
তিনি ধারাবাহিকের সুপারহিট বউমা শ্রীময়ী। একহাতে স্বামী, সংসার সামলাতেন। তিনি আবার গোয়েন্দা গিন্নিও বটে। হাতের তুড়িতে রহস্যের সমাধান। সিনেমার পর্দায় তিনি আবার কখনও ‘নীলিমায় নীল’ তো কখনও ‘দহন’ ছবির ডাকাবুকো সাংবাদিক। হ্যাঁ, ইন্দ্রাণী হালদার বলতেই পর পর মগজে চলে আসবে তাঁর দুরন্ত সব অভিনয়। কিন্তু রিলের বাইরের রিয়েল ইন্দ্রাণীর মধ্যে রয়েছে তফাৎ। বড্ড মাথা গরম মেয়েটি একসময় চেয়েছিল এয়ারহোস্টেজ হতে, কিন্তু বিমানে যাত্রীর বমি, বাচ্চার পটি পরিষ্কার করার কথা মাথায় আসতেই প্ল্যান চেঞ্জ। হলেন অভিনেত্রী। তবে সফল এই অভিনেত্রীর মনের মধ্যে রয়েছে এক বিশাল আক্ষেপ। মা হওয়া হল না তাঁর! আর এর নেপথ্যে রয়েছে ইন্দ্রাণীর কাঁধে থাকা হাজার দায়িত্ব।
ব্য়াপারটা একটু খোলসা করে বলা যাক। বেশ কয়েক বছর আগে এক বেসরকারি চ্যানেলে আলাপচারিতায় সঞ্চালক শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের প্রশ্নে মনের কথা খোলসা করেছিলেন ইন্দ্রাণী। খোলাখুলিই বলেছিলেন, তাঁর জীবনের এই আক্ষেপের কথা।
ইন্দ্রাণীর কেরিয়ার গ্রাফ তখন উর্ধ্ব গগণে। দিনরাত শুধু শুটিং করেই চলেছেন। তাঁর ডেট পাওয়া ছিল খুব মুশকিল। তখন কেরিয়ার ছাড়া অন্য কোনও কিছুর দিকে নজর দেননি অভিনেত্রী। তবে এসবের মাঝে সংসার সামলাচ্ছিলেন একেবারে শ্রীময়ীর মতোই। সকলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে তুলে। কিন্তু এভাবে ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে দিন এগিয়ে গেলে, হঠাৎ বুঝতে পারলেন সময়টা অনেকটা পেরিয়ে গিয়েছে। কেরিয়ার তো হল, সংসারও সামলানো গেল, কিন্তু মা হওয়া আর হল না!
শাশ্বতর সঙ্গে আলাপচারিতায় ইন্দ্রাণী জানালেন, আমার ও আমার স্বামী ভাস্করের এটা একটা মস্তবড় আফশোস। ভাস্কর মাঝে মাঝে বলত, সারা জীবন শুধু সংসারের সকলের জন্য দায়িত্বই পালন করে গেলে, নিজের কথা ভাবলে না। এরপর বয়স হয়ে গেল, কিন্তু আমরা চেষ্টা করেছিলাম। পরে সেই চেষ্টাও ছেড়ে দিলাম। অবশ্য আমি ভেবেছিলাম একটা সন্তান দত্তক নেওয়ার কথা,কিন্তু ভাস্কর সেটায় রাজি হয়নি।
আফশোসের সুরেই ইন্দ্রাণী জানালেন, ”এটাই আমার একটা বড় আক্ষেপ স্ত্রী হিসেবে, যে ভাস্করকে বাবা হওয়ার সুখ দিতে পারিনি। সেখানে আমি অক্ষম। তবে সন্তান না হওয়ায়, আমাদের মধ্যে এই নিয়ে কোনও সমস্যা ছিল না।” ইন্দ্রাণীর মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে শাশ্বত ঝটপট বলে ফেললেন, ”সন্তানের মা না হলেও, ইন্দ্রাণী কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির মামণি!” হালকা হেসে এরপর ইন্দ্রাণী বলেন, ”সন্তানের জন্ম দিতে না পেরেও, আমার অনেক সন্তান রয়েছে। সেই সন্তানদের নিয়ে আমি খুশি।”