Big News: ‘এটা মান-সম্মানের লড়াই চলছে’, এবার মুখ খুললেন প্রসেনজিৎ
Prosenjit Chatterjee: এই পরিস্থিতির সমাধান খুঁজতেই সোমবার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বালিগঞ্জের বাড়িতে সকাল সকাল বসে বৈঠক। যেখানে উপস্থিত থাকেন টলিপাড়ার প্রথম সারির একগুচ্ছ পরিচালকেরা। রাজ চক্রবর্তী থেকে শুরু করে হরনাথ চক্রবর্তী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল প্রমুখেরা।
তিনি ইন্ডাস্ট্রি। বেশ কয়েক দশক ধরে টালিগঞ্জের যাবতীয় ওঠা-পড়ার সঙ্গে তিনি ওতোপ্রতভাবে জড়িত। অতীতেও যখনই সমস্যা তৈরি হয়েছে টলি পাড়ায়, অভিভাবক হয়ে এগিয়ে এসেছেন তিনি। এবারও অন্যথা হল না। সপ্তাহ খানেক ধরে চলতে থাকা সিনে পাড়ায় জটিলতা কাটাতে উদ্যোগী হয়ে নিজের বাড়ি ‘উৎসব’-এ ডেকে নিয়েছিলেন নবীন থেকে প্রবীণ পরিচালকদের। সেই ঘরোয়া বৈঠক মিটতেই সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে ইন্ডাস্ট্রির অভিভাবক ‘বুম্বা দা’ জানিয়ে দিলেন, যা চলছে তা আদপে ‘মান-সম্মানের লড়াই’। কিন্তু কী হয়েছে টলি পাড়ায়?
পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের একটি ছবির বেশ কিছু অংশ বাংলাদেশে শ্যুটিং হওয়া নিয়েই যাবতীয় সমস্যার সূত্রপাত। কলাকুশলীদের সংগঠন ‘টেকনিশিয়ান গিল্ড’-এর মতে সংশ্লিষ্ট ছবির শ্যুটিং-এ বাংলাদেশের কলাকুশলীরা কাজ করায় বঞ্চিত হয়েছেন এ রাজ্যের সিনে-কর্মীরা। যদিও, রাহুল ও ছবিটির বাংলাদেশি প্রযোজকের পক্ষ থেকে দাবি, কলকাতায় কাজ করতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু, ছবিকে বিদেশি তকমা দিয়ে নির্ধারিত পারিশ্রমিকের বেশী টাকা ধার্য করা হয় যা প্রযোজকের পক্ষে বহন করা সম্ভব হয়নি। ফলে কাজ থেমে যায়। তাই ওপার বাংলায় দিয়ে বাকিকাজ সমাপ্ত করার সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট নয় কলকাতার ‘টেকনিশিয়ান গিল্ড’। তাদের দাবি, বাইরে গিয়ে কাজ করলে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে হয়। রাহুল মুখোপাধ্যায় তা করেননি। এরপরই রাহুলবাবুর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের কথা সমনে আসে। বলা হয়, ৩ মাস পরিচালক বা নির্দেশক হিসাবে তিনি কাজ করতে পারবেন না। তবে প্রথমদিনের বৈঠকের পর রাহুলের কাজে খানিক ছাড়পত্র মেলে। ক্রিয়েটিভ প্রযোজক হিসেবে তাঁকে কাজে বহাল রাখার নির্দেশও মেলে। যদিও সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজি ছিল না পরিচালক সংগঠন। এই পরিস্থিতিতে কলতাকার পরিচালকদের সংগঠন ‘ডিরেক্টরস গিল্ড’ রাহুলবাবুর পাশে দাঁড়ায়। পাশাপাশি এসভিএফ প্রযোজিত রাহুল মুখোপাধ্যায়ের পরবর্তী ছবির শ্যুটিং নিয়ে গোল বাঁধে। সেই ছবিতে আবার প্রসেনজিৎ, অনির্বাণ ভট্টাচার্যেরা অভিনয় করছেন। সেই ছবির ভবিষ্যৎ নিয়েও একশ্রেণি প্রশ্ন তোলে।
