Churni Ganguly: অকপট চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়; এক্সক্লুসিভভাবে শেয়ার করলেন করণ জোহরের সঙ্গে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা
ছবির নাম 'রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি'। পরিচালনায় করণ জোহর। অভিনয়ে বাঙালি পরিচালক ও অভিনেত্রী চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়। এটাই তাঁর জীবনের প্রথম অভিনীত বলিউড ছবি। সবটা মিলিয়ে দারুণ এক্সাইটেড চূর্ণী। TV9 বাংলাকে এক্সক্লুসিভলি জানালেন জীবন ও ছবি সংক্রান্ত নানা কথা।
২০ বছর বয়সে মুম্বইয়ে গিয়েছিলেন। ফিরে এসেছিলেন সংসারের টানে। বহু বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন। পরিচালনা করেছেন ‘নির্বাসিত’, ‘তারিখ’-এর মতো ছবি। তিনি পরিচালক ও অভিনেত্রী চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়। ফের মুম্বইয়ে ডাক পেয়েছেন। তা-ও আবার করণ জোহর পরিচালিত ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’ ছবির জন্য। নায়ক রণবীর সিং ও নায়িকা আলিয়া ভাট। রয়েছেন ধর্মেন্দ্রর মতো তারকাও। ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ ছবিটি পরিচালনা করার পর দীর্ঘ ৫ বছর আর কোনও ছবি পরিচালনা করেননি করণ (নেটফ্লিক্স-এর জন্য ‘লাস্ট স্টোরিজ়’ ও ‘গোস্ট স্টোরিজ়’-এ একটি করে শর্ট পরিচালনা করেছেন)। সুতরাং, পরিচালক হিসেবে করণেরও কামব্যাক ছবি ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’। সবটা মিলিয়ে দারুণ এক্সাইটেড চূর্ণী। সম্প্রতি ছবির প্রথম শিডিউলের কাজ সেরে কলকাতায় ফিরেছেন। TV9 বাংলাকে এক্সক্লুসিভলি জানালেন জীবন ও ছবি সংক্রান্ত নানা কথা।
প্রশ্ন: হিন্দি সিনেমায় প্রথম কাজের সুযোগ। তা-ও আবার করণ জোহরের ছবিতে। যখন জানতে পারলেন প্রথম রিঅ্যাকশন কী ছিল? দারুণ লেগেছিল খবরটা পেয়ে। সত্যি বলতে খুবই আপ্লুত ও খুশি হয়েছিলাম।
প্রশ্ন: ২০ বছর বয়সে মুম্বইয়ে গিয়েছিলেন। তারপর বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিতে চলে এসেছিলেন কেন? তখন কৌশিকের কাজ ছিল কলকাতাতে। আমি মুম্বইয়ে, ও কলকাতায়—একটা অদ্ভুত পরিস্থিতি। সেটার জন্যই আমি চলে আসি। তখন আমাকে সকলেই বারণ করেছিলেন চলে আসতে। অনেক কাজ হাতে ছিল। কিন্তু একটা পরিবারকে চালনা করতে গেলে একসঙ্গে থাকা দরকার। দু’জন দু’শহরে থাকলে পরিবার রাখার কোনও মানে হয় না। সেই জন্যেই চলে এসেছিলাম।
প্রশ্ন: এর জন্য আফসোস হয় না? যখন কৌশিকের উপর রাগ হয়, আফসোস হয়, তখন বলে দিই… (হাসি)।
প্রশ্ন: আপনার স্বামী পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ও আপনার কথা খুব বলেন। বলেন, কীভাবে আপনি প্রত্যেকটি কাজে পাশে থাকেন… (হাসি) জানি তো, কৌশিক বলে আমি ওঁকে খুব সাহায্য করি। সেটা আমারও ভাল লাগে।
প্রশ্ন: করণের ছবিতে কাজ—এ ব্যাপারে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় কী বলছেন? ওঁ খুবই গর্বিত। ওঁর খুবই ভাল লেগেছে বিষয়টা।
প্রশ্ন: ছবিতে আপনার চরিত্রটা নিয়ে কি একটু বলা যায়? না, সেটা নিয়ে কিন্তু আমাদের একেবারেই কথা বলা বারণ। কিছুই বলতে পারব না। তবে খুব ভাল একটা টিমের সঙ্গে কাজ করছি। করণের সঙ্গে কাজ করছি। সেটাই একটা দারুণ ব্যাপার বলতে পারেন।
প্রশ্ন: এই অফার আপনার কাছে কীভাবে এল? করণের অফিস থেকে একজন আমায় ফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, একটা প্যাসেজ পাঠাচ্ছেন। সেটা যেন একটু পড়ে রেকর্ড করে পাঠিয়ে দিই। সে সময় বাড়ি শিফ্ট করছিলাম বলে সময় পাচ্ছিলাম না এক্কেবারে। প্রায় প্রতিদিনই করণের অফিস থেকে ফোন আসত। বারবার বলতেন, ‘একটা রোলের জন্য লাগবে, প্লিজ দেখুন, প্লিজ দেখুন।’ আরও একটা মজার ব্যাপার আছে, জানেন…
প্রশ্ন: সেটা কীরকম? ওঁরা বলেন, “আপনাকে একটা লুক রেফারেন্সও পাঠাচ্ছি। আপনার চরিত্রের এরকম লুক হলে ভাল হয়।” আমি সেই ছবিটা খুলে দেখি। জানেন, ওঁরা আমারই একটা লুক পাঠিয়েছিল। সেটা দেখে আমার তো খুবই হাসি পায়। বেশ মজার ব্যাপার সেটা। বললাম, “আপনারা তো আমাকে আমারই ছবি পাঠিয়েছেন।” তখন আমাকে বললেন, “আপনি প্লিজ প্যাসেজটা পড়ে পাঠান।” ঘর শিফ্টিংয়ের মধ্যে কোনও মতে রেকর্ড করে পাঠাই। ওঁদের এটাও বলি, “দেখুন খুবই রাফ একটা খসড়া পাঠিয়েছি। আমাকে আরও ৪-৫দিন সময় দিন। আরও ভাল করে রেকর্ড করে পাঠাব।”
প্রশ্ন: ৪-৫ দিন সময় দিয়েছিল? না, তার আর প্রয়োজন হয়নি। সে দিনই সন্ধ্যায় মুম্বই থেকে ফোন আসে আমার কাছে। ফোনের ওপার থেকে বলা হয় আমি যেন আমার ডেটস আটকে রাখি। করণ আমার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
প্রশ্ন: আপনি তো নিজে একজন পরিচালক। করণ জোহরও একজন পরিচালক। পরিচালক হিসেবে করণ জোহরকে কীরকম মনে হয় আপনার? এই এক্সপিরিয়েন্সটার জন্যই তো অপেক্ষা করে ছিলাম। ওঁর সঙ্গে কাজ করব। ওঁর পরিচালনা সামনে থেকে দেখব। আগে তো মুম্বইয়ের কোনও ছবিতে আমি কাজ করিনি। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে একটা নতুন অভিজ্ঞতা হল।
প্রশ্ন: তা কী দেখলেন? দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। করণের পরিচালনা খুব কাছ থেকে দেখলাম। প্রত্যেকটা বিষয়ে ওঁর খুব নজর। এক দণ্ড নিজে বসে থাকেন না। বারবার উঠে এসে আমাদের বলে যান কী করতে হবে। অনেক সময় অভিনয় করেও দেখান করণ।
প্রশ্ন: কাজ করার স্বাধীনতা কতখানি পেলেন? অভিনেতা হিসেবে অনেক স্বাধীনতা পেয়েছি। করণ ওঁর অভিনেতাদের ইমপ্রোভাইজ় করতে দিতে বিশ্বাসী। একেবারেই গুরুগম্ভীর মানুষ নন। আমরা খুবই মজা করে কাজটা করেছি। তবে কাজের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস করণ। ওঁর নেতৃত্বে সকলেই মন দিয়ে কাজ করেছে।
প্রশ্ন: আলিয়া, রণবীর ওঁরাও তো আছেন ছবিতে… কেমন দেখলেন ওঁদের? সকলেই খুব উষ্ণ। সকলেরই কথাবার্তা খুব সুন্দর। কাজ করার সময়ও কোনও অসুবিধে হয়নি। সবচেয়ে বড় বিষয়, প্রত্যেকেই একে-অপরকে প্রশংসা করেন।
