‘তুমিও মানুষ, আমিও মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়…’ শাহর বিরুদ্ধে অভিষেকের প্রতিবাদী স্বর
ঠাকুরনগরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) সভা ছিল হাইভোল্টেজ। প্রত্যাশা মতো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে (Amit Shah) বিঁধলেন অভিষেক।
উত্তর ২৪ পরগনা: একে মতুয়া-বলয়, তার ওপর কয়লা কাণ্ডে স্ত্রী রুজিরা নারুলা (Rujira Narula) ও শ্যালিকা মেনকা গম্ভীরের সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রথম সভা, আজ ঠাকুরনগরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) সভা ছিল হাইভোল্টেজ। প্রত্যাশা মতো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে (Amit Shah) বিঁধলেন অভিষেক, তবে একেবারেই কৌশলী ভঙ্গিতে। সে অর্থে এ দিন মেজাজ হারাননি অভিষেক, সুরও চড়ায় তোলেননি, তবে উচ্চারণ করলেন শ্রীজাতর পংক্তি। বললেন, ‘তুমিও মানুষ, আমিও মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়’
বস্তুতপক্ষে ঠাকুরনগরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সভার পাল্টা হিসাবে আজ ‘প্রতিবাদ সভা’ করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা নির্বাচনের (West Bengal Assembly Elections 2021) আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) নিজের মতো করে মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ক সুদৃঢ় করার চেষ্টা করছেন। মতুয়াদের রাজনীতি ঠাকুরনগরের চৌকাঠ পেরিয়ে গোটা বাংলার দরবারে। অমিত শাহ কিছুদিন আগেই ঠাকুরনগরের মাটিতে দাঁড়িয়ে আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন, করোনা টিকাকরণ প্রক্রিয়া শেষ হলেই সিএএ কার্যকর করা হবে। তারপরই আজ সভা অভিষেকের। প্রত্যাশা ছিল সিএএ নিয়েই বেশিরভাগটা বলবেন অভিষেকের। তবে এরই মধ্যে রাজনৈতিক বাতাবরণের উত্তাপ আরও কয়েক গুণ বাড়িয়েছে রুজিরা কাণ্ড।
অভিষেকের করা মামলার জেরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে শমন জারি হয়েছে। আবার উল্টো দিকে কয়লা কাণ্ডে তাঁর স্ত্রী রুজিরা নারুলা এবং শ্যালিকা মেনকা গম্ভীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। সে দিক থেকে এ দিন অভিষেকের সভার রাজনৈতিক তাৎপর্য অপরিসীম।
এ দিনের সভায় দাঁড়িয়ে অভিষেক বললেন, “আমার পিছনে সিবিআই লেলিয়ে দিয়েছে। আমি বলছি, সিবিআই, ইডি, আয়কর ছাড়াও আর যারা যারা আছে, আমার পিছনে লাগান। কিন্তু মাথা নত করব না। জেনে রাখুন আমার গলা কেটে দিলেও একটা কথাই বেরোবে— ‘জয় বাংলা’।” এরপরই শাহের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তুমিও মানুষ, আমিও মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়…’
প্রসঙ্গত, অভিষেকের বাড়িতে সিবিআই হানার পর কয়লা কাণ্ডে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। বঙ্গ রাজনীতিতেও তৈরি হয়েছে টান টান উত্তেজনা। সাহাগঞ্জের মাঠ থেকে এ প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই মোদী-শাহর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রুজিরা কাণ্ডে ‘ঘরের মা-বোন-বউ’ আবেগ এবং নারী নিরাপত্তার সঙ্গে মিলিয়ে দিয়ে বিজেপি-কে কাঠগড়ায় তুলে সুর চড়িয়েছেন পোড় খাওয়া রাজনীতিক মমতা। তিনি এ দিন বলেছিলেন, “বাড়ির বউকে কয়লা চোর বলছে। আরে, আপনার গায়েই তো কয়লার কালি।”
অবশ্য লক্ষ্যণীয়ভাবেই অভিষেকের বাড়িতে সিবিআই হানার ঠিক পরের দিনই সাহাগঞ্জের মাঠেই সভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সে দিন এ প্রসঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণভাবেই একটিও শব্দ ব্যয় করেন নি তিনি। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মুখ না খুললেও অভিষেক বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন একাধিক বঙ্গ বিজেপি নেতা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অভিষেক এ দিন রুজিরা ইস্যুতে শাহ প্রসঙ্গে সরাসরি কোনও শব্দপ্রয়োগ করেননি। তবে তাঁকে বিঁধতে উচ্চারণ করলেন শ্রীজাতর পংক্তি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে অভিষেকের মমতার পথই অনুকরণ করলেন। অর্থাৎ এক্কেবারে আম বাঙালির মনকে স্পর্শ করতে চাইছেন তাঁরা। মমতা বাংলার মা-বোনদের প্রসঙ্গ তুললেন, আর অভিষেক বললেন ‘মেরুদণ্ড’-এর কথা।
আরও পড়ুন: রুজিরাকাণ্ডে মুখ খুললেন মমতা: ‘ঘরের বউকে কয়লা চোর বলছে…বিজেপিতে মেয়েদের সুরক্ষা নেই’
‘বহিরাগত’ অমিত শাহকে বিঁধতে বাংলার জনপ্রিয় কবির পংক্তিই উদ্ধৃত করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একটা সময় শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই লাইনগুলো লিখে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু বাঙালির মনে গেঁথে রয়েছে এই লাইনগুলি। ওয়াকিবহলের মতে, অভিষেক আদতে সেই জায়গাটাই স্পর্শ করতে চেয়েছেন। কাঁথিতে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর উদ্দেশে ‘তুই-তোকারি’ ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছিলেন অভিষেক। এ দিন ‘ভাষা সন্ত্রাসের’ পথে না হেঁটে একের পর এক কবিতা আওড়িয়ে ভোট আবহে নতুন রাজনৈতিক ভাষা জন্ম দিলেন ডায়মন্ড হারবার সাংসদ।