প্রখ্যাত অভিনেতা মনু মুখোপাধ্যায়, আজ প্রয়াত হয়েছেন। মৃত্যুর ময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। দীর্ঘদিন ধরে হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। তাঁর নশ্বর দেহ দুপুর দেড়টা অবধি তাঁর বাড়িতে রাখা থাকবে, তারপর কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। মৃণাল সেনের ‘মৃগয়া’, সত্যজিৎ রায়ের ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘গণশত্রু’ ছাড়াও ‘সাহেব’ ‘পাতালঘর’ ‘প্রতিদান’ সহ একাধিক বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন মনু মুখোপাধ্যায়। শুধু বড় পর্দাতেই নয়, ছোটপর্দাতেও নিয়মিত কাজ করেছেন তিনি।
আর্টিস্ট ফোরামের কার্যকারী সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তীর জানান, “খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি। একে একে সবাই আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি আর শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় (যুগ্ম সম্পাদক, আর্টিস্ট ফোরাম) ওঁর বাড়িতে পোঁছচ্ছি। দেড়টায় বেড়িয়ে কেওড়াতলা পৌঁছব। আসলে আজ অফিস সব বন্ধ, তাই কোনও স্টুডিওতে নিয়ে যেতে পারছি না। ইন্দ্রনীল সেনের সঙ্গে কথা বলে ভিআইপি চুল্লির বিষয়েও কথা হয়েছে।”
শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় জানান, “আমরা এখন মনুবাবুর বাড়িতে রয়েছি। আর্টিস্ট ফোরাম থেকে অনেকে এখানে এসেছি। শঙ্কর চক্রবর্তী, দেবদূত ঘোষ, শুভাশিষ মুখোপাধ্যায়, অনেকে আছি। মন খুব একটা কারওর ভাল নেই।”
বর্ষীয়ান অভিনেতার মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি লেখেন, ‘মঞ্চ এবং সিনেমা জগতের বর্ষীয়ান অভিনেতার মৃত্যুতে আমি শোকাহত। ২০০৫ সালে টেলি পুরস্কার অনুষ্ঠানে তাঁকে জীবনকৃতি সম্মানে ভূষিত করেছিলাম। তাঁর পরিবার-সহকর্মী এবং অনুরাগীদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।’
মনু মুখোপাধ্যায়ের শেষ অভিনীত ছবি ‘ভটভটি’। পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়। অতিমারির কারণে ছবির রিলিজ পিছিয়ে গিয়েছে। ফোনে ধরা হলে তথাগত বলেন “সহ-অভিনেতা হয়ে মনুদার সঙ্গে কোনও কাজ করা হয়নি। ‘ভটভটি’তে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ হল। কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি, মানুষটা জীবনকে দারুণ উপভোগ করতেন। ৯০ বছর বয়সেও এমন হাসি-ঠাট্টা করে শুটিং করা যায়, মনুদাকে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। সারাক্ষণ ফ্লোর মাতিয়ে রাখতেন। নানা রকম মজার মজার কথা বলতেন, লেগপুল করতেন। মনুদার মনে বয়সের ভার থাবা বসাতে পারেনি । এতটা তরতাজা ছিলেন তিনি। ছেলেমানুষিও ছিল। কাজের ফাঁকে লুকিয়ে লুকিয়ে সিগারেট খেতেন। কতদিন ধরাও পড়ে গিয়েছেন। মনুদার মতো অভিনেতাকে হারিয়ে খারাপ তো লাগেছেই, তবে এটাও বলব, মনুদা কিন্তু পুরোপুরিভাবে জীবনের স্বাদ নিয়েছেন, এটা ওঁর কাছ থেকে শেখার মতো।”