এক ফোনে মা হয়েছিলেন অপরাজিতা আঢ্য, প্রথম মুখ খুললেন ৩৬ বছরের কন্যা

Aparajita Adhya Daughter: সদ্য নিজের মাতৃত্ব নিয়ে TV9 বাংলাকে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অপরাজিতা। তিনি যে গার্গীর 'মা', তা তিনি অকপট বলেছেন। এবং গার্গী সম্পর্কে তিনি TV9 বাংলার আগে কোথাও একটি কথাও বলেননি। শুক্রবার সেই গার্গী TV9 বাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং জানিয়েছেন, তাঁর ও অপরাজিতার মা-মেয়ের সম্পর্কের না-বলা কথাগুলো।

এক ফোনে মা হয়েছিলেন অপরাজিতা আঢ্য, প্রথম মুখ খুললেন ৩৬ বছরের কন্যা
মা-মেয়ে অপরাজিতা-গার্গী।
Follow Us:
| Updated on: Apr 01, 2024 | 8:50 PM

স্নেহা সেনগুপ্ত

২৬ বছরের দাম্পত্য জীবন বাঙালি অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্যর। তিনি বিয়ে করেছিলেন টলিপাড়ার এক টেকনিশিয়ান অতনু হাজরাকে। কিন্তু অপরাজিতা এবং অতনু কোনও সন্তানের জন্ম দেননি। বায়োলজিক্যালি তাঁরা ‘নিঃসন্তান’। তবে অপরাজিতার এক কন্যা সন্তান আছে। ৩৬ বছর বয়স সেই কন্যার। তাঁর নাম গার্গী রায়। গার্গী থাকেন অপরাজিতা এবং তাঁর স্বামী যে বাড়িতে থাকেন, সেই বেহালার বাড়িতেই। তা হলে কি এই সন্তানকে দত্তক নিয়েছিলেন অপরাজিতা-অতনু? TV9 বাংলার সঙ্গে সত্যি শেয়ার করে নিয়েছেন অপরাজিতার সেই মেয়ে।

সদ্য নিজের মাতৃত্ব নিয়ে TV9 বাংলাকে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অপরাজিতা। তিনি যে গার্গীর ‘মা’, তা তিনি অকপট বলেছেন। এবং গার্গী সম্পর্কে তিনি TV9 বাংলার আগে কোথাও একটি কথাও বলেননি। শুক্রবার সেই গার্গী TV9 বাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং জানিয়েছেন, তাঁর ও অপরাজিতার মা-মেয়ের সম্পর্কের না-বলা কথাগুলো।

গার্গীর তখন ১৬-১৭ বছর বয়স। হাওড়ায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। সেই বাবা-মা, যাঁরা গার্গীকে জন্ম দিয়েছেন। নিজের জন্মদাত্রী বাবা-মাকে ছেড়ে কেন অপরাজিতাকে নিজের মা এবং তাঁর স্বামী অতনুকে বাবার আসনে বসালেন গার্গী? ‘তারকা’-সন্তান গার্গী বলেন, “এটা ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল,  জানেন। আমার বয়স তখন ১৬-১৭। হঠাৎই মণিমা (অপরাজিতাকে ওই নামেই ডাকেন গার্গী)-কে টিভির পর্দায় দেখে আমার মনে হল, ইনিই আমার মা। অদ্ভুত একটা কানেক্ট। আমি তারপর ফোন নম্বর জোগাড় করে মণিমাকে ফোন করি। তিনি ফোনের ওপারে। আমি তাঁকে অবলীলায় বলে ফেলি, ‘তোমাকে আমি মা বলে ডাকব।’ তিনি আমার কথা শুনে খানিক অপ্রস্তুত হয়ে বলেন, ‘কী বলবে?’ আমি বলি, মা…”

