Subhashish Mukhopadhyay Exclusive: অভিনয় যখন ভোঁতা হয়ে যায়, থিয়েটার তাতে শান দেয়: শুভাশিস মুখোপাধ্যায়

থিয়েটার নিয়ে হিল্লিদিল্লি করে বেড়াচ্ছেন সিনিয়র অভিনেতা শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। সামনেই তাঁর প্রথম একক নাটক মঞ্চস্থ হবে। তারপর অন্য একটি নাটকের টানে যাবেন উত্তরবঙ্গে। ফিরে এসে পরপর দুটি শোয়ের প্রস্তুতি। হঠাৎ কেনই বা থিয়েটারের প্রতি এত মনযোগ শুভাশিসের, একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন TV9 বাংলাকে।

Subhashish Mukhopadhyay Exclusive: অভিনয় যখন ভোঁতা হয়ে যায়, থিয়েটার তাতে শান দেয়: শুভাশিস মুখোপাধ্যায়
এই প্রথম 'হারমাচিস' নাটকে একক অভিনয় শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ের। সঙ্গে নাটকের পরিচালক অভিজিৎ অনুকামিন।
Follow Us:
| Updated on: Dec 24, 2021 | 1:22 AM

গাঙ্গুলি বাগানের একটি বিরাট স্পেসে চলছে ‘হারমাচিস’ নাটকের মহড়া। মুক্তধারা নাট্যদলের নাটকটিতে অভিনয় করছেন শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। এটাই তাঁর অভিনয় কেরিয়ারের প্রথম একক নাটক। প্রথম শো ২৬ জানুয়ারি, তপন থিয়েটারে। নাটকের নির্দেশক অভিজিৎ অনুকামিন। তিনিই লিখেছেন স্ক্রিপ্ট। অভিনয় থেকে রাজনীতি, TV9 বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে অকপট শুভাশিস মুখোপাধ্যায়।

নিজেকে ‘ভাড়াটে গুন্ডা’ মনে করেন এখনও?

(হাসি)। ভাড়াটে গুন্ডা না ভাবলেও নিজেকে ভাড়াটে সৈনিক ভাবি। আই অ্যাম এ সোলজার। বহু দলে আমন্ত্রণে অভিনয় করি। এই কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে থিয়েটার করা একটা সংগ্রাম। কোনও একটি আদর্শের জন্যই কাজ করি। আমরা থিরেটারের কর্মীরা প্রত্যেকেই সৈনিক ছাড়া কিছু নই। ‘ভাড়াটে’ শব্দটা হয়তো অতিরিক্ত প্রয়োগ করে ফেলেছি।

অভিজিৎ অনুকামিনের নাট্যদল ‘মুক্তধারা’র নাটক ‘হারমাচিস’-এ আপনি এবং এটাই আপনার প্রথম একক নাটক…

মিশরের এক পুরোহিতের ছেলে হারমাসিচ। দৈববাণী কিংবা স্বপ্ন যাই বলুন না কেন, তাতে বলা হয়েছিল এই হারমাচিসই মিশরের পরবর্তী ফারাও হবেন। মিশরের দুঃখ-দুর্দশা দূর করবেন তিনি। সেই স্বপ্ন দেখেছিলেন হারমাচিসের বাবা। তারপর থেকে ছেলেকে বড় করতে থাকেন তিনি। তাঁকে ফারাও করার জন্য যে যে পরিকল্পনা করা হয়, সেটাই নাটকের অন্যতম আকর্ষণ।

শুভাশিসের সঙ্গে মহড়ায় অভিজিৎ

এতদিন পর একক নাটক কেন? সুযোগ তো আগেও আসতে পারত…

কেউ সুযোগ দেননি। আমাকে নিয়ে কেউ ভাবেননি। অভিনেতাদের তো সুযোগ পেতে হয়। তবে আমি অপেক্ষায় ছিলাম। অভিজিৎরা আমাকে নিয়ে ভেবেছেন। তাই করতে পারছি।

আপনার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে হারমাচিস বাচ্চা ছেলে…

(হাসি) আমিও তো বাচ্চা ছেলেই। তবে কোনও নির্দিষ্ট বয়েসে আমাকে ফেলা হয়নি। একটু বলতে পারি, এখানে আমি বৃদ্ধ নই।

এই ধরনের চরিত্র করলে কি মনে হয় জাদু মেশানো টনিক খেয়ে আপনার বয়েস অনেকটা কমে গিয়েছে?

