‘যে দিন সত্যি মানুষখেকো বাঘের মুখে পড়বে…’, দিতিপ্রিয়া মুখ খুলতেই সতর্ক করলেন জীতু

দিতিপ্রিয়ার কাছে 'অনৈতিক' বলে মনে হয়েছে। দিতিপ্রিয়া এই অভিনেতার নাম না নিলেও, দর্শকরা খুব সহজেই বুঝে গিয়েছিলেন, ইনি আর কেউ নন, দিতিপ্রিয়ার 'চিরদিনই তুমি যে আমার' ধারাবাহিকের সহ-অভিনেতা জীতু কমল।

যে দিন সত্যি মানুষখেকো বাঘের মুখে পড়বে..., দিতিপ্রিয়া মুখ খুলতেই সতর্ক করলেন জীতু
Image Credit source: Social Media

|

Aug 05, 2025 | 10:48 PM

সোমবার রাতে আচমকাই দিতিপ্রিয়ার সোশাল মিডিয়ায় লম্বা একটা পোস্ট। নাম না করে তাঁর এক জনপ্রিয় ধারাবাহিকের সহঅভিনেতার দিকে অভিযোগের তির ছুঁড়লেন দিতিপ্রিয়া। মূলত, তাঁর এই পোস্টে তুলে ধরলেন অভিনেতার সঙ্গে তাঁর হোয়াটসঅ্য়াপ চ্যাটের কথোপকথনের কিছু অংশ। যা দিতিপ্রিয়ার কাছে ‘অনৈতিক’ বলে মনে হয়েছে। দিতিপ্রিয়া এই অভিনেতার নাম না নিলেও, দর্শকরা খুব সহজেই বুঝে গিয়েছিলেন, ইনি আর কেউ নন, দিতিপ্রিয়ার ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ ধারাবাহিকের সহ-অভিনেতা জীতু কমল।

আসলে এই বিতর্কের সূত্রপাত, জীতু ও দিতিপ্রিয়য়ার চিরদিনই তুমি যে আমার ধারাবাহিকের একটা ছবি পোস্ট করা থেকেই। যে ছবিটি পোস্ট করেছিলেন জীতু নিজেই। যা দেখে দিতিপ্রিয়ার মনে হয়েছিল, ছবিটি পোস্ট করে জীতু অনুচিত করেছেন। এই ঘটনার কথা প্রোডাকশন হাউজকেও জানান দিতিপ্রিয়া। জীতু ছবিটি ডিলিটও করে দেন। কিন্তু বিতর্ক শেষ হয় না। দিতিপ্রিয়ার অভিযোগ, জীতু এরপরও নানা সময়ে, নানা সাক্ষাৎকারে সেই ছবির প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। এরই মাঝে এআই দিয়ে তৈরি দিতিপ্রিয়া ও জীতুর চুম্বনের ছবি ভাইরাল হয় সোশাল মিডিয়ায়। সেই ছবি ভাইরাল হতেই, সোশাল মিডিয়ায় জীতু ও দিতিপ্রিয়াকে ঘিরে নানা গুঞ্জন। গুঞ্জন ছড়ায় তাঁরা নাকি দু’জন প্রেম করছেন! দিতিপ্রিয়া তাঁর পোস্টে জানিয়েছেন, এই গুঞ্জনকে প্রথমে তিনি পাত্তা দেননি। কিন্তু গুঞ্জন বেড়ে যাওয়ায় এবং জীতুর কিছু মেসেজকে তাঁর ‘অনুচিত’ মনে হওয়ায় এবার মুখ খুলতে বাধ্য হলেন।

সোমবার রাতে দিতিপ্রিয়ার করা পোস্ট ভাইরাল হতেই, এবার মাঠে নামলেন জীতুও। দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে তাঁর ঠিক কী কী কথা হয়েছে, সেই প্রমাণও দিলেন নতুন পোস্টে। শেয়ার করলেন তাঁদের হোয়াটসঅ্যাপ দীর্ঘ চ্যাটের স্ক্রিনশট। তবে পোস্টে জীতুও তাঁর সহঅভিনেত্রীর নাম ফাঁস করলেন না। তাঁকে শুধুই ‘বাচ্চা মেয়ে’ বলে সম্বোধন করলেন। সুরক্ষার কথা ভেবে এমনকী ‘বাচ্চা মেয়ে’-র ফোন নম্বরও ঝাঁপসা করলেন।

ঠিক কী লিখলেন জীতু?

জীতু বরাবরই প্রাইভেট পার্সন। সোশাল মিডিয়াতে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কখনই তিনি মতামত দেন না। অন্তত, জীতু তাঁর এই পোস্টের শুরুতে সেটাই উল্লেখ করেছেন। তবে সহঅভিনেত্রীর ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্টে, তিনি চুপ থাকলেন না। কেননা, জীতুর কাছে এই ঘটনা যতটা না ব্যক্তিগত, তার থেকে বেশি পেশাগত। এমনকী, এই সমস্যাকে জীতু ‘ছোট্ট সমস্যা’ বলেও বর্ণনা করেছেন। শুধু তাই নয়, জীতু দিতিপ্রিয়ার সম্পর্কে স্পষ্ট লিখেছেন, ”এই মেয়েটিকে পেছন থেকে প্রবঞ্চনা দেওয়া হচ্ছে। যারা দিচ্ছে তারা কিন্তু এই মেয়েটির বিপদের সময় পাশে দাঁড়াবে না। প্লিজ মেয়েটিকে মেয়েটির পথে থাকতে দিন।”

দিতিপ্রিয়া ঠিক কী লিখেছিলেন সোমবার রাতের পোস্টে?

