দিনহাটায় কর্মী ‘খুনের’ প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ বিজেপির, বদলি এসপিও

গতকালের পর থেকেই থমথমে দিনহাটা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কার্যত বন্ধের ছবি গোটা দিনহাটা জুড়ে। ভাঙচুর চালানো হয় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে।

দিনহাটায় কর্মী ‘খুনের’ প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ বিজেপির, বদলি এসপিও
মৃত বিজেপি কর্মী অমিত সরকার
Follow Us:
| Updated on: Mar 26, 2021 | 12:27 AM

পশ্চিমবঙ্গ: দিনহাটায় বিজেপি (BJP) কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রতিবাদে পথে নামল গেরুয়া শিবির। জেলায় জেলায় চলল বিক্ষোভ। বড় বদল আনা হল কোচবিহার পুলিশেও। গত বুধবার দিনহাটায় বিজেপি নেতা অমিত সরকারের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।

কোচবিহার

গত বুধবারের পর থেকেই থমথমে দিনহাটা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কার্যত বন্ধের ছবি গোটা দিনহাটা জুড়ে। ভাঙচুর চালানো হয় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে। অন্যদিকে, বুধবার অনেক রাত পর্যন্ত অমিতের মৃতদেহ নিতে অস্বীকার করেন অমিতের পরিবার। বুধবার সকালে দিনহাটায় বিজেপির (BJP) মণ্ডল সভাপতির মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে যান নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। এরপরেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় দিনহাটা। গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন পুলিশ কর্মীরা।

আলিপুরদুয়ার

বৃহস্পতিবার সকালে আলিপুরদুয়ারে অমিত সরকারের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভে মিছিল করেন বিজেপি (BJP) কর্মীরা। বিজেপির জেলা যুব মোর্চার সভাপতি বিপ্লব দাস বলেন, ‘হেমতাবাদের বিধায়ককে তৃণমূলের লোকেরা যেভাবে মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছিল, ঠিক একই কায়দায় গতকাল দিনহাটায় আমাদের মণ্ডল সভাপতি অমিত সরকারকে মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমরা উপযুক্ত শাস্তি চাই।’ ভোটের আগে উত্তরবঙ্গে আরও এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

মুর্শিদাবাদ

দিনহাটায় বিজেপি (BJP) মণ্ডল সভাপতিকে খুনের অভিযোগে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল বিজেপির। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদ বহরমপুরে জেলা কার্যালয় থেকে মিছিল করে এসে ৩৪ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুশপুতুল পোড়ান বিজেপি কর্মীরা। অন্যদিকে, সুতি থানার মানিকপুর ও ধলার মোড় জাতীয় সড়কে দীর্ঘক্ষণ পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় গেরুয়া শিবির।

নদিয়া

নদিয়া জুড়েও বিজেপির (BJP) চেনা বিক্ষোভের ছবি। শান্তিপুর এবং টিটাগড়ে বিজেপির কর্মীদের খুন এবং খুনের চেষ্টার প্রতিবাদে শ্যামনগর ফিডার রোডে প্রতিবাদ মিছিল করলেন জগদ্দলের বিজেপির প্রার্থী অরিন্দম ভট্টাচার্য। অরিন্দম জানান, যেভাবে বিজেপির সক্রিয় কর্মীদের খুন এবং খুনের চেষ্টা করে তৃণমুল রাজ্য জুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে, তাতে বিজেপির ভোট বাড়বে। মানুষ সন্ত্রাস থেকে মুক্তি পেতে বিজেপিকেই ভোট দেবে।

পশ্চিম মেদিনীপুর

বিজেপির মণ্ডল সভাপতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে জেলাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা। এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh), মেদিনীপুর বিধানসভার বিজেপি প্রার্থী সমিত দাস, জেলা সভাপতি সৌমেন তিওয়ারি-সহ অন্যান্যরা।

বর্ধমান

অমিত সরকারকে খুন করা হয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে বর্ধমান জেলা বিজেপির পক্ষ থেকে কার্জনগেট চত্বরে মাণ্ডেলা পার্কের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করা হয়। এদিনের বিক্ষোভে, অমিত সরকারের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি গোটা ঘটনাটি পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ তদন্ত করার দাবি জানান বিজেপি কর্মীরা। জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল রায় এ দিন বলেন, ‘প্রশাসন নির্লজ্জভাবে শাসক দলের হয়ে কাজ করছে।’

প্রসঙ্গত, বিজেপি কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পেছনে বারবার তৃণমূলকেই দায়ী করেছে পদ্মশিবির। এমনকী, অমিত সরকারের মৃতদেহ আবার ময়নাতদন্ত করার দাবি জানিয়েছে বিজেপি। আর এবার ভোটের আবহে এই ঘটনায় কার্যত উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দিনহাটা। চক্রান্তের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ এনেছেন দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ। তিনি বলেন, “সিআইডি তদন্ত হওয়া উচিত। সিআইডি তদন্ত করে দেখুক, কারা এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।” উদয়ন সোশ্যাল মিডিয়াতেও একটি পোস্ট করে লিখেছেন, “প্রয়াত অমিত সরকারের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও সুইসাইডাল নোট দ্রুততার সঙ্গে প্রকাশ করে চক্রান্তকারীদের মুখোশ খুলতে হবে।”

এই পরিস্থিতিতে পুলিশ পর্যবেক্ষকের ঘটনাস্থলে যাওয়ার বিষয়টি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এই ঘটনায় রাজনৈতিক যোগ উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না বলেই সম্ভবত নজর দিচ্ছে কমিশন। বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় (Kailash Vijaybargiya) বলেন, ‘কে খুন করেছে তা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের তরফে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিজেপি সরকার এলে সমস্ত গুণ্ডা বদমায়েশদের জেলে ঢোকানো হবে। অবিলম্বে পুলিশ আধিকারিকদের সরানো দরকার।’

কৈলাসের এই মন্তব্যের পরেই নির্বাচনের আগে ফের পুলিশে বড়সড় বদল নজরে আসে। নির্বাচন কমিশন চিঠি দিয়ে মুখ্যসচিবকে জানায়, পাঁচটি পদে বদল হচ্ছে। এডিজি ওয়েস্ট জ়োন পদ থেকে বদলি হচ্ছে আইপিএস সঞ্জয় সিংয়ের। তাঁর জায়গায় আসছেন আইপিএস ডাঃ রাজেশ কুমার। ডিইও ঝাড়গ্রামেও রদবদল হচ্ছে। আয়েশা রানির জায়গায় আসছেন আইএস জয়েশি দাস। ডায়মন্ড হারবারেরও এসপি বদলাচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে। তাঁর জায়গায় আসছেন আইপিএস অরিজিৎ সিনহা। দিনহাটার ঘটনার পর বদল হচ্ছে কোচবিহারের এসপি পদেও। আইপিএসকে কান্নানের জায়গায় আসছেন আইপিএস দেবাশীষ ধর। দক্ষিণ কলকাতারও ডিসিপি বদলাচ্ছে। সুধীর নিলকণ্ঠর জায়গায় আসছেন আইপিএস আকাশ মাঘরিয়া।

আরও পড়ুন: ‘আমাকে মারতে বোমা বাঁধা হচ্ছিল’, তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুতে বিস্ফোরক জিতেন্দ্র