এগুলোতে আমার তেমন প্রভাব পড়ে না। আমাকে যখন কেউ বয়স জিজ্ঞেস করেন বলি অভিনেতার কোনও বয়স হয় না। চরিত্র অনুযায়ী বয়স নির্ধারিত হয়। যখন যে চরিত্রে অভিনয় করি, সেটাই আমার বয়স। চেহারাটা হয়তো খানিকটা ভাবার বিষয়। কিন্তু অভিনেতা যদি চরিত্রটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারেন, সেই সময় আর চেহারা কিংবা বয়স তাঁর কাছে ম্যাটার করে না।

হারমাসিচ-এর সঙ্গে এখনকার সময়ের আর কী কী মিল খুঁজে পাচ্ছেন?

এখনও একই অত্যাচার, দুর্ব্যবহার দেখতে পাই। তখন যা যা হত, এখনও তাই তাই হয়। জনগণকে শোষণ করা চলছে। এখন বরং আরও প্রকট হয়েছে বিষয়টা। রাজত্ব কায়েম করার জন্য মানুষও খুন করা হয়।

‘মুক্তধারা’র সদস্যদের সঙ্গে মহড়ায় অভিজিৎ…

এখনকার যুগে হারমাচিসদের কতখানি প্রয়োজন?

ভীষণ প্রয়োজন। মনে করি, কোথাও না কোথাও প্রতিবাদ হওয়া উচিত। আমি হয়তো রাজনৈতিক ঝান্ডা হাতে নিয়ে প্রতিবাদ করব না। কিন্তু এই নাটকটাই আমার প্রতিবাদের হাতিয়ার। আমি আমার নাটক দিয়ে প্রতিবাদ করতে চাই।

এই যুগের হারমাচিসদের কী রকম হওয়া উচিত?

ক্রমাগত চেষ্টা করতে করতে হয়তো কোনও পরিবর্তন একদিন ঠিকই আসবে। সেটার জন্য মানুষকে একজোট হতে হবে। ‘দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান’ – সেই একত্রিত হওয়ার মতো একজন লিডারকে দরকার। সেই লিডার যেদিন আসবে রাজাকে খান খান করে দেবে। তবে লিডারের বড়ই অভাব। এখন তো সকলে নিজের ব্যক্তি স্বার্থ দেখেন। সমাজের স্বার্থ কেউ দেখেন না। একজন উদয়ণ পণ্ডিতের খুব দরকার।

হারমাচিস নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক নাটক, আপনি নিজে কতখানি রাজনৈতিক?

আমি একজন অভিনেতা। সেটাই আমার একমাত্র কাজ। আমি কোনও পার্টির হয়েও কাজ করি না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমি একজন রাজনৈতিক সচেতন মানুষ।

কোনও দল থেকে ডাক পাননি?

পেয়েছিলাম। কিন্তু আমি যাইনি।

মুক্তধারা নাট্যদল মূলত প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে কাজ করে.. আপনার কেমন অভিজ্ঞতা? 

অভিজিৎ ও মুক্তধারার সকল সদস্য দারুণ কাজ করছে। ওদের সঙ্গে কাজ করে আমি খুব খুশি। অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা বন্ধুর মতো মিশে গিয়েছি।

শুনলাম আপনি নাকি নাটক নিয়ে হিল্লিদিল্লি করে বেড়াচ্ছেন…

করছিই তো। এই তো উত্তরবঙ্গে যাব। একটা নাটকের ডাকে। আমারই দলের নাটক। নাটকের নাম ‘না কথা বলে’। ২৩ জানুয়ারি আমার দলের আরও একটা নাটক মঞ্চস্থ হবে ‘দুই বুড়োর রূপকথা’। অনেকদিন পর কোমর বেঁধে মঞ্চে ফিরেছি। অভিনয় যখন ভোঁতা হয়ে যায়, থিয়েটার তাতে শান দেয়!

আরও পড়ুন: Nandikar-Sohini-Swatilekha-Madhabi: “মায়ের একটা ভয় ছিল, তিনি মনে করতেন আমি টেলিভিশনে অভিনয় করতে গিয়ে ‘নান্দীকার’-এ অভিনয় করব না”, বলেছেন সোহিনী সেনগুপ্ত