”সুযোগ পেয়ে লাঞ্চ ব্রেকে অমিতাভের ভ্যানে ঢুকলাম…” তারপর অম্বরীশের সঙ্গে কী ঘটল?

সত্য়িই কি আমাকে অমিতাভের বিপরীতে কাস্ট করা হয়েছে? প্রদীপদা আমার অডিশনও নেয়নি। তারপর অমিতাভের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ! সত্য়িটা জানতে প্রদীপদাকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করি। জানতে চাই বিস্তারিত। কিন্তু আমাকে প্রদীপদা উল্টে বলেন, তোর নাকি ডেট নেই? উত্তরে আমি প্রদীপদাকে বলি, অমিতাভের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেলে, আমি গোটা একমাস ডেট দিতে পারি।

সুযোগ পেয়ে লাঞ্চ ব্রেকে অমিতাভের ভ্যানে ঢুকলাম... তারপর অম্বরীশের সঙ্গে কী ঘটল?

| Edited By: আকাশ মিশ্র

Oct 11, 2025 | 2:18 PM

অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে দু’বার কাজ করেছেন অভিনেতা অম্বরীশ ভট্টাচার্য। দুবারই বিজ্ঞাপনের কাজ। একটি ২০১৮ সালে, আরেকটি ২০২৩। প্রথমটির পরিচালক প্রদীপ সরকার ও দ্বিতীয়টি পরিচালনা করেছিলেন সুজিত সরকার। শনিবার বিগ বির জন্মদিনে সেই স্মৃতিতেই ডুব দিলেন অম্বরীশ। Tv9Bangla ডিজিটালের হয়ে ধরলেন কলম।

অম্বরীশ লিখলেন,

আমার সঙ্গে অমিতজির প্রথম দেখা ২০১৮ সালে। বিখ্য়াত পরিচালক প্রদীপ সরকারের বিজ্ঞাপনের জন্য মুম্বই থেকে অফার এল। সেই সময় আমি খুবই ব্যস্ত। তিনটে মেগা চলছে। সঙ্গে তিনটে ছবি। প্রদীপদা আমাকে সন্তান স্নেহে ভালবাসতেন। তাই কাজটা নাও করতে পারছিলাম না। কিন্তু এদিকে হাতে এত কাজ। আমি বিজ্ঞাপনের টিমকে জানাই, কোনওভাবে ডেট অ্য়াডজাস্ট করা যায় কিনা। কিন্তু আমাকে জানানো হয়, এই বিজ্ঞাপনে আমার যে সহশিল্পী, তিনি খুবই ব্যস্ত মানুষ, তাই শিডিউল বদলানো যাবে না। আমি তখন জানতে চাই, কে সেই শিল্পী? আমাকে জানানো হয়, তিনি আর কেউ নন, অমিতাভ বচ্চন! আমি থমকে যাই। ভাবতে থাকি, সত্য়িই কি আমাকে অমিতাভের বিপরীতে কাস্ট করা হয়েছে? প্রদীপদা আমার অডিশনও নেয়নি। তারপর অমিতাভের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ! সত্য়িটা জানতে প্রদীপদাকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করি। জানতে চাই বিস্তারিত। কিন্তু আমাকে প্রদীপদা উল্টে বলেন, তোর নাকি ডেট নেই? উত্তরে আমি প্রদীপদাকে বলি, অমিতাভের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেলে, আমি গোটা একমাস ডেট দিতে পারি। বাংলার সব কাজ ছেড়ে দিয়ে আমি মুম্বই যেতে পারি। এরপর আর একবারও ভাবিনি। দুটো ছবি ছেড়ে আমি ডেটটা ম্যানেজ করলাম। সেই পরিচালক ও প্রযোজকদের সঙ্গে আমার একটু মন কষাকষিও হয়েছিল।

আমার হাতে চিত্রনাট্য়টি আসতেই দেখি, অমিতাভের সঙ্গে দেড় পাতার সংলাপ আমার। প্রায় আড়াই মিনিটের বিজ্ঞাপন। চিত্রনাট্য পড়ে মুম্বই রওনা দিলাম। শুটিংয়ের আগে রাতে দুচোখের পাতা এক হয়নি। সকাল ৯টায় কলটাইম। অমিতাভ ঠিক ৯টায় ফ্লোরে পা রাখলেন। এসেই হ্য়ান্ডসেক করে আমার নাম জিজ্ঞাসা করলেন। তারপর আমাকে বললেন, আমরা কি একবার রিহার্সল করতে পারি? তারপর বহুবার রিহার্সল হল। যতবার ভুল হচ্ছিল, ততবারই আমাকে সরি বলছিলেন উনি।

