রানু মণ্ডল
রানাঘাটের স্টেশন চত্ত্বরে তাঁর বেড়ে ওঠা। স্টেশনে তো কত মানুষই না থাকে। কিন্তু সবাইকে লক্ষ্য করা কি সম্ভব হয়? না, তা আমার-আপনার কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। কিন্তু তাঁর গান শুনে তাঁকে লক্ষ্য করেছিলেন এক যুবক। আজ থেকে প্রায় চার বছর আগের ঘটনা। কথা হচ্ছে দিনে-দুপুরে ‘ভাইরাল’ হয়ে ওঠা সেই রানু মণ্ডলের। রানাঘাটের স্টেশন থেকে সোজা হিমেশ রেশমিয়ার ঝাঁ চকচকে মুম্বইয়ের স্টুডিও। তিনি নাকি লতা কন্ঠী।
ফেসবুকে টাইমলাইনের প্রত্যেকটা মিম থেকে টিকটকের গান। সদ্য তৈরি হওয়া ইউটিউবার, ব্লগারদের কাছে আজ তিনি মহা মূল্যবান রত্ন। কারণ তাঁকে একবার ক্যামেরায় ধরতে পারলেই তো হাজারো লাইকের বন্যা, লক্ষ-লক্ষ শেয়ার আর ভিউজ়… সেকথা আর নতুন করে নাই-ই বা বললাম। কিন্তু এত লাইক, এত হাজার শেয়ারের ভিড়ে রানু মণ্ডল কেমন আছেন? ভাইরাল হয়ে তিনি কতটা খুশি? আদৌ খুশি তো? না, অনেকেই বলতে পারেন উনি নিজেই তো অনেক জায়গায় বলেছেন, “আমি তো সেলিব্রিটি।” তাহলে তো এই প্রশ্নের আর কোনও দরকার নেই।
বেশ অনেকদিন পর আবার কলকাতায় এসেছিলেন রানুদি। মাঝে করোনা, লকডাউন হয়ে অনেকটা সময় পার হয়ে গিয়েছে। করোনা আর লকডাউনের জেরে বিনোদন-জগতের অনেকের কপালেই এখন ভাঁজ। এই কয়েক বছরে মানুষের অবস্থা অনেকটা আপনি বাঁচলে বাপের নাম। তাই এই কয়েক বছরে স্বভাবতই ভাইরাল রানুদির মার্কেট ভ্যালু কিছুটা হলেও কমেছে। কিন্তু আবার স্বাভাবিক হচ্ছে অবস্থা, সুতরাং যে-ই না খবর পাওয়া, শহরে ভাইরাল রানু মণ্ডল আসছে, সেই সুযোগ কেউ কি হাতছাড়া করে? না, তাহলে কত লক্ষ্য ভিউজ় মিস হবে বলুন তো। সদ্য ‘কাঁচা বাদাম’ ফিভারে আচ্ছন্ন শহরবাসী। রানুদিকে দিয়ে সেই গানটাও যে গাওয়াতে হবে।
দক্ষিণ কলকাতার এক রেকর্ডিং স্টুডিও নিজের বায়োপিকের গান রেকর্ড করতে এসেছেন রানুদি। তবে রেকর্ডিং স্টুডিওয়ে ঢুকতেই বোঝা গেল হাওয়া একটু অন্যরকম। স্টুডিওর বাইরের লাল চেয়ারটায় রাখা রানু মণ্ডলের অল্প ছিঁড়ে যাওয়া ব্যাগ। চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে রানু মণ্ডল। চুল উসকো-খুসকো, অগোছালো। পরনে সাধারণ ছাপা শাড়ি। উনি বাড়ি ফিরে যেতে চান। ভাল লাগছে না। একটাই কথা মুখে বারবার। আর চারিদিকে ভিড় করে রয়েছে ক্যামেরা, লাইট, বুম। “এই রানুদি, একটু কাঁচা বাদাম গান”… কিংবা “এমন কিছু একটা বলুন, যা বললেই হিট”। কিন্তু হাজারো আলোর ভিড়ে রানুদি যেন অন্য কিছু খুঁজছেন। শান্তি খুঁজছেন। লুকোনোর জায়গা খুঁজছেন।
না, রানাঘাট স্টেশনের রানু মণ্ডলের খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। উল্টে বিড়ম্বনা বেড়েছে। এক কথায় বলা যেতে পারে খ্যাতির বিড়ম্বনা। এই প্রশ্নটাই করা হল ওনাকে: “মাঝে মাঝে মনে হয় কি ভাইরাল না হলেই ভাল হতো?” খুব ধীর গলায় তাঁর উত্তর, “হ্যাঁ, মাঝে মাঝে মনে হয়। কিন্তু এখন আর কী করা যাবে। ভাইরাল হয়ে গিয়েছি। সবাই যা বলবে, করতে হবে। আমার কিছু ভাল লাগে না। এই কয়েক বছরে লকডাউনে অনেকেই আসত, খাবার দিয়ে যেত। কখনও পচা বিরিয়ানিও থাকত তার মধ্যে।” তিনি আরও যোগ করেন,”আমি আমার বাড়ি ফিরে যেতে চাই। আমার ভাল লাগছে না।” হিমেশ রেশমিয়ার স্টুডিয়োয় যাঁকে অতিথি আপ্যায়ণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যাঁর উপর বায়োপিক তৈরি হচ্ছে, এই লাইমলাইট আদৌ কি তিনি চেয়েছিলেন?