Suicide Prevention: শিল্পী-কলাকুশলীদের কপিক্যাট সুইসাইড নিয়ে উদ্যোগী মহিলা কমিশন, কী বললেন চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়?
Copycat Suicide: লীনা গঙ্গোপাধ্যায় এক্সক্লুসিভভাবে কী জানালেন TV9 বাংলাকে? এই বিষয়ে আগামী ৯ জুন একটি বৈঠকও হবে পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের তত্ত্বাবধানে।
১৫ মে, ২০২২—অভিনেত্রী পল্লবীর দের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় গরফা থেকে।
২৫ মে, ২০২২—মডেল বিদিশা দে মজুমদারের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় নাগেরবাজার থেকে।
২৭ মে, ২০২২—পাটুলিতে উদ্ধার হয় মঞ্জুষা নিয়োগী নামের আরও এক মডেলের ঝুলন্ত দেহ।
২৮ মে, ২০২২—কসবার বেদিয়াডাঙা সেকেন্ড লেন থেকে উদ্ধার হয় সরস্বতী দাসের দেহ।
শুধু উপরের ঘটনাগুলোই নয়। অতীতেও বিনোদন জগতের আত্মহত্যার ঘটনা বারেবারেই নাড়া দিয়েছে ভীষণরকম। তারপর গত মাসের এই চারটি মৃত্যুর ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা রাজ্যকে। কেন এইসব মৃ্ত্যু, কে বা কী আছে নেপথ্য… তা নিয়ে কাটাছেঁড়া কম হয়নি। এরপর কী? কেউ কি কোনও ধরনের পদক্ষেপ করার কথা ভাবছেন? উত্তর হল: হ্যাঁ। ভেবেছেন। সেই ভাবনাকে স্বাগতও জানাচ্ছেন অনেকে। পদক্ষেপ করতে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়রা। তাঁর পরিকল্পনার কথা লীনা এক্সক্লুসিভভাবে জানিয়েছেন TV9 বাংলাকে। এই বিষয়ে আগামী ৯ জুন একটি বৈঠকও হবে পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের তত্ত্বাবধানে। সেই আলোচনায় উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে টলিউড ইন্ডাস্ট্রির প্রযোজক গিল্ড, আর্টিস্ট ফোরাম ও ফেডারেশনকে।
কী সেই পদক্ষেপ?
TV9 বাংলাকে লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, “৩-৪জন মহিলা মারা গেলেন এর মধ্যে। ডাক্তারদের সঙ্গে কথোপকথন চলছিল। তাঁরাই বলছিলেন এই ধরনের ঘটনার প্রবণতা আছে (মনোবিজ্ঞানে এই ধরনের ঘটনকে ‘কপিক্যাট সুইসাইড’ বলে অভিহিত করা হয়)। আবারও ঘটতে পারে এই ধরনের ঘটনা। কেবল বিনোদন জগৎ নয়, অন্যান্য সেক্টরেও ঘটে এমন ধরনের ঘটনা। অনেক সময় সেই ঘটনাগুলো সামনে আসে না। যেহেতু গ্ল্যামার দুনিয়া নিয়ে মানুষের আগ্রহ একটু বেশি, ফলে জানাজানিও বেশি মাত্রায় হয়।”
লীনা আর যা বলেছেন, তা তাঁর বয়ানেই প্রকাশ করা হল:
“আমাদের মনে হয়েছে এই বিষয়টা নিয়ে কিছু একটা করার দরকার। আমরা তিনটে ফোরামকেই চিঠি দিয়েছি—প্রোডিউসার্স ফোরাম, আর্টিস্ট ফোরাম ও ফেডারেশন। এখনও পর্যন্ত যা কথা হয়েছে, চ্যানেল এবং এই সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা আসবেন বলেছেন। ডাক্তারবাবুদের আমরা অনুরোধ করেছি, ২৪ ঘণ্টার জন্য একটি হেল্পলাইন যদি পাওয়া যায়। যদি কারও কোনও ধরনের ক্রাইসিস তৈরি হয়, তখন সেই চিকিৎসকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।
