই প্রকল্পের জন্য ১৪৩৫ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। এই প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তিনি প্যান ২.০ প্রকল্প ঘোষণা করার পরই এই নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হয়। কী এই প্যান ২.০ প্রকল্প? এতে কী সুবিধা পাওয়া যাবে?
প্যান ২.০ প্রকল্পে নতুন কার্ডের তথ্য স্ক্যান করার জন্য কিউআর কোড থাকবে। প্যান কার্ডে কিউআর কোড থাকায় আয়করদাতাদের আর্থিক লেনদেন অনেক সহজ ও স্বচ্ছ হবে। উন্নত ও দ্রুত পরিষেবা পাওয়া যাবে। প্যান কার্ডের ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে। ব্যক্তিগত তথ্য ও অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত থাকবে। আর্থিক জালিয়াতির ভয় কমবে। কেন্দ্র জানিয়েছে, নতুন কার্ডের ক্ষেত্রে প্যান কার্ড বয়ে বেড়াতে হবে না। পুরোটাই ডিজিটাল হবে। ডাউনলোড করে রাখা যাবে মোবাইলে।
বর্তমানে প্যান সংক্রান্ত পরিষেবার জন্য তিনটে পোর্টাল চালু রয়েছে। ই-ফিলিং পোর্টাল, UTIITSL পোর্টাল এবং Protean e-Gov পোর্টাল। ‘প্যান ২.০’ চালু হলে প্যান সংক্রান্ত সব কাজকর্ম করা যাবে একটিই পোর্টালে। এতদিন কোন পোর্টালে কোন পরিষেবা পাওয়া যায়, তা নিয়ে অনেকে ধন্দে পড়েন। কিন্তু, একটি পোর্টালে সব পরিষেবা চালু হলে গ্রাহকদের সমস্যায় পড়তে হবে না।
কী বলছেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব?
প্যান ২.০ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, “কমন বিজনেস আইডেন্টিফায়ার তৈরির জন্য শিল্পসংস্থার তরফে বারবার আবেদন করা হচ্ছিল। তারা আলাদা আলাদা নম্বরের বদলে একটি নম্বরের জন্য সওয়াল করছিল। নতুন এই প্রকল্পে প্যান কার্ড কমন বিজনেস আইডেন্টিফায়ার হিসেবে কাজ করবে। PAN, TAN (ট্যাক্স ডিডাকশন অ্যান্ড কালেকশন অ্যাকাউন্ট নম্বর) এবং TIN (ট্যাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) নতুন ব্যবস্থায় মিলিয়ে দেওয়া হবে।”
সাইবার সুরক্ষার জন্য প্যান ২.০ প্রকল্পে ‘প্যান ডেটা ভল্ট সিস্টেম’ থাকবে বলেও জানালেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী। তিনি বলেন, “নতুন ব্যবস্থার অন্যতম ফিচার হল প্যান ডেটা ভল্ট সিস্টেম। প্যানের সঙ্গে যুক্ত নানা তথ্য ব্যবহার করে ব্যাঙ্ক, বিমা কোম্পানিগুলি। আমরা নিজেদের প্যান কার্ডের সব তথ্য বিভিন্ন জায়গায় দিই। যারা এইসব তথ্য সংগ্রহ করে, তারা যাতে গ্রাহকের তথ্য সুরক্ষিত রাখে, সেজন্য নতুন প্রকল্পে ডেটা ভল্ট সিস্টেম থাকবে।”
এখন যাঁদের প্যান কার্ড রয়েছে, তাঁদের কি নতুন করে প্যান কার্ডের আবেদন করতে হবে?
বর্তমানে যাঁদের প্যান কার্ড রয়েছে, তাঁদের আর নতুন করে আবেদন করতে হবে না। প্যান নম্বরও বদলাতে হবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, কেউ যদি প্যান কার্ডে তথ্য আপডেট করতে চান, যেমন, মোবাইল নম্বর বদলানো, মেইল আইডি, ঠিকানা, সেক্ষেত্রে নতুন প্রকল্প শুরুর পর বিনামূল্যে করতে পারবেন। সেই প্রকল্প শুরু আগেও কেউ এসব পরিবর্তন করতে চাইলে পুরনো ব্যবস্থা অনুসারে তা পারবেন। নতুন ব্যবস্থা কবে থেকে শুরু হচ্ছে, তা অবশ্য আয়কর দফতর এখনও জানায়নি।
বর্তমান প্যান কার্ড হোল্ডাররা কি নতুন কার্ড পাবেন?
বর্তমানে যাঁদের প্যান কার্ড রয়েছে, তাঁরা প্যান কার্ডের সঙ্গে যুক্ত ইমেলে নতুন প্যান কার্ডের ইলেকট্রনিক্স সংস্করণ পাবেন। এর জন্য আলাদা করে আবেদন করতে হবে না। কোনও মূল্যও লাগবে না। তবে কেউ যদি ফিজিক্যাল কার্ড পেতে চান, তবে তাঁকে আবেদন করতে হবে। সেক্ষেত্রে দেশের যেকোনও প্রান্তে ওই কার্ড পৌঁছে যাবে। এর জন্য ৫০ টাকা দিতে হবে। আর দেশের বাইরে এই কার্ড পাওয়ার জন্য পোস্টাল চার্জ ও ১৫ টাকা দিতে হবে গ্রাহককে।
আয়কর দফতরের আধিকারিকরা বলছেন, প্যান কাডে কিউআর কোড একেবারে নতুন বিষয় নয়। ২০১৭ সালেই এই ব্যবস্থা শুরু করা হয়েছিল। নতুন ব্যবস্থায় ডায়নামিক কিউআর কোড থাকবে, যাতে সংশোধিত তথ্যও দেখা যাবে। কিউআর কোড থাকলে প্যান কার্ডের তথ্য, যেমন ছবি, সই, জন্ম তারিখ সহজে যাচাই করা যাবে।