Badam Kaku Fraud Case: ‘বাদামকাকু’র কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা পায় যাত্রাপাড়া, পাল্টা বোমা ফাটালেন ভুবন বাদ্যকারও

Sneha Sengupta |

Dec 18, 2023 | 10:00 AM

Bhuvan Badyakar-Jatra: করোনা-পরবর্তী সময়ে (২০২২ সালে) যাত্রার পরিস্থিতি আরও ভাল করার জন্য, ফের দর্শক টানার জন্য ভুবন বাদ্যকরের কাছে যায় যাত্রায় অভিনয় করার প্রস্তাব। মাটির মানুষ ভুবন সেই ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন এবং নাম লিখিয়েছিলেন যাত্রাপালায়। এ বছরও যাত্রাপাড়ায় তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের সামাজিক পালা। কিন্তু সেই পালাগুলিতে ভুবন নেই। তিনি থাকবেনও না কোনওদিনও। খুব যন্ত্রণা থেকে কথাটা TV9 বাংলাকে জানিয়েছেন ভুবন।

Badam Kaku Fraud Case: বাদামকাকুর কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা পায় যাত্রাপাড়া, পাল্টা বোমা ফাটালেন ভুবন বাদ্যকারও
যাত্রা পাড়ায় গিয়ে ঠিক কী করেছিলেন ভুবন?

Follow Us

২০২১ সালের ইন্টারনেট সেনসেশন ছিলেন বীরভূম জেলার বাদাম বিক্রেতা ভুবন বাদ্যকোর। একদিন কাঁচা বাদাম বিক্রি করতে-করতে নিজস্ব ছন্দে, নিজস্ব কথায় গান গাইছিলেন ভুবন। এক ব্যক্তি সেই গান রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দেন। এবং রাতারাতি ‘ভাইরাল’ হয়ে যান ভুবন বাদ্যকার। নেটমাধ্যমের দেওয়া ‘বাদাম কাকু’ নামেই খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি। কেবল বাংলা নয়, বাংলার গণ্ডি টপকে দেশে এবং দেশের সীমান্ত পেরিয়ে বিদেশেও সেনসেশন হয়ে উঠেছেন ভুবন বাদ্যকার। সাধারণ মানুষ তো বটেই, সেই গানের সঙ্গে তৈরি হওয়ার ট্রেন্ডিং ডান্স স্টেপে নেচে সামাজিক মাধ্যমে রিলস তৈরি করেছিলেন তাবড়-তাবড় তারকা। শুরু হয় ‘বাদাম কাকু’কে নিয়ে টানাটানি। একের পর-এক গানের রেকর্ডিং, প্রাইভেট পার্টিতে আমন্ত্রণ, নানা সমাবেশে গান গাইতে শুরু করে গলায় কণ্ঠিধারী, কপালে তিলক কাটা ‘শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত’ ভুবন।

সেই একই ভাবে অভিনয়েরও সুযোগ আসে সেনসেশনাল ভুবনের কাছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে (২০২২ সালে) যাত্রার পরিস্থিতি আরও ভাল করার জন্য এবং ফের দর্শক টানার জন্য ভুবন বাদ্যকারের কাছে যায় যাত্রায় অভিনয় করার প্রস্তাব। সেই ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন তিনি এবং নাম লিখিয়েছিলেন যাত্রাপালায়। এ বছরও যাত্রাপাড়ায় তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের পালা। কিন্তু সেই পালাগুলিতে ভুবন নেই। কেন নেই, তা খতিয়ে দেখে TV9 বাংলা। এবং চমকে দেওয়ার মতো তথ্য সামনে আসে।

যাত্রা পালায় অভিনয় করতে গিয়ে নাকি প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন ভুবন বাদ্যকার। তেমনটাই TV9 বাংলার কাছে দাবি করেছেন ভাইরাল ‘বাদাম কাকু’। তিনি বলছেন, “আমি ‘শ্রী দুর্গা অপেরা’র সঙ্গে অভিনয় করি ২০২২ সালে। সেই পালার নাম ছিল ‘খোকাবাবুর খেলাঘর’। গ্রামেগঞ্জে বেশ কয়েকবার সেই পালাতেই অভিনয় করেছিলাম।” এরপরই তাঁকে দাবি করতে শোনা যায়, “খুব নোংরা জায়গা যাত্রার জগৎ। জানেন, আমাকে ২ লাখ টাকা দেবেন এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ‘শ্রী দুর্গা অপেরা’র মালিক বাপি হাজরা?”

