স্নেহা সেনগুপ্ত
‘গর্ভবতী’ ঋতাভরী চক্রবর্তীর পোস্ট করা ‘খুশির খবর’কে একেবারেই ভাল চোখে দেখতে চাইছেন না অভিনেত্রীর ডেবিউ ওয়েব সিরিজ়ের রচয়িতা। শুধু তাই-ই নয়, ‘গর্ভবতী’ বেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনেত্রীর প্রচারকৌশলের ব্যাপারে তাঁকে কিছুই জানানো হয়নি বলেও দাবি ওয়েব সিরিজ়ের মূল গল্পকারের। বৃহস্পতিবার নিজেকে ‘গর্ভবতী’ বলে যে পোস্ট করেছিলেন ঋতাভরী, সেই পোস্টেরই সূত্র ধরে শুক্রবার তাঁর পরবর্তী পোস্টে বেবি-বাম্পের ছবি শেয়ার করে অভিনেত্রী যা জানালেন, তার অর্থ এরকম: তাঁর অভিনীত নতুন ওয়েব সিরিজ় মুক্তি পাচ্ছে আগামী ১৫ অক্টোবর। সিরিজ়ের নাম ‘নন্দিনী’। শুক্রবারের ওই পোস্টেই উল্লেখ রয়েছে ‘নন্দিনী’র রচয়িতার নাম: সায়ন্তনী পূততুন্ড। বেবি বাম্পের ছবি শেয়ার করা যে আসলে ঋতাভরীর পরের ওয়েব সিরিজ় ‘নন্দিনী’র প্রচার কৌশল, তা কার্যত স্পষ্ট শুক্রবারের পোস্ট থেকে। সেই প্রচার কৌশলকেই একপ্রকার একহাত নিলেন লেখিকা সায়ন্তনী। TV9 বাংলাকে সাফ জানালেন, এভাবে যে প্রচার চালানো হবে, তার ‘বিন্দুবিসর্গ’ও জানানো হয়নি তাঁকে। ঠিক কী হয়েছিল বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত?
বৃহস্পতিবার যে পোস্টটি ঋতাভরী করেছিলেন, তাতে অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা। গোলাপি রং মাখানো ছবিতে নীলের উপর সাদায় লেখা ছিল, “আমি আর আমার স্বামী অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমি প্রেগন্যান্ট। আপনাদের সকলের ভালবাসা এবং আশীর্বাদ প্রয়োজন।” এই পোস্টের পর টলিউডের নামীরা থেকে আমজনতা, অনুরাগী, সক্কলেই শুভেচ্ছাবার্তা জানাতে থাকেন কমেন্টস সেকশনে। বিগত কয়েক বছরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের সন্তান জন্মানোর খবর, বেবি বাম্পের ছবি পোস্ট খুব পরিচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। হলিউড, বলিউড এবং টলিউডেও এভাবেই সকলে ‘খুশির খবর’ ভাগ করে নেন। ঋতাভরীর পোস্ট দেখেও নেটিজ়েনদের একটা বিরাট অংশ ভেবে বসেন, অভিনেত্রী সত্যিই প্রেগন্যান্ট।
এরপর ২৪ ঘণ্টা ঘুরতে না-ঘুরতেই শুক্রবার বেলায় ঋতাভরীর দ্বিতীয় পোস্ট। তাতে তিনি লম্বা ক্যাপশনও লেখেন বেবি-বাম্পের ছবি দিয়ে। সেই ছবি দেখার পর নেটিজ়েনদের একের পর-এক কমেন্ট পড়ে বুঝতে কার্যত কোনওই অসুবিধে হয় না যে, বৃহস্পতিবারের পোস্টটি ছিল কেবলই একটি প্রচার কৌশল। তিনি আসলে অন্তঃসত্ত্বা নন। তাঁর অভিনীত নতুন ওয়েব সিরিজ়, যার মুক্তি আগামী ১৫ অক্টোবর, সেই ‘নন্দিনী’র জন্যই এই সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট। এ প্রসঙ্গেই TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় সায়ন্তনীর সঙ্গে (সায়ন্তনীর লেখা ‘নন্দিনী’ উপন্যাসের গল্প অবলম্বনেই তৈরি হয়েছে এই সিরিজ়)। উপন্যাসের সিগ্ধা চরিত্রে দেখা যাবে ঋতাভরীকে। এবং সেই ওয়েব সিরিজ় প্রচার করতেই এহেন ‘কৌশল’-এর আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।
ওয়েব সিরিজ়কে দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে প্রেগন্যান্সির মতো স্পর্শকাতর বিষয়কে ব্যবহার করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সায়ন্তনীর সাফ দাবি, এই ধরনের পোস্ট ঋতাভরী করবেন, তা তিনি বিন্দুবিসর্গও জানতে পারেননি। তাঁর কাছে TV9 বাংলা জানতে চায় ওয়েব সিরিজ়কে প্রচার করার জন্য গর্ভাবস্থার মতো বিষয়কে ব্যবহার করা কতখানি মানবিক? ওপাশ থেকে স্পষ্ট সায়ন্তনীর অসহায়তা, “এগুলো তো মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি। আমার মতো একজন লেখিকার এখানে হাত-পা বাঁধা। সে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না।”
সায়ন্তনীর দাবি, তিনি জানতেন না এভাবে ওয়েব সিরিজ়কে প্রচার করা হবে। ঋতাভরীর প্রথম পোস্ট দেখে তিনিও ধরেই নিয়েছিলেন অভিনেত্রী আসলে গর্ভবতী। সায়ন্তনী বলেন, “আমি তো বোকার মতো ওঁকে শুভেচ্ছা জানাতে যাচ্ছিলাম। তারপর আমি নিজেও বোকা হয়ে গিয়েছি। নিজেকে স্টুপিড মনে হয়েছে। আমার অন্তত বোঝা উচিত ছিল।”
সকলেই জানেন, ঋতাভরী বিবাহিতা নন। তাই নেটিজ়েনদের অনেকে ‘তাঁর বাচ্চার বাবা কে’ জানতে চেয়েছিলেন বৃহস্পতিবারের পোস্টের পর। একটি মন্তব্যের তলায় ঋতাভরী নামও লিখেছিলেন, ঋতম রায়চৌধুরী। সায়ন্তনী তখন বুঝেছিলেন, ঋতম আসলে তাঁর ‘নন্দিনী’ উপন্যাসের নায়ক। ওই নাম দেখে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন সায়ন্তনী। TV9 বাংলাকে তিনি বলেছেন, “আমি ঠিক এই জাতীয় প্রচারের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।”
১৯৯৪ সালে ভারতীয় সংসদে যে আইন প্রণয়ন হয়, সেই আইন বলছে: গর্ভস্থ্য সন্তানের লিঙ্গ জানা যাবে না এ দেশে। সেই আইন ভারতের সর্বত্র। সায়ন্তনীর উপন্যাসের নন্দিনী আসলে নায়িকা সিদ্ধার গর্ভের কন্যা ভ্রুণের নাম। জন্মের পূর্বে কোনও দম্পতি কি পারে ভ্রুণের লিঙ্গ-পরিচয় প্রকাশ্যে আনতে? ঋতাভরীর পোস্টে ইতিমধ্যে কমেন্টও এসেছে, “লিঙ্গ নির্ধারণ আইনত অপরাধ।” এ প্রসঙ্গে প্রচার কৌশল সম্পর্কে কার্যত অন্ধকারে থাকা লেখিকা সায়ন্তনীর সাফ উত্তর, “এটা নিঃসন্দেহে অপরাধ। এবং এটা নিয়েই আমার উপন্যাস। এই সমস্যাকেই তুলে ধরা হয়েছে উপন্যাসে।”