তাঁর যে মেয়ে রয়েছে, তা ভুলে যেতে চান মা। এহেন কথা শুনলে যে কেউই আঁতকে উঠবেন। কিন্তু গত এক বছর ধরে যাঁরা ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী অহনা দত্ত অর্থাৎ মিশকার মাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলো করছেন, তাঁদের কাছে এই তথ্য অজানা তো নয়ই—আর হয়তো সেভাবে বিস্ময়েরও উদ্রেক ঘটায় না। অহনা ওরফে মিশকার ‘অপরাধ’, তিনি ভালবেসেছেন তাঁরই ধারাবাহিক ‘অনুরাগের ছোঁয়া’র মেক-আপ আর্টিস্ট দীপঙ্কর রায়কে। দীপঙ্কর ডিভোর্সি, তাঁর ও অহনার বয়সের ফারাক বিস্তর। আর সেই কারণেই অহনার মা চাঁদনী গঙ্গোপাধ্যায় এই সম্পর্ক চাননি। প্রায় এক বছর হয়ে গিয়েছে মেয়ে অহনা দত্তের সঙ্গে কথা বলেননি চাঁদনী গঙ্গোপাধ্যায়। ফেসবুকে বারেবারে উগরে দিয়েছেন ক্ষোভ।
সেই ক্ষোভ উগরে দেওয়ার প্রসঙ্গেই চাঁদনী ফেসবুকে লিখেছেন, মেয়ে রয়েছে, তা ভুলে যেতে চান তিনি। এক বছর পার হলেও আজও অহনার মায়ের চোখে ‘ভিলেন’ দীপঙ্কর। হাত বাড়িয়েও সমস্যার সমাধান হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলারদের হাতে পদে-পদে সমালোচনার শিকার হতে প্রিয় মিশকাকে। কিন্তু যাঁকে কেন্দ্র করে এই বিতর্কের সূত্রপাত, তথাকথিত সমাজের চোখে যে ‘সামান্য’ হয়েই থেকে যেতে হয় যে মেকআপ আর্টিস্টকে, সেই দীপঙ্কর কেমন আছেন ? এই গোটা ঘটনায় দীপঙ্কর কী ভাবছেন? হঠাৎ করেই যদি চাঁদনী গঙ্গোপাধ্যায় মিটিয়ে নেওয়ার হাত বাড়ান, কী করবেন তিনি? এই প্রথম বার TV9 Bangla মন দিয়ে শুনল তাঁর কথা কারণ তাঁর বক্তব্য না হলে যে গোটা গল্পটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। খোলাখুলি যে সব কথা বললেন দীপঙ্কর…
“আমার নামে এখন অনেক সমালোচনা। অনেকে অনেক কিছু বলছেন। একটা সময় আমি দেখতাম উনি (চাঁদনী গঙ্গোপাধ্যায়) সোশ্যাক মিডিয়ায় অনেক কিছু লিখতেন, কিন্তু এখন আর দেখি না। কারণ এত নেতিবাচকতা আমি দেখতে পারি না। খারাপ লাগে, কষ্ট হয়। আমার অহনাকে ভাল লেগেছিল, কিছু না ভেবেই ওকে জানিয়েছিলাম। এ-ও ভেবে রেখেছিলাম, ও যা সিদ্ধান্ত নেবে তা শুধু ওরই, একান্তভাবেই ওর। অহনা জানত আমার অতীত। জানত আমাদের বয়সের ফারাকটাও। আমিও কতবার তা নিয়ে মজা করেছি। কোনও জোরাজুরি করিনি। ও নিজেই মনে করেছিল আমাকে ভরসা করা যায়। বাড়িতে জানিয়েছিল। ওঁরা মাননেনি। বাধ্য হয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে ও। আমি ওকে অনেকবার জিজ্ঞাসা করি, ‘যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছিস, তা নিয়ে তুই খুশি তো?’ বাড়াবাড়ি কিছু হবে না তো? ওর আমার উপর আস্থা রেখেছিল সেই কবে থেকেই। যখন প্রথম দিকে ওর বাড়ির লোক আমাকে ফোন করতোন, কত কিছু বলতেন, আমি একটাই কথা বলতাম জানেন, ‘আমায় যা বলছেন বলুন, মেয়েটাকে কিছু বলবেন না। ও কী করেছে? ভালবেসেছে, এটাই কি অপরাধ? আমি ধরে নিলাম অহনা ভুল করেছে। ধরে নিলাম, আমি খুব খারাপ একটা মানুষ। ধরেও নিলাম, আমার হাত ধরেছে বলে পরবর্তীতে ওকে অনেক মাশুল দিতে হবে… তখন একটা রাস্তা তো খোলা রাখবেন, যাতে মেয়েটা আপনাদের কাছে ফিরে যেতে পারে?’ না, ওঁরা তা করেননি। সবাইকে জানিয়ে গালিগালাজ করে যা করছেন বা করে চলেছেন, সেটা কী ঠিক? ওর মা বলেছে আমার খারাপ অভিপ্রায় রয়েছে। যদি তা-ও হয়, মেয়েটাকে আপনার কাছে ফেরার রাস্তাও তো বন্ধ করে দিয়েছেন আপনিই। ও ফিরবে কোথায়?
এই এক বছরে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে নানা জায়গায় নানা ভাবে অপমানিত হতে হয়েছে আমাকে। আমি কিন্তু কখনও কিছু বলিনি কারও বিরুদ্ধে। কেউ বলতে পারবে না কোনওদিন উঁচু গলায় কথা বলেছি। খারাপ কিছু বলেছি ওঁদের? আজও বুঝতে পারলাম না, আমাকে নিয়তে তাঁদের সমস্যাটা ঠিক কোথায়? কী করেছি আমি? প্রথম দিকে আমাকে প্রচুর ফোন করা হত। অনেক কিছু বলা হত। চুপচাপ শুনে গিয়েছি, বোঝানোর চেষ্টা করেছি। লাভ হয়নি। আমি মনে করেছি, উনি (চাঁদনী গঙ্গোপাধ্যায়) যা করেছেন, মায়ের জায়গা থেকে করছেন। তবে দিনের শেষে মানুষের কাছে এই সম্পর্কটাকেই হাস্যকর করে তুলেছেন ওঁরা।
এক বছর হয়ে গেল অহনা আর আমি একসঙ্গে থাকি। অহনা এখন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রায়োরিটি। যে জেদ নিয়ে, যে বিশ্বাস নিয়ে ও আমার হাত ধরেছিল, সেই বিশ্বাস রাখাটাই আমার প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ। ওকে ভাল রাখতেই হবে, কারণ অহনা যদি এখন খারাপ থাকে, তাহলে তাঁদের বলা কথাগুলো সত্যি হয়ে যাবে। যা আমি কখনও হতে দিতে চাই না। ওকে ভালবাসি, ভীষণ ভালবাসি। না, অহনা বা তাঁর পরিবারের উপর আমার কোনও ক্ষোভ নেই। কোনও রাগ নেই। যা ওঁরা বলেছেন, সব ভুলে গিয়েছি। কাল যদি ওর মা এসে আবার সবটা ঠিক করে নেন, আমি বারণ করব না কখনওই। শ্রদ্ধা নিয়েই কথা বলব। তবে হ্যাঁ, ওকে ছেড়ে দিতে পারব না কোনও ভাবেই। যে ভরসা ও আমায় করেছে, তা আজীবন বজায় রাখাই যে এখন আমার একমাত্র কর্তব্য।