ভুবনের দাবি, সেই টাকা পুরোটা তিনি পাননি আজও। এখনও নাকি তিনি ৫০ হাজার টাকা পান বাপি হাজরার কাছে পান। ‘বাদাম কাকু’র অভিযোগ, “আজ দেব, কাল দেব বলে দেয়নি। আমিও হাল ছেড়ে দিয়েছি আর ও পথে হাঁটব না ঠিক করেছি।” এই যাত্রা কোম্পানি ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর নাকি আরও অনেক অপেরাতে অভিনয়ের ডাক পেয়েছিলেন ভুবন। তবে তিনি সেগুলোর একটিতেও অংশ নিতে চাইছেন না ‘মনের কষ্টে’। বলেছেন, “আমি আর যাত্রা করিনি। যাত্রায় কোনও মানসম্মান নাই। বিশ্রী জায়গা।”

ভুবনকে ২০২২-এ ওই যাত্রায় অভিনয় করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ‘শ্রী দুর্গা অপেরা’র মালিক বাপি হাজরা । ‘বাদাম কাকু’র অভিযোগ শোনার পর TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় ‘শ্রী দুর্গা অপেরা’র সঙ্গে। এই মুহূর্তে সেই যাত্রা কোম্পানির মালিকের পথ থেকে সরে এসেছেন বাপি হাজরা। এর কারণও নাকি ‘বাদাম কাকু’ই, অভিযোগ বাপির। তিনি বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন ভুবন বাদ্যকারের নামে। বলেছেন, “ভুবন বাদ্যকারকে দিয়ে আমার কোম্পানির যাত্রা পালায় ‘কাঁচা বাদাম’ গানটা গাইয়ে ছিলাম। কিন্তু এরপর আদালতের স্থগিতাদেশ জারি হয়ে, যার জেরে সেই গান প্রকাশ্যে গাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তাই সেই গান তাঁকে দিয়ে আর গাওয়ানো হয়নি।” এরপরই একপ্রকার বোমা ফাটিয়েছেন বাপি, “তবে তিনি আমার বেশ কিছু ক্ষতি করে দিয়ে গিয়েছেন। যাত্রার শো-এ আসেননি। খুব লোকসান হয়েছে। উনি কি টাকা পাবেন? উল্টে আমিই তো ভুবনবাবুর কাছে ৩ লাখ টাকা পাই, জানেন?  বড়জোর ২০-২২ হাজার টাকা। তার চেয়ে বেশি কখনওই নয়। তিনি যদি দাবি করে থাকেন, আমি টাকা দিইনি, তা হবে সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। তাঁকে আসতে বলুন আমার কাছে। আমি তারপর বুঝে নেব। হিসেব তখনই হবে।”

বাপি হাজরা আরও দাবি করেছেন, “এই ‘বাদাম কাকু’র জন্য আজ আমার এই অবস্থা হয়েছে। কোম্পানির মালিক আমি হলেও, মালিকানা ছেড়েছি এই ভুবন লোকটার জন্যই। আমাকে একেবারে শেষ করে দিয়েছে। কথা দিয়ে শো করতে আসেনি আমার। লাখ-লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। যাত্রায় একটা শো বাতিল হওয়া মানে কী জানেন! তাই বলছি, প্রতারণা হয়েছে এই দাবি করার আগে আমার সামনে এসে দাঁড়াতে বলুন ‘বাদাম কাকু’কে।” পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেছেন আর একটা কথাও। বাপিবাবুর বক্তব্য সোজা, “ভুবনবাবু নিজে সরল হতে পারেন, কিন্তু তাঁর চেলাচামুন্ডারা ভীষণ খারাপ লোক… তাঁরা ওস্তাদিগুলো করে।”

‘শ্রী দুর্গা অপেরা’ যাত্রা কোম্পানির মালিক বাপি হাজরার এই দাবি শোনার পর TV9 বাংলা ফের যোগাযোগ করে ভুবন বাদ্যকারের সঙ্গে। তিনি কিন্তু নিজের কথা থেকে এক চুলও সরেননি। ঈশ্বরের নামে শপথ খেয়েছেন উল্টো এবং বলেছেন, “আমি কৃষ্ণ ভক্ত। আমি যাব বাপিদার সামনে। গিয়ে দাঁড়াব। সঙ্গে আমার কৃষ্ণকে বুকে করে নিয়ে যাব। তাঁকে কৃষ্ণকে ছুঁয়ে কথাগুলো বলতে বলব। আমাকে শোগুলোর টাকা দেননি। গাড়ি ভাড়াও দেননি। আমি যাব কীভাবে শো করতে। সেই জন্যই শো ফেল করেছি। তার উপর আমি ৫০ হাজার টাকা পাই।”

এ দিকে, দুই দিকের ঝামেলা নিয়ে যাত্রাপাড়ার আর্টিস্টদের সংগঠন ‘সংগ্রামী যাত্রা প্রহরী’ কী বলছে। TV9 বাংলার প্রতিনিধি কথা বলেছে সেই সংগঠনের সঙ্গেও। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক অনুভব দত্ত বলেছেন, “‘শ্রী দুর্গা অপেরা’র মালিক ঠিকঠাক লোক নন। তিনি আরও অনেকের টাকা মেরেছেন। কিন্তু ভুবনবাবুও যাত্রার লোক নন। তিনি একটা ‘কাঁচা বাদাম’ গেয়েছেন বলে এত মাতামাতি। ৫ মিনিটও অভিনয় করার ক্ষমতা নেই তাঁরও। ভাইরাল না হলে কি ডাক পেতেন এ পাড়ায়, বলুন!”

Next Article