মা-মেয়ে অপরাজিতা-গার্গী

গার্গী এক ব্যাঙ্কে কর্মরত। অপরাজিতা TV9 বাংলাকে আগেই বলেছেন, “আমার যদি নিজের জন্ম দেওয়া সন্তানও হত, তা হলেও সে কখনও গার্গী হতে পারত না।” গার্গী এই প্রতিবেদককে বলেছেন, “আমি আপনাদের প্রতিবেদন পড়েছিলাম। সেখানে মণিমা যা বলেছেন, তা আমি জানি। কিন্তু সত্যি বলতে গেলে, তিনি আমার মধ্যে থাকা এক সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। কীভাবে, বলছি সে কথা।” এরপর গার্গীর সংযোজন, “আসলে মণিমা নিজে খুবই ভাল সন্তান। তিনি সন্তান হওয়ার সমস্ত দায়িত্ব পালন করেন। আমি তো দেখেছি, আমার দিদা (অপরাজিতার মা)-র সমস্ত চাওয়াকে অক্ষরে-অক্ষরে মণিমা পালন করেছেন একজন আদর্শ সন্তান হয়ে। তাঁর মেয়ে হয়ে আমিও ওরকম সন্তান হতে চাই। এই জিনিসটা আমি মণিমার মধ্যে খুঁজে পেয়েছি। ভাল মা হতে গেলে আগে একজন ভাল সন্তান হতে হয়। সেটা মণিমা।”

সম্প্রতি নৈনিতালে বেড়াতে গিয়েছিলেন অপরাজিতা-অতনু-গার্গী। সেই সমস্ত ছবি সোশ্য়াল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন গার্গী। বলেছেন, “জানেন তো, আমাকে অনেকটা ওদের বাড়ির মতোই দেখতে হয়ে গিয়েছে। আমাকে দেখে মনে হয়, আমাকে মণিমাই জন্ম দিয়েছেন। কী অদ্ভুত না বিষয়টা। বলছি তো, এই বিষয়টা ঈশ্বরের তৈরি করে দেওয়া। সেই ছোট থেকে মণিমা আমাকে পালন করেছেন নিজের কন্যার মতো।”

হাওড়ার মেয়ে গার্গী। তাঁর নিজের জন্মদাত্রী পিতা-মাতা সম্পর্কে বললেন, “তাঁরা ভাল আছেন। কিন্তু আমি তাঁদের সঙ্গে থাকি না। আমি থাকি বেহালায়, মণিমার বাড়িতে। আজ থেকে না। সেই ২০ বছর ধরে। ওই বাড়িটাই এখন আমার ঠিকানা।” গার্গীর ৩৬ বছর বয়স। বিয়ের কোনও পরিকল্পনাই করেননি গার্গী। বলেছেন, “আমাকে মণিমা অনেকবারই বিয়ে করতে বলেন। কিন্তু জোর করেন না। আমারও ওদের ছেড়ে কোথাও থাকতে ইচ্ছা করে না।”

সিরিয়াল-সিনেমায় মায়ের চরিত্রেই অভিনয় করে দর্শকের মনে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছেন অপরাজিতা আঢ্য। ‘চিনি’র মিষ্টি হোক, ‘একান্নবর্তী’র মালিনী, ‘লক্ষ্মীকাকিমা সুপারস্টার’-এর লক্ষ্মী কিংবা ‘জল থৈ থৈ ভালবাসা’র কোজাগরী। মাত্র ২৩ বছর বয়সে ‘এক আকাশের নীচে’ সিরিয়ালে প্রথম মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অপরাজিতা। সেই সময় স্টিরিওটাইপ হওয়ার ভয় অনেকেই দেখিয়েছিলেন অপরাজিতাকে। তিনি TV9 বাংলাকে বলেছিলেন, “মা হলেন হিরো। তিনি গোটা সংসারটাকে আগলে রাখেন। সুতরাং তিনি, একজন হিরোর চরিত্রে অভিনয় করেন।” নিজের বায়োলজিক্যাল ‘মা’ না-হয়ে উঠতে পারা নিয়ে অপরাজিতা বলেছিলেন, “আমি বিশ্বাস করি না, যে সকলকে biological mother (জন্মদাত্রী মা) হতেই হবে। আমার মনে হয়, মাতৃত্ব অনেক বৃহৎ জিনিস। কেবলমাত্র সন্তানের জন্ম দিয়ে মাতৃত্ব প্রমাণ করা যায় না। মাতৃত্বের অনেক দিক আছে। আমি মনে করি বাবারাও অনেক ভাল ‘মা’ হতে পারেন। আমারও তো মেয়ে আছে। সে আমাকে ‘মা’ বলে ডাকে। কেবল সে-ই (এক্ষেত্রে গার্গী) নয়, অনেকেই আমাকে ‘মা’ বলে ডাকে। তাই জীবনে কোনও ঘাটতি নেই। যাঁদের আমি সন্তানসম স্নেহ করি, প্রত্যেকে আমাকে ‘মা’ বলেই ডাকে। সুতরাং, ‘মা’ ডাকের অভাব আমার কাছে নেই।”