জুনের জীবনের বিরাট বড় ক্ষতি, প্রথম স্বামীর করেন ভীষণ অত্যাচার, তারপর যা ঘটে…

June Malia Secrets: জুন মালিয়ার প্রথম স্বামীকে চেনেন? এই ব্যক্তি দু'দণ্ড শান্তি দেননি অভিনেত্রীকে। তাঁকে ক্রমাগত কষ্টই দিয়েছিলেন। একটা সময় অতিষ্ট জুন সংসার ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। জানতেন নায়িকার জীবনের এই অজানা অধ্যায়ের কথা। কতভাবে অত্য়াচারিত ছিলেন জুন জানেন?

জুনের জীবনের বিরাট বড় ক্ষতি, প্রথম স্বামীর করেন ভীষণ অত্যাচার, তারপর যা ঘটে...
জুন মালিয়া।
Follow Us:
| Updated on: May 10, 2024 | 7:26 AM

২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার বিয়ে করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন সুন্দরী অভিনেত্রী এবং রাজনীতিক জুন মালিয়া। অনেক বছর সম্পর্কে থাকার পর প্রেমিক সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন এই সুন্দরী অভিনেত্রী। জুন বলেছিলেন, “আমার ছেলেমেয়েরা যতদিন বড় না হচ্ছে, নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে, নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে চিন্তাভাবনা করব না।” নিজেকে দেওয়া কথা রেখেছিলেন জুন। তাঁর দুই সন্তান শিবেন এবং শিবাঙ্গিনী বড় হওয়ার পরই দ্বিতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন জুন। তাঁর হাসি মুখের ছবি ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। অনুরাগীরা তাঁকে বাহবা দিলেন প্রাণ ভরে।

২০২১ সালে মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়া ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের অন্যতম তারকা প্রার্থী। তাঁর এখন ভীষণই ব্যস্ততা। একদিকে সিরিয়ালে অভিনয়, অন্যদিকে ভোট-ময়দানের প্রচারপর্ব–সবটা ঘিরে বিপুল ব্যস্ততায় জড়িয়ে অভিনেত্রী। কিন্তু জানেন কি, এই জুনের জীবনে একসময় থমকে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেই থমতে যাওয়া পরিস্থিতিতে তাঁকে ফেলেছিলেন জীবনের প্রথম প্রেম, তাঁর প্রথম স্বামীই। অনেক বছর আগে নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন জুন মালিয়া। এবং সেই সাক্ষাৎকারে এক্কেবারে আনকোড়া জুন ধরা পড়েছিলেন। গায়ক-অভিনেতা-পরিচালক অঞ্জন দত্তকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জুন জানিয়েছিলেন, সেলেব্রিটি জুনকে অনেকেই হয়তো চেনেন। কিন্তু ব্যক্তি জুন অধরা। সেই ‘অধরা’ জুন বলেছিলেন কিছু কথা।

কলকাতার নামকরা ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল মর্ডার্ন হাইতে পড়তেন জুন মালিয়া। সেই সময় তিনি ছিলেন জুন ডুবে। বাবা ছিলেন ব্যাঙ্কার। অসম্ভব রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে ছিলেন জুন। কোথাও যাওয়ার অনুমতি ছিল না তাঁর। বন্ধুদের বাড়িতেও যেতেন না। বন্ধুরাই আসত বাড়িতে। কোনও বন্ধুর বাড়িতে ডাক পড়লে বাড়ি থেকে তল্লাশি চালানোর মতো জিজ্ঞেস করা হত, সেই বন্ধুর দাদা কিংবা ভাই আছে কি না। পাছে মেয়ে পিছলে যায়। ফলে নিজের জগতেই ব্যস্ত ছিলেন জুন। নাচ নিয়ে মেতে থাকতেন। সে সময় নাবালিকা জুন হতে চেয়েছিলেন বড় নৃত্যশিল্পী।

এই খবরটিও পড়ুন

এ হেন জুন যখন হাই স্কুলে, তাঁর জীবনে ঝড় তোলেন এক যুবক। দেহরাদুনে মাসির বাড়িতে বেড়াতে গিয়েই মনটা ফসকে গেল তাঁর। সেখানকার নামকরা দুন স্কুলের পড়ুয়া সঞ্জীব মালিয়ার সঙ্গে আলাপ হয় জুনের। তাঁকে প্রথম দেখেই প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী। বলেছিলেন, “I was quite smitten by his charm” (তাঁকে দেখে আমি মুগ্ধ হই)। যদিও জুন পাত্তা পাননি। তাঁর মাথা ভর্তি তেল এবং দুটো বিনুনিওয়ালা চেহারায় খুব একটা মোহিত হননি সঞ্জীব। জুনের ফোন এলেও নাকি ধরতেন না তিনি।