একটা বড় দৃশ্যে সংলাপ বলতে গিয়ে হোচট খান অমিতাভ। সঙ্গে সঙ্গে নিজেই ক্য়ামেরা বন্ধ করতে বলেন। প্রদীপ সরকার বলেন, আপনি থামলেন কেন, আমি তো নানা অ্যাঙ্কেল থেকেই ছবি নিয়েছি। উত্তরে অমিতজি যা বলেছিলেন তা খুব বড় শিক্ষা। অমিতজি, প্রদীপদাকে বলেন, আসলে আমি তো হৃষিকেশ মুখোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে কাজ করেছি। তখন সেলুলয়েডে কাজ হত। ভুল হলে সেলুলয়েড নষ্ট হত। তখন হৃষিকেশদা বলতেন, তোমরা হাজার বার রিহার্সল দাও। কিন্তু এনজি শট দিও না। নাহলে তোমার থেকে রস্টকের দাম কেটে নেব। হৃষিকেশদার সেই কথা আজও মাথায় ঘোরে।

ফ্লোরে চারটে চেয়ার নিয়ে বসতেন বিগ বি। শুটিংয়ের ফাঁকে সুযোগ পেয়ে আলাপ করেত এগিয়ে গেলাম। অমিতজিকে বললাম, স্য়ার আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে পারি। একগাল হেসে উনি বসতে বললেন। তারপর বাংলা, হিন্দি মিলিয়েই কথা শুরু হল। উনি যখন শুনলেন আমি কলকাতার থিয়েটার করতাম। তখন কলকাতার নানা গল্প করতে শুরু করলেন। শম্ভু মিত্রর রক্তকরবী দেখার জন্য উনি নিউ এম্পেয়ার সিনেমা হলে ভোর ৪ টে নাগাদ লাইন দিয়েছিলেন। উৎপল দত্তর সঙ্গে স্মৃতি, রবি ঘোষ, বাদল সরকারকে নিয়ে গল্প। একের পর এক প্রসঙ্গ উঠে এল অমিতাভের কথায়। আমি মন্ত্রমুগ্ধর মতো শুনছিলাম। এত সহজ করে মিশছিলেন যে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আমার সামনে বলিউড শহেনশাহ বসে আছেন!

এরপর সময়টা ২০২৩। সুজিত সরকারের কাছ থেকে ফোন পেলাম একটা পানীয়র বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের জন্য। জানতে পারলাম, ফের অমিতাভের সঙ্গে কাজ। এই বিজ্ঞাপনে আমি ওর জামাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। শুটিংয়ের দিন ১০টায় ফ্লোরে ঢোকেন অমিতাভ। সুজিত সরকার সকলের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন। আমাকে দেখতেই অমিতাভ বলে ওঠেন, সুজিত আমি ওর সঙ্গে কাজ করেছি আগে। আমি তো হতবাক। ৫ বছর আগে উনি কাজ করেছেন আমার সঙ্গে সেটা মনে আছে! সুযোগ পেয়ে যখন অমিতজিকে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন ২০১৮ সালের বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ের গল্প গড় গড় করে বলে গেলেন। তারপর সুযোগ বুঝে মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা ইচ্ছাটা বলেই ফেললাম। অমিতজিকে বললাম, আপনার মেকআপ ভ্যান দেখতে চাই। উনি শুনেই অনুমতি দিলেন।

লাঞ্চ ব্রেকে, লাঞ্চ না করে অমিতাভের ভ্যানিটি ভ্যান দেখতে গিয়েছিলাম। সেটা একটা অভিজ্ঞতা বটে। বিলাসবহুল ভ্যান। ভ্য়ানের ভিতর, আলাদা আলাদা ঘর। বসার ঘর, শোয়ার ঘর। শোয়ার ঘরেই আধশোয়া হয়ে কমলালেবু খাচ্ছিলেন অমিতজি। আমাকে বসতে বললেন। সদ্য তখন তিনি নতুন একটা আইফোন কিনেছেন। সেটা দেখালেন। দেখালেন স্পটিফাই, নেটফ্লিক্স ডাউন করেছেন। আমার হাতে বলিউড শহেনশাহর ফোন! ভাবতেই অবাক লাগছিল। আমাকে বাংলা ওটিটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। আমি তো অবাক। প্রশ্ন করেই ফেললাম, আপনি তো বড়পর্দার মানুষ, ওটিটি নিয়ে ভাবেন? এর উত্তরে অমিতজি যা বলেছিলেন, তা খুব বড় শিক্ষা। অমিতজি বলেন, অতীতের গরিমা নিয়ে যদি বসে থাকতাম, তাহলে আজ হয়তো বাংলোর কোনও অন্ধকার ঘরে চুপ করে বসে থাকতে হত,সমসাময়িক আছি বলেই টিকে গেলাম!