
চার বছর বয়সে তামিল ছবিতে প্রথম অভিনয়। ‘কালাথুর কানাম্মা’ (১৯৬০)। শিশু অভিনেতা হিসেবে মন কেড়েছিল কমল হাসান। ছবির জন্য স্বীকৃতি এসেছিল খোদ রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে। মিলেছিল সোনার মেডেল। এম জি রামচন্দ্রন, শিবাজি গনেশন, এবং জেমিনি গনেশনের মতো কিংবদন্তী অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন সে বয়সে। প্রথম বড় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন কে বালাচন্দ্রর ছবি ‘অরেঙ্গেত্রম’ (১৯৭০)। বালচন্দ্রর ৩৫ ছবিতে অভিনয় করেছেন কমল। এমনকি তাঁর শেষ ছবি ‘উথামা ভিলেন’-এও অভিনয় করেছিলেন কমল হাসান।

সর্বভারতীয় একজন অভিনেতা। শুধু তামিল ছবিতে নয়, বিভিন্ন ভাষায় ছবি করেছেন কমল হাসান। তামিল ছবির ‘হার্টথ্রব’ হওয়ার অনেক আগে তিনি প্রায় ২৪ মালায়ালি ছবি করে ফেলেছিলেন কমল হাসান। এমনকি হিন্দি এবং তেলেগু ছবিতেও বেশ কিছু কাজ করেছেন কমল। ‘মারো চরিত্র’, ‘সাগর সঙ্গম’, ‘স্বাতী মুত্তম’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করে তেলগু ছবির মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বলিউডের বেশ বড় নাম হয়ে উঠেছিলেন তাঁর অভিনয়ের কৃতিত্বে। ‘সাগর’ ‘সদমা’ ‘এক দুজে কে লিয়ে’র মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় এখনও এভারগ্রিন। কন্নড এবং বাংলা ভাষাতেও ছবি করেছেন কমল হাসান।

মুখ্য অভিনেতা হিসেবে প্রথম ছবি ১৯৭৫ সালে। ছবির নাম ‘অপূর্ব রঙ্গলাল’। অসম বয়সের প্রেমের গল্পে কমল হাসানের অভিনয় নজর কেড়ে ছিল। ভিন্ন ধরণের চরিত্রে অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন কমল হাসান। মনিরত্নম পরিচালিত ‘নায়কন’ ছবিটি চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ছবি হিসেবে রয়ে গিয়েছে।

তিন-তিনটি জাতীয় পুরষ্কার। ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা অভিনেতা। ছ’দশক ধরে তাঁর ক্যারিশমা অব্যাহত। ‘মুঁদরাম পাইরাই’, ‘নায়কন’ এবং ‘ইন্ডিয়ান’ ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসনীয়। ‘থেভর মগন’ ছবির প্রযোজক কমল হাসান। ১৯৯২ সালে ভারতের অফিশিয়াল এনট্রি ছিল ‘থেভর মগন’। তাঁকে বলা হয় ভারতীয় চলচ্চিত্রের ‘ড্যানিয়েল ডে ল্যুইস’।

কমল হাসান তাঁর কেরিয়ারে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ছদ্মবেশের শাহেনশাহ বললেও তাঁকে ভুল বলা হবে না। তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলোয় অভিনবত্ব এবং সৃজনশীলতা আনতে, বেশ কয়েকটি সিনেমায় তিনি তাঁর চেহারার আমূল পরিবর্তন করেছে। ‘চাচী ৪২০’-এ একজন বৃদ্ধার চরিত্রে অভিনয় থেকে শুরু করে ‘দশভথারাম’-এ ১০টি ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনব অভিনয়ের কারণে তাঁকে ‘ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রথম, এবং সম্ভবত শেষ, সম্পূর্ণ নায়ক’ বলা হয়ে থাকে। তিনিই একমাত্র অভিনেতা যিনি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস-এ ‘সাগর’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতা এবং সে-ই ছবির জন্য সেরা সহঅভিনেতার জন্যও নমিনেশন পেয়েছেন।

তামিলনাড়ুতে সিনেমা ও রাজনীতির মধ্যে ধীরে-ধীরে সম্পর্ক বাড়ছিল। রাজ্যের তিন-তিনজন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তামিল অভিনেতা। বাকস্বাধীনতা এবং শৈল্পিক স্বাধীনতা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কামাল হাসান বরাবর সরব। অবশেষে তিনি তার নিজস্ব রাজনৈতিক দল ‘মাক্কাল নিডহি মাইয়াম’ শুরু করার ঘোষণা করেন। এক সাক্ষাত্কারে কমল হাসান জানিয়েছিলেন রাজনীতিতে প্রবেশের পরে তিনি আর ছবিতে অভিনয় করবেন না।