এই পরিস্থিতির সমাধান খুঁজতেই সোমবার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বালিগঞ্জের বাড়িতে সকাল সকাল বসে বৈঠক। যেখানে উপস্থিত থাকেন টলিপাড়ার প্রথম সারির একগুচ্ছ পরিচালকেরা। রাজ চক্রবর্তী থেকে শুরু করে হরনাথ চক্রবর্তী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল, গৌতম ঘোষ প্রমুখেরা। দ্রুত সমাধানসূত্র খুঁজতে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে করজোড়ে পরিচালকেরা অনুরোধ করলেন যে অচলবস্থা কাটিয়ে সকলে একযোগে যেন কাজে ফেরেন। নয়তো আদপে ইন্ডাস্ট্রিরই ক্ষতি।
বৈঠক শেষে প্রজেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় হাত জোড় করে বললেন, ”নমস্কার, এটা আমার বাড়ি। এখানে কোনও সাংবাদিক সম্মেলন হচ্ছে না। এটা একটা আলোচনা। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন ২০০ জন পরিচালক। সঙ্গে আমাদের কলাকুশলিরা, টেকনিশিয়ান বন্ধুরাও রয়েছেন, সর্বপরী আমাদের শিল্পীরা। দেবও (দীপক অধিকারী) আমাদের সঙ্গেই রয়েছে সব সময়। ঘাটাল থেকে ভিডিয়ো কলে যোগাযোগ রাখছে সকাল থেকে। আমরা চেষ্টা করছি। এখানে আমাদের ভূমিকাটা কী? ইন্ডাস্ট্রিতে ৩০-৪০ বছর কাজ করে একটা পরিবারে পরিণত হয়েছি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু নিয়ম আছে, নীতি আছে, যেগুলোকে পাল্টানো প্রয়োজন। আমরা সারাজীবন লড়াই করেছি টেকনিশিয়ানদের জন্য। টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে থাকাটা আমাদের এক বড় ধর্ম। পাশাপাশি শিল্পীদের আর্টিস্ট ফোরাম, যেখান প্রচুর শিল্পী রয়েছেন। তবে আমার মনে হয়, এখন যে জায়গাটায় আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি, সেটা কোনও লড়াই নয়, এটা মানসম্মানের লড়াই চলছে। একটা পরিবারে যদি আমরা সবাই বাস করি, সেখানে মান-সম্মান সবই থাকবে। তার জন্য পরিবারটা তো ভেঙে যায় না। আমরা চাই উন্নয়ন।”
এদিন তিনি আরও বলেন, ”আমরা বলছি প্যান ইন্ডিয়ান ফিল্ম, তবে প্যান ইন্ডিয়া ছবি বানাতে গেলে বাইরের লোকেদের এখানে আনতে হবে। কাজ কখনও বন্ধ হওয়া উচিত নয়। আমার ছবি বলে বলছি না, আমি এখানে অভিনেতা নই। সমস্যা থাকলে আলোচনা হোক, তবে কাজটা চলুক। বুঝতে হবে, এই কাজটার পেছনে শুধু কোনও প্রযোজক নেই, প্রচুর মাথা কাজ করে। সব পরিশ্রমটা বন্ধ হয়ে গেল, আর বানাচ্ছি কাদের জন্যে? দর্শকদের ভাল কিছু দেওয়ার জন্য। আমি বুঝতেই পারছি না বিরোধিতাটা কোথায়? আজ বাইরের লোকেরা এখানে এসে কাজ করলে উপকারটা কারা পাবে? আমি একদিনে অনেকটা খেয়ে পেটটা খারাপ করব, না একটু একটু করে রোজ খাব? এটা ভাবার সময় এসে গিয়েছে। কারণ, সত্যি অনেকে কাজ করতে চাইছে এখানে। হয়তো সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু এই সমস্যাগুলোকে কি মেটানো যায় না? এটা অনেক বছর আগেই বসা উচিত ছিল, কিছু জিনিস সকলে মিলে আলোচনা করে, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে কেউ থাকলেন, যাঁরা সাহায্য করলেন, এগুলো মিলিয়ে একটা সুস্থ পরিবেশে আসা উচিত।”
এদিকে আবার কলাকুশলীদের নিয়ে টেকনিশিয়ান্স স্টুডিয়োও আজই বিকেলে বৈঠকে বসছেন সংগঠনের শীর্ষ পদাধিকারী স্বরূপ বিশ্বাস। বৈঠক শেষে তাঁদেরও সাংবাদিক বৈঠক করার কথা। এখন দেখার বিনোদুনিয়ার এই জট আদৌ কাটে নাকি আরও উচ্চ পর্যায়ে গিয়ে তবে মিটমাট হয়। ওয়াকিবহাল মহলের চোখ এখন সেদিকেই।