প্রদীপের নীচে অন্ধকার থাকে। এই কথা নতুন নয়। সকলেই তা জানেন। মধ্যগগনে থাকা উত্তমকুমারের জীবনটাও খানিকটা সেরকমই। দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে, তাঁর জীবন কতই না আলোয় আলোকিত। কিন্তু সত্যি বলতে, উত্তমকুমার যতখানি আলোকিত ছিলেন পর্দায়, ততখানিই নাকি দুঃখে ছিলেন নিজ জীবনে। পরিপূর্ণ ছিল না তাঁর ব্যক্তি জীবন। শান্তি ছিল না সংসারে। এমনটাই বলতেন উত্তমের ঘনিষ্ঠজন এবং ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর নিকট বন্ধুরা। শোনা যায়, শ্রী গৌরীদেবীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক একটা সময় তলানিতে এসে ঠেকেছিল। জানলে অবাক হবেন, গৌরীদেবী নাকি উত্তমকুমারের অভিনয় পেশাকে একেবারেই পছন্দ করতেন না এবং তাঁকে নানা কথা শোনাতেন।
উত্তমকুমারের পাড়ার মেয়ে ছিলেন গৌরীদেবী। ভবানীপুরের যে বাড়িতে বড় হয়েছিলেন উত্তমকুমার, সেই পাড়াতেই থাকতেন গৌরীদেবী। পাড়ায় বসবাস করার সময় সেই কিশোরবেলাতেই গৌরীদেবীর সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্ক তৈরি হয় মহানায়ক উত্তমকুমারের। তখন উত্তমকুমার মহানায়ক হননি। সিনেমাতেও নামেননি। ছোটখাটো দলে নাটক করেন মাত্র। উত্তমকুমারের সঙ্গে বিয়ে হয় গৌরীদেবীর। শুরু হয় উত্তমের রুপালি পর্দার যাত্রা। কিন্তু তাঁর এই পেশাকে কখনওই ভাল চোখে দেখতে পারতেন না গৌরীদেবী। ইন্ডাস্ট্রির সকলেই বলাবলি করতেন, মহানায়কের সাফল্য নিয়ে নাকি তেমন মাথাব্যথা ছিল না গৌরীদেবীর। বাড়িতে কোনও প্রযোজক এলে, ছবি নিয়ে কোনও কথাবার্তা চললে, গৌরীদেবীর নাকি একটাই প্রশ্ন থাকত–ওঁরা কত টাকা দিচ্ছে। ওইটুকুই! স্বামীর অভিনয়, অভিনয় জীবনে তাঁর হতাশা–এসব নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবিত ছিলেন না উত্তম। সেদিক থেকে দেখতে গেলে স্ত্রী নাকি তাঁর অর্ধাঙ্গিনী হতে পারেননি তেমনভাবে।
ফলে সেই কারণেই নাকি কখনও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, কখনও সুপ্রিয়াদেবীদের মতো অভিনেত্রীদের কাছে ছুট্টে-ছুট্টে গিয়েছিলেন উত্তমকুমার। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। অনেকটা গৌরীদেবীর তাচ্ছিল্যের কারণেই এমনটা করেছিলেন মহানায়ক। সবটাই লোকের মুখের কথা।