বেশকিছু বছর পর কলকাতায় এলেন সঞ্জীব। সেই সময় জুন কলেজ পড়ুয়া। তাঁর ভোলও পাল্টে গিয়েছে ততদিনে। তাঁর তেল মাখা মাথায় বিনুনি নেই। চুলটুল ব্লো ড্রাই করা। হ্যাপেনিং ব্যাপার-স্যাপার! সেই জুনের সঙ্গে ফের দেখা সঞ্জীবের। সেই ভোল পাল্টানো জুনের প্রেমে পড়েন সঞ্জীব এবং সম্পর্ক তৈরি হয় তাঁদের। অতি অল্প বয়সে, ২০ বছরেই জুনের বিয়ে হয় তাঁর সঙ্গে।

(বাঁ দিক থেকে) দ্বিতীয় স্বামী সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুুন, ছেলেমেয়ে এবং সৌরভকে নিয়ে জুন

প্রেম করে বিয়ে। প্রথমে মানতে চায়নি জুনের পরিবার। কিন্তু সঞ্জীবের পরিবারিক স্বচ্ছলতা দেখে রাজি হন জুনের অভিভাবকেরা। ২২ বছর যেতে না-যেতেই জুন মা হলেন। জন্ম হল তাঁর পুত্র শিবেনের। তারপর কন্যা শিবাঙ্গিনীর। জীবনটা এক্কেবারে বাড়িকেন্দ্রিক হয়ে গেল জুনের। অভিনেত্রী বলেছিলেন, “যে বয়সে আমার বান্ধবীরা আনন্দ করছিল, আমি ডাইপার পাল্টাচ্ছিলাম এবং ফিডিং বোতল ধুচ্ছিলাম।”

জুন বলেছিলেন, তাঁর প্রথম স্বামী সঞ্জীব চাইতেনই না জুন কোনও কাজ করুক। তাঁকে ক্রমাগত পিছনের দিকে টেনে নিয়ে আসতেন প্রথম স্বামী। সেই সময় পরিচালক সুদেষ্ণা রায় জুনকে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। জুন অভিনয় করবেন, এই কথাটা শোনার পর তাঁর স্বামীর প্রতিক্রিয়া ছিল, “ও তুমি পারবে না।” আর এই ও তুমি পারবে না কথাটাই জুনকে আরও এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়া দিত। জুন বলেছিলেন, “আমার প্রথম স্বামীর ব্যাপারে বলছি বলে ভাববেন না সম্পর্ক নেই বলে নিন্দা করছি। ও আমাকে এক্কেবারে উপরে উঠতে দিতে চাইত না। আমার সাফল্য সহ্য করতে পারত না। অভিনয়ে সাড়া পেতে শুরু করেছিলাম বলে আমাকে নানাভাবে বাধা দিত। কিন্তু আমি থামিনি। একটা সময় বাবার কাছে চলে আসি।”

জুনের বাবার তখন ক্যানসার ধরা পড়েছে। মেয়েও সংসার জীবনে অসুখী। বাবার ইচ্ছাতেই মেয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়িতে। স্বামীর সঙ্গে তখনও বিয়েটা খাতায় কলমে টিকে ছিল। ছেলেমেয়ের দায়িত্বও বাবা নিতে চাননি। ফলে ছেলেমেয়ে শুরু থেকেই জেনেছেন মা-ই তাঁদের একমাত্র আশ্রয়। সেই থেকে জুনের সিঙ্গল মা হিসেবে যাত্রা শুরু। তার মধ্যে প্রেমও এসেছে নায়িকার জীবনে। সব সম্পর্কেরই একটা পরিণতি চেয়েছিলেন জুন। সাংসারিক জীবনে অসুখী হয়েও বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানে বিশ্বাস হারাননি তিনি। শেষে বিয়ে করলেন তাঁর দীর্ঘদিনের প্রেমিক সৌরভ চট্টোপাধ্যায়কে। এখন জীবনের অনেকখানি পথ পেরিয়ে এসেছেন ‘নীল নির্জন’ ছবির সাহসী জুন। তাঁর জীবনের নির্জনতা কাটানোর সঙ্গীও পেয়েছেন। যাঁর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেন ‘তিন ইয়ারি কথা’র লাস্যময়ী…