স্নেহা সেনগুপ্ত
রবিবার ২০ মার্চ, সন্ধ্যা ৬টা। জায়গা তপন থিয়েটার। অভিনেতা শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ের দীর্ঘ অভিনয় কেরিয়ারের প্রথম একক নাটকের শো। নাটকের নাম ‘হারমাচিস’। আজই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আজই অপেক্ষার অবসান। আজই বাংলার দর্শক শুভাশিসকে প্রথমবার এমন একটি চরিত্রে দেখবেন, যা তাঁর কাছে তো বটেই, বাংলার সমগ্র নাট্যজগতের কাছেই অমূল্য হয়ে থাকবে। নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার আগে স্টেজ রিহার্সালে উপস্থিত ছিল TV9 বাংলা। তুলে ধরল নাটকের নানা মুহূর্ত। কথা বলল শুভাশিস মুখোপাধ্যায় ও মুক্তধারা নাট্যদল ও নাটকের নির্দেশক অভিজিৎ অনুকামিনের সঙ্গে।
কী নিয়ে নাটক?
মিশরের এক পুরোহিতের ছেলে ছিলেন হারমাসিচ। দৈববাণীতে বলা হয়েছিল হারমাচিসই মিশরের পরবর্তী ফারাও হবেন। মিশরের দুঃখ-দুর্দশা দূর করবেন। সেই স্বপ্ন দেখেছিলেন হারমাচিসের বাবা। তারপর থেকে ছেলেকে বড় করতে থাকেন তিনি। তাঁকে ফারাও করার জন্য যে-যে পরিকল্পনা করা হয়, সেটাই নাটকের অন্যতম আকর্ষণ।
TV9 বাংলা সোজা চলে গিয়েছিল গ্রিনরুমে। সেখানে হারমাচিস-রূপে পাওয়া গেল শুভাশিসকেও। কণ্ঠে তাঁর আত্মবিশ্বাস ও নাটক নিয়ে আশা।
কী বললেন শুভাশিস মুখোপাধ্যায়?
আমার দীর্ঘ অভিনয় কেরিয়ারের এটাই প্রথম একক নাটক। অনেক দেরিতে সুযোগ পেলাম একটি একক নাটকে। সত্যি বলতে, এর আগে আমাকে কেউ সুযোগ দেননি। আমি কেরিয়ার শুরু করেছিলাম নাটক দিয়েই। মাঝে অনেকটা সময় থিয়েটার করতে পারিনি। সিনেমার শুটিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। ছিল সিরিয়ালে অভিনয়ের ব্যস্ততাও। তারপর আবার ঘুরে দাঁড়াই। আসলে থিয়েটার না করলে অভিনয়ে শান দেওয়া যায় না। মঞ্চাভিনয় শান দেওয়ার জায়গা। অভিনেতা হিসেবে শেখার জায়গা। সেই কারণে আবার থিয়েটারে ফিরে এলাম। বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করছি। ‘মুক্তধারা’ নাট্যদলের এই নাটকটির নাম ‘হারমাচিস’।
একক অভিনয় করার লোভ ছিল মনের মধ্যে। অনেকগুলো বছর ধরে সেই লোভকে মনের মধ্যে লালন করেছিলাম। বড় সাধ ছিল, আমি একা মঞ্চে দাপিয়ে বেড়াব। আদতেও কতখানি করতে পারব জানি না। কিন্তু সেই ‘মুক্তধারা’ নাট্যদলের পরিচালক অভিজিৎ অনুকামিনের থেকে সুযোগটা যখন স্ক্রিপ্টটা পড়লাম। মনে হল, ভীষণভাবে অভিনয়যোগ্য। নাটকের বিষয়বস্তু নাড়িয়ে দেওয়ার মতো। মিশরের কাহিনি। সেখানকার রাজনীতি, মানুষের প্রেম-ভালবাসা, হিংসা, ব্যর্থতা, লোভ – সবাটাই নাটকের মধ্যে রয়েছে। আমার দেশের সঙ্গে মিল খুঁজে পেলাম। ভারত বা পশ্চিমবঙ্গ, সবের সঙ্গে অদ্ভুত সাদৃশ্য রয়েছে এই মিশরীয় কাহিনির। আমি আকর্ষিত হলাম। আর আজ এই নাটকের শো।
যে কোনও নাটককেই বক্তব্য প্রধান হতে হয়। সেই বক্তব্য মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হয়। তারও আগে অভিনেতার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হয়। এটা সেরকমই একটি নাটক। আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিল। তার উপর ছিল একক অভিনয়ের লোভ। তবে আমি একক হলেও আমার সঙ্গে কোরাস আছে। তাঁরা আমার সঙ্গে মাঝেমধ্যে সঙ্গে কথা বলেন। ক্লিওপ্যাট্রার একটি চরিত্র রয়েছে। চার্মিয়ান বলেও একটি চরিত্র রয়েছে। এরা সকলেই আমার সঙ্গে কথা বলেন। চার্মিয়ান আমার সঙ্গে কোরাস থেকে বেরিয়ে এসে কথা বলেন। আমি নিজে একসঙ্গে ২-৩টি গলায়, ২-৩টি চরিত্রে অভিনয় করছি।
অনেকবারই নাটকের শোয়ের দিন ঠিক হয়ে পিছিয়েছে। কারণ ছিল করোনার প্যান্ডেমিক। অবশেষে আজ রবিবার নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। নাটকের পরিচালক অভিজিৎ অনুকামিনের চোখেমুখে ধরা পড়ে আনন্দ ও আশার রেখা।
কী বললেন নাটকের পরিচালক ‘মুক্তধারা’ নাট্যদলের অভিজিৎ অনুকামিন?
দীর্ঘদিন লড়াই করেছি। সকলেই আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন। আমাদের শো কিন্তু হাউসফুল। ফলে পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে নাটক দেখা যাবে অনেকদিন পর। বিষয়টা নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। প্যান্ডেমিকে নাটক প্রায় বন্ধই ছিল। দর্শকের এই সাড়া আমাদের প্রাণে নতুন করে অক্সিজেন দিয়েছে।
শুভাশিসদাকে আমাদের নাটকের মুখ হিসেবে পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। তারকা অভিনেতা বলে নয়, একজন অত্যন্ত ভাল অভিনেতা বলে ওঁর কাছে যাই। প্রতিমুহূর্তে আমাদের উদ্বুদ্ধ করছেন তিনি। তা ছাড়াও, এই চরিত্রটির সঙ্গে শুভাশিসদা ভীষণরকম মানানসই। নাটক লেখার সময়ও শুভাশিসদার কথাই মাথায় ছিল। কারণটা কিন্তু কোনওভাবেই ব্যবসায়িক নয়।
দর্শককে আমি এটাই বলতে চাইব। এই মুহূর্তে নাটক করা লড়াইয়ের চেয়ে কম কিছু নয়। করোনা প্যান্ডেমিকের মধ্যে সবটা সমালে নাটক করেছি। আপনারা সকলে সঙ্গে থাকুন। বাংলা থিয়েটারের পাশে থাকুন।
আরও পড়ুন: Srabanti-dol: দোল উৎসব তাঁর কাছে ডবল মজার, কেন? জানালেন অভিনেত্রী শ্রাবন্তী
আরও পড়ুন: EXCLUSIVE-Bharat Kaul-The Kashmir Files: আরিয়া কোনওদিনও ওর ঠাকুরদার বাড়িটা দেখতে পাবে না: ভরত কল