প্রশ্ন: রণবীরের সঙ্গে সহ-অভিনেতাদের চট করে বন্ধুত্ব হয়ে যায় শুনেছি… রণবীর আলাদা করে আমার প্রশংসা করেছেন। আমার অভিনয়ের একটা বিশেষ জায়গা ছিল। সেটা নিয়ে পরদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে বাহবা দিয়ে যান। খালি বলেন, “তুমি কী ভাল করেছ?” সেটা আবার আমাকে অভিনয় করে দেখালেনও। বলেন, “এটাই তো করা উচিত। একটা স্ক্রিপ্ট পেয়ে নিজের মতোই তো করা উচিত।”
প্রশ্ন: আলিয়াও তাই… আলিয়াও খুবই ওয়ার্ম।
প্রশ্ন: ধর্মেন্দ্রও রয়েছেন ছবিতে… আমার তো সৌভাগ্য ওঁর সঙ্গে কাজ করলাম। কী যে মাটির মানুষ কী বলব। আমার হাত ধরে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। দু’টো হাতের মধ্যে আমার হাত মুঠো করে ধরে বলেন, “বেঙ্গলি আই”। আমাকে দেখলেই বলেছেন, বেঙ্গলি আই! বাঙালিদের খুব শ্রদ্ধা করেন ধর্মেন্দ্রজি। ওঁর পরিচিত বাঙালিদের কথা বারবার বলছিলেন।
প্রশ্ন: আপনার জীবনে তো এখন অনেক পরিবর্তন আসছে… ছেলেও তো চলে গেছে বিদেশ? সত্যি বলতে জীবনে অনেক পরিবর্তন আসছে। এক দিকে, কাজের ক্ষেত্রে নতুন অভিজ্ঞতা। অন্য দিকে, আমার ছেলেটা (উজান গঙ্গোপাধ্যায়) দূরে চলে গেল। অক্সফোর্ডে পড়তে গেল। ভাল খবরের পাশাপাশি আমাদের খুব মন খারাপ। এখন উজানের ঘরে বসেই লেখাপড়া করছি।
প্রশ্ন: আর আপনার ছবি? পরিচালনার কথা কি কিছু ভেবেছেন? আসলে অনেকদিন ধরেই মেডিক্যাল ইমার্জেন্সির মধ্যে দিয়ে চলছি আমি। মাকে হারালাম। আমার বাবাও খুবই অসুস্থ। সেই কারণে নিজের লেখা ও কাজে মন দিতে পারছি না।
প্রশ্ন: করণের ছবিতে অভিনয় করছেন এখন। রাস্তা তো আবার আগের মতোই খুলে গেল। অনেক কাজের অফার আসতে পারে মুম্বই থেকে… আসতেই পারে। না-ও আসতে পারে। আমি সেরকম ভেবে কাজটা করছি না। কাজটা এসেছে বলে করছি। তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। আমার ছেলে উজান এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। কৌশিকও এখন অনেক ইন্ডিপেন্ডেন্ট। অনেক ম্যাচিওর। এখন যদি এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়, আমাকে বারবার বাইরে গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে, আগেরবারের মতো শিফ্ট করে যাব না। কিন্তু বারবার গিয়ে কাজ করতে পারব।
প্রশ্ন: বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক কাজ করলেন আপনি। মুম্বইয়ের সঙ্গে কী পার্থক্য লক্ষ্য করছেন? মুম্বইয়ে অনেক বড় স্কেলে কাজ হয়। বাংলায় অত বড় স্কেলে কাজ করতে পারি না আমরা। আমাদের একটা সিন অনেক তাড়াতাড়ি শেষ করতে হয়। ওখানে সেই তাড়াটা নেই। ধীরেসুস্থে করা হয়। এটা মুম্বইয়ে আগেও লক্ষ্য করেছি আমি। এখনও আছে। ছবির ক্ষেত্রে তো আছেই। করণের ক্ষেত্রেও দেখলাম। মনের মতো সিন না পাওয়া পর্যন্ত রিটেক নিতেই থাকেন তাঁরা।
‘শূন্য এ বুকে’, ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’, ‘শব্দ’, ‘হামি’র মতো বাংলা ছবিতে কাজ করেছেন চূর্ণী। পরিচালনা করেছেন ‘নির্বাসিত’, ‘তারিখ’-এর মতো ছবিও। অল্প বয়সে হিন্দি টেলিভিশনে কাজ করেছিলেন।
গ্র্যাফিক্স: অভিজিৎ বিশ্বাস