কোনও শিল্পী বা কলাকুশলীদের কেউই যাতে ভুল সিদ্ধান্ত না নেন, সেই দিকেই আমাদের লক্ষ্য থাকবে। আমরা চাই না কারও জীবনহানি হোক। মানুষের এখন অনেক স্ট্রেস। সেই স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি আমরা। বহু ছেলেমেয়ে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে হিরো-হিরোইন হতে আসে। মিথ্যে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে তারা। সবসময় তো তারা সেই জায়গা নিতে পারে না। সকলের সেই যোগ্যতাও থাকে না। সবক্ষেত্রে তো সেটা সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতিতে সেই শিল্পীকে নিয়ে ক্যামেরার নেপথ্যে কোনও কাজ দেওয়া সম্ভব, কিংবা যারা সত্যিই অভিনয় করতে চায়, তাদের কি প্রশিক্ষণ দিয়ে একটু স্ট্রাকচার্ড ভাবে অডিশন করানো যায়। ফেডারেশনের কাছেও এই বার্তাই দিতে চাই—অভিনয় না করে অন্য কাজও করতে পারে ছেলেমেয়েরা। আর্টিস্ট ফোরামকে বলার বক্তব্য এটাই—ফ্লোরে-ফ্লোরে গিয়ে সচেতনতা তৈরি করা। সেই সময়ের জন্য যাতে তাঁরা ফ্লোর ছেড়ে চলে যান। তখনই কথা বলা প্রয়োজন। সেশনগুলোতে ডাক্তারবাবুরাও থাকবেন। প্রযোজক ও সিরিয়র আর্টিস্টদের কাছেও রিকোয়েস্ট—তাঁরা যদি সহযোগিতা করেন আমাদের সঙ্গে। তা হলেই লক্ষ্যপূরণ হবে। পশ্চিমবঙ্গের মহিলা কমিশন এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবে ২৪ ঘণ্টাই। প্রতিনিধিরা থাকবেন। কমিশনের হেল্পলাইন নম্বর আছে, যেখানে প্রচুর ফোন আসে। সেই ফোন নম্বরটা তো আমারই নম্বর। সারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে ফোন আসে আমার কাছে। আত্মহত্যা করার সেই মুহূর্তটা কাটিয়ে দিলেই অনেকটা বিপদ কেটে যায়। আরও একজনের নাম এখানে উল্লেখ করতে চাই। তিনি অভিনেতা বাদশা মৈত্র। তিনি আমাদের খুবই সাহায্য করছেন। আমরা চিন্তাভাবনা করছিলাম। দেখি বাদশাও করছেন। বাদশাই ফোন করে জিজ্ঞেস করেন, কমিশনের তরফ থেকে আমরা কিছু করছি কি না। দেখি আমাদের চিন্তাভাবনা মিলে যাচ্ছে। উনিই আমাদের বলেন, ডাক্তারের দিকটা দেখবেন। কোন ডাক্তার আনা হবে, কারা থাকবেন, সবটাই বাদশা দেখছেন।”
পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের এই উদ্যোগ নিয়ে TV9 বাংলাকে কী বলেছেন মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম?
রামের বক্তব্য, “আমি জানি। শুনেছি লীনা গঙ্গোপাধ্যায় এই পদক্ষেপ করছেন। খুবই প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। আমার মনে হয় এর দু’টো দিক আছে। একটি হল—যাদের সত্যি সাহায্য দরকার, দিনের শেষে তারা উপকৃত হবেন। দু’নম্বর হল ইন্ডাস্ট্রি থেকেই স্বীকৃতি পাওয়ার ব্যাপার আছে। মানসিক বিষয় নিয়ে সাহায্য চাওয়া লজ্জার ব্যাপার একেবারেই নয়। ‘আমার মানসিক সমস্যা হয়েছে’, এটা বলতেই অনেকে কুণ্ঠাবোধ করেন। এই পদক্ষেপ যদি সত্যিই করা হয়, অনেকে উপকৃতও হবেন।”