সোশাল মিডিয়ায় দিতিপ্রিয়া লেখেন, ”গত কয়েকদিন ধরে চলতে থাকা আমাকে নিয়ে নানা রকমের স্পেকুলেশন নিয়ে আমি সভাবতই চুপ ছিলাম। কারণ আমি বিশ্বাস করি “Ignorance is bliss”। প্রথমত, একটি ছবি পোস্ট করা নিয়ে জলঘোলা শুরু। প্রোডাকশন টিম সবসময়েই আমাদের কিছু ছবি দিয়ে থাকে দুজনকেই সমাজমাধ্যমে পোস্ট করার জন্য। আমার কো-অ্যাক্টর সেই সব ছবিই পোস্ট করেন। সেই ছবিগুলোর মধ্যে একটি আমার ব্যক্তিগতভাবে একেবারেই ভালো লাগে না। ছবিটা তিনি ডিলিট করেন।

তারপর বিভিন্ন ইন্টারভিউতে বারবার বলেছেন, “আমার পোস্ট করা ছবিতে নাকি অনেক খারাপ ও নোংরা কমেন্ট এসেছে, তাই ও (আমি) খুব কষ্ট পেয়েছে । কিন্তু আমি তো তার সঙ্গে কথাই বলিনি! আমি শুধুমাত্র প্রোডাকশনকে জানিয়েছিলাম, কারণ ছবিটা তাদেরই তোলা ছিল আর ছবিটা আমার দৃষ্টিতে ইনঅ্যাপ্রোপ্রিয়েট মনে হয়। আমি কোনোরকম নোংরা বা অশ্লীল কমেন্টের কথা কখনোই বলিনি এবং কেউ-ই এই আমার ছবিটি ইনঅ্যাপ্রোপ্রিয়েট লাগা কে নিয়ে সেইসময় আমায় কোনও আপত্তি জানায়নি। বরং পরবর্তীকালে বারবার শুনতে হয়েছে, আমি নাকি, তাই স্পন্টেনিয়াসলি হ্যান্ডেল করতে পারি না! একটা ছবি তো, তা নিয়ে এত কিছু!

তিনি আরও বলেন, “আমি দিতিপ্রিয়াকে খুব শ্রদ্ধ্য করি এবং স্নেহ করি। ওর ডেডিকেশন অন্যরকমের”। আমার কো-অ্যাক্টর আমাকে ভীষণ সম্মান করেন ও স্নেহ করেন—এটাই আমি বিশ্বাস করতে চাই। প্রথম এক মাসের পর থেকেই আমার কো-অ্যাক্টর আমার সঙ্গে কথা বলেন না, শুধু হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ রাখেন। আমি তাকে কারন জিজ্ঞেস করলে বলেন, “তোমার মা-কে ভয় পাই, কিন্তু তোমাকে ভীষণ সম্মান করি।”

এতটাই স্নেহ করেন ও সম্মান করেন যে একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “ওই ইভেন্টে যাচ্ছো?” আমি বলি, “না, আমার ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে।” তিনি জানতে চান, “কেন, তুমি কি প্রেগন্যান্ট?” আরেকটি ঘটনায়, একটি AI-তে বানানো ছবি যেখানে দেখা যায় আমরা চুম্বন করছি—ওই ছবি আমাকে মাঝরাতে পাঠিয়ে লেখেন, “বেশ হয়েছে, এটা বয়ফ্রেন্ডকে পাঠাও”। সাথে লেখেন, “এই রাতেই ব্রেকআপ হয়ে যাবে ”।

এরপর আরেকদিন আমাকে মেসেজ করে বলেন, “আমার তোমার সঙ্গে কথা আছে, দেখো যেন তোমার মা না জানতে পারেন । কাকিমাকে আমি ভয় পাই।” এই সব ঘটনাগুলো প্রাথমিক ভাবে মজার ছলে নিয়ে থাকলেও পরবর্তীকালে আমাকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলেছে। সেটেও কিছু বিষয় নিয়ে আমার অস্বস্তি শুরু হয়েছিল। আমাদের শ্যুটিং ফ্লোরে প্রায় সবাই জানে এই ঘটনা। আমি এতদিন চুপ ছিলাম কারণ এসব নিয়ে গণ্ডগোল করে কাজ নষ্ট করতে আমার পরিবার আমাকে শেখায়নি।আমাদের দারুণ চলতে থাক শো’টা ব্যহত হোক আমি চাইনি।

আর চুপ থাকতে পারলাম না। কিছু মানুষ মুখ বুজে সহ্য কোরে গেলে, কিছু মানুষ সীমা ছাড়িয়ে যায়। আমি কখনও অন্যায়ের সঙ্গে আপস করিনি, আর করবোও না। প্রতিদিনের এই কাঁটাছেঁড়া এখন খুব একতরফা হয়ে যাচ্ছে। আমার সিরিয়ালের কো-অ্যাক্টরের আরও বেশ কয়েকটি কাজেই কো-অ্যাক্টরদের সঙ্গে নানা ভাবে সমস্যা হয়েছে বলে শোনা যায়। তবে আমার কাজ উনি শুরু থেকেই খুব অ্যাপ্রিসিয়েট করেছেন—আমিও চেষ্টা করেছি রেসিপ্রোকেট করার।