শুটিং ফ্লোরে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়কে চরম অপমান প্রযোজকের, প্রসেনজিতের কানে খবর যেতেই ঘটে গেল ইতিহাস!

একবার বাংলার এমনই এক বাঘা ব্যক্তিত্বকে শুটিং ফ্লোরে সহ্য করতে হয়েছিল অপমান! তাও আবার ছবির প্রযোজকের কাছ থেকে। তবে সেই অপমানের বদলা নিতে স্বয়ং ইন্ডাস্ট্রিকে স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন সুপারস্টার তথা 'ইন্ডাস্ট্রি' প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। সেই ঘটনা আজও টলিপাড়ার কানাঘুষোয় শোনা যায়।

শুটিং ফ্লোরে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়কে চরম অপমান প্রযোজকের, প্রসেনজিতের কানে খবর যেতেই ঘটে গেল ইতিহাস!

|

Dec 27, 2025 | 5:11 PM

টলিউডের ‘ব্যাড বয়’ হিসেবে তিনি পরিচিত হলেও বাস্তবে তাঁর ব্যক্তিত্ব খুবই দৃঢ়। দাপুটে অভিনেতার পাশাপাশি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হওয়ায় সিনেপাড়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলেও তাঁর দাপট ছিল দেখার মতো। হ্য়াঁ, তিনি বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু একবার বাংলার এমনই এক বাঘা ব্যক্তিত্বকে শুটিং ফ্লোরে সহ্য করতে হয়েছিল অপমান! তাও আবার ছবির প্রযোজকের কাছ থেকে। তবে সেই অপমানের বদলা নিতে স্বয়ং ইন্ডাস্ট্রিকে স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন সুপারস্টার তথা ‘ইন্ডাস্ট্রি’ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। সেই ঘটনা আজও টলিপাড়ার কানাঘুষোয় শোনা যায়।

কী ঘটেছিল সেদিন?

সময়টা নয়ের দশক। একের পর এক বাংলা ছবিতে নায়ক প্রসেনজিৎ ও খলনায়ক বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। ঠিক সেই সময়ই, কলকাতার একটি নামী স্টুডিওতে একটি বড় বাজেটের ছবির শুটিং করছিলেন এই দুই তারকা। সেই ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছিলেন বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। শুটিং চলাকালীন কোনও একটি বিষয় নিয়ে ছবির প্রযোজকের সঙ্গে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। যা পৌঁছয় বচসায়। ঠিক তখনই আচমকা প্রযোজক সমস্ত সীমা অতিক্রম করে ফেলে, গোটা ভরা শুটিং ফ্লোরে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে অত্যন্ত কুরুচিকর মন্তব্য করে বসেন। যাচ্ছে তাই বলে ‘অপমান’ করে শুটিং সেট থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন প্রযোজক। বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের মতো একজন সিনিয়র অভিনেতার পক্ষে এই অপমান মেনে নেওয়া অসম্ভব ছিল। তিনি সেদিন কোনও কথা না বাড়িয়ে মেকআপ রুমের দিকে হাঁটা দেন। মগজে ছক কষে নেন, মেকআপ তুলে সোজা বাড়ি হাঁটা দেবেন।

এই ঘটনা নিয়ে গোটা শুটিং ফ্লোরে কানাঘুষো শুরু হয়। কেউই ঠিক মেনে নিতে পারছিলেন না বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের এই অপমান। কিন্তু প্রযোজকের মুখের উপর কথা বলবে কে! কার সাহস রয়েছে! কিছু বললেই তো কাজ যাবে। সেই ভয়ে সেদিন চুপ ছিলেন সবাই।

যখন ঘটনাটি ঘটে, তখন প্রসেনজিৎ শুটিং ফ্লোরে উপস্থিত ছিলেন না। তবে খবরটি কানে পৌঁছতেই সোজা সেটে চলে আসেন তিনি। শুটিং ফ্লোরে পা রেখেই, প্রসেনজিৎ সোজা চলে যান বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের মেকআপ রুমে। সেখানে গিয়ে দেখেন বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় বিষণ্ণ মনে বসে রয়েছেন। প্রসেনজিৎ তাঁকে আশ্বস্ত করেন এবং সোজা চলে যান সেই প্রযোজকের কাছে। স্পষ্ট তাঁকে জানান, যা হয়েছে তা অত্যন্ত অন্যায়। অভিনেতাদের দিক থেকেও এই বিষয়ের আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত। যাতে সমতা বজায় থাকে। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সেদিনের উদ্যোগেই তৈরি হয় আর্টিস্ট ফোরাম। এই ফোরামে যাতে অভিনেতা, অভিনেত্রী,কলাকুশলীরা নিজেদের সমস্যা তুলে ধরতে পারেন নিশ্চিন্তে। জানা যায়, প্রসেনজিৎ সেদিন এও ঘোষণা করেছিলেন যে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়কে অপমান করা মানে গোটা শিল্পী সমাজকে অপমান করা।

বহু সাক্ষাৎকারে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিতের এই ভূমিকার কথা বহুবার বলেছিলেন,  তাঁর কথায়, “বুম্বা সেদিন যেভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল, তা সচরাচর দেখা যায় না। সে বুঝিয়ে দিয়েছিল এই ইন্ডাস্ট্রিতে শিল্পীদের সম্মান সবকিছুর ওপরে।” সম্প্রতি এক ফিল্ম ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে টোটা রায়চৌধুরীর মুখেও উঠে এল সেই ঘটনার কথা। এমনকী, এক প্রযোজকের কাছে অপমানিত হওয়ার পর টোটার পাশেও দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রসেনজিৎ। স্পষ্ট প্রযোজককে বলেছিলেন, নতুন অভিনেতার সঙ্গে এমন করা যাবে না।