
গান নিয়েই জীবন কাটাবেন বলে বিয়ে করে সংসার ধর্ম পালন করেননি ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লা। তাঁর সাফ কথা, “গান নিয়েই তো থাকি। সেটাই আমার জীবন এবং সংসার। তাই আর আলাদা করে বিয়ে করে সংসারী হইনি।” হৈমন্তীর গল্ফ গ্রিনের বাড়িতে বিরাট সরস্বতী ঠাকুরের মূর্তি স্থাপিত। তাঁকে নিয়ে দিবারাত্রী যাপন করেন প্রবীণ গায়িকা। বিশ্ব সঙ্গীত দিবস এবং বিশ্ব যোগা দিবসে (২১ জুন) গান এবং যোগাকে মেলালেন হৈমন্তী। TV9 বাংলা ডিজিটালকে বললেন, “গান নিয়ে যিনি থাকবেন, তাঁর আর জীবনে কোনও যন্ত্রণা থাকবে না। গান হল উৎকৃষ্টমানের থেরাপি।”
সাইটিকার যন্ত্রণায় ভুগছেন হৈমন্তী। কোমর থেকে পা পর্যন্ত তীব্র যন্ত্রণায় ভোগেন তিনি। হাঁটতে গেলে কষ্ট হয়। বললেন, “বয়স হলে অনেককেই সাইটিকা নিয়ে ভুগতে হয়। আমাকেও যোগাভ্যাস করতে হয়। আমি নিয়মে থাকি। আর গান তো আছেই। গানই আমাকে সব যন্ত্রণা ভুলে যেতে সাহায্য করে।” আজ বিশ্ব সঙ্গীত দিবসে বার্তা দিয়েছেন হৈমন্তী। তাঁর পরিষ্কার মতামত, “আজ ওয়ার্ল্ড মিউজ়িক ডে এবং যোগা ডে দুটোই। একটাই কথা বলব, বেশি করে গান করুন। কারণ, গান করলে মন ভাল থাকে। সেটাও যোগারই অংশ।” তিনি বলতে চেয়েছেন, গান করলে হতাশা গ্রাস করতে পারে না। লোকের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল থাকে। পাঁচজন মানুষের মধ্যে গান জানা লোককে সহজেই আলাদা করা সম্ভব।
এ বছর সরস্বতী পুজোর সময় দেবী সরস্বতীর সঙ্গে তাঁর অম্লমধুর সম্পর্কের কথা ব্যক্ত করেছিলেন হৈমন্তী। কীভাবে অষ্টধাতুর সুন্দর সরস্বতীর মূর্তি তাঁর কাছে আসে, সেই গল্প তিনি করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, সরস্বতীর তাঁর বাড়িতে আসা একটা অধ্যায়। হৈমন্তীর বাড়িতে ছোট থেকে সরস্বতীর পুজো হত। মাটির সরস্বতী আসত। সারাবছর সেই মূর্তি বাড়িতে থাকত। পরের বছর জলে ভাসান হত। সেটাই ছিল প্রথা। এবার সরস্বতী পুজোর আগে পার্কস্ট্রিটের এক অ্যান্টিকের দোকান থেকে সরস্বতীর ধুলো মাখা অষ্টধাতুর বিগ্রহ দেখে মন কেমন করে ওঠে হৈমন্তীর। গায়িকা বলেছিলেন, “এক ছাত্র ছিলেন আমার সঙ্গে। তিনি চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘পিসি দেখো, এখানে কে বসে আছেন?’ সরস্বতীকে দেখে মনে হল, তাঁকে আমি বাড়ি নিয়ে যাই। জানেন, দোকানদার আমাকে মূর্তি বিক্রি করতে চাইছিলেন না। আমাকে হয়তো তাঁর পছন্দ হয়নি। তাঁর হয়তো মনে হয়েছিল, এই সরস্বতীর দাম আমি দিতে পারব না। কিছুতেই তিনি আমাকে দাম দিতে চাইছিলেন না। আমি মনমরা হয়ে বেরিয়ে আসি দোকান থেকে। তারপরই দোকানদার পিছন থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, ‘দিদি, আপনি গান করেন না! নিয়ে যান ওনাকে।’ তারপর পর ১০ হাজার টাকার বিনিময় আমার মেয়েটাকে (পড়ুন সরস্বতীর মূর্তি) বাড়ি নিয়ে আসি আমি।”
হৈমন্তীর সঙ্গে কেমন সম্পর্ক সরস্বতী ঠাকুরের?
সে এক বিচিত্র সম্পর্ক। ঠিক যেন দুই সইয়ের মতো। মান-অভিমানের পালা চলতে থাকে তাঁদের। গায়িকা বলেছিলেন, “গান ঠিক মতো না করতে পারলে আমি সরস্বতীর সঙ্গে ঝগড়া করি। ওকে চড়ও মারি। বলি, ‘কেন এমন করলি আমার সঙ্গে বল। কেন সুরে সুর লাগছে না।’ আবার ভাল গান গাইলে ওকেই আমি জড়িয়ে ধরি। এইভাবেই সরস্বতীর সঙ্গে আমার মেলবন্ধন ঘটিয়েছে সুর।”