
ব্রাত্য বসুর প্রশংসা করছেন শতরূপ ঘোষ। কি আবাক হয়ে যাচ্ছেন তো? তবে, এটুকুতেই যদি অবাক হয়ে যান, তাহলে আপনার চোখ কপালে ওঠার মতো আরও অনেক কিছু রয়েছে। তবে হ্যাঁ, সব শেষে পুরোটা জানার পর আপনার চোখ আবার কপাল থেকে নেমে ঠিক জায়গাতেই বসে পড়বে। গোটা ঘটনার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছেন নাট্যাচার্য গিরীশ ঘোষ।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের বহুল চর্চিত ছবি ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ দেখে মুগ্ধ বাম নেতা শতরূপ ঘোষ। সমাজমাধ্যমে দীর্ঘ এক পোস্টে ছবির ভূয়সী প্রশংসা করলেও, তাঁর অম্ল-মধুর নিশানায় ব্রাত্য বসু। ব্রাত্যর অভিনয়ের দ্বরাজ প্রশংসার পাশাপাশি শতরূপসুলভ টিপ্পনী করতেও ছাড়েননি এই বাম যুব নেতা। ছবির অন্যতম প্রধান অভিনেতা তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর অভিনয় দেখে শতরূপের সপাট মন্তব্য, “ব্রাত্যবাবু রাজনীতি ছেড়ে দিলে বাংলার রাজনীতি ও সিনেমা, দুই ক্ষেত্রেরই মঙ্গল হবে”।
সৃজিত মুখোপাধ্য়ায়ের ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবির অন্যতম মূল আকর্ষণ নাট্যাচার্য গিরিশ চন্দ্র ঘোষের চরিত্রটি। এই চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে ব্রাত্য বসুকে। এই ছবির অন্য়ান্য দাপুটে অভিনেতাদের পাশাপাশি, ব্রাত্যর অভিনয় আলাদা করে নজর কেড়েছে। অন্তত, শতরূপ এমনটাই মনে করেন। বামনেতা শতরূপের মতে, ব্রাত্য বসুর এই পারফরম্যান্স বাংলা সিনেমার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, “গিরিশ ঘোষের ভূমিকায় ওনার অভিনয় বাংলা সিনেমার Honours Board-এ স্থান পাওয়ার যোগ্য।” তবে এর পরেই তিনি যোগ করেন, ব্রাত্য বসু যদি রাজনীতিতে সময় নষ্ট না করে পূর্ণসময় অভিনয়ে দিতেন, তাতে বাংলা সিনেমার পাশাপাশি, বাংলার রাজনীতিরও মঙ্গল হত।
রাজনীতির ময়দানে শতরূপ ঘোষ এবং ব্রাত্য বসু সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর বাসিন্দা। একজন বামনেতা, আরেক জন রাজ্যের তৃণমূল সরকারের শিক্ষামন্ত্রকের দায়িত্বে। শাসক ও বিরোধী শিবিরের এই দুই নেতার মধ্যে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ তাই প্রত্যাশিত। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়েও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যকে বারং বার কটাক্ষ করেছেন ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা শতরূপ। নানা সাক্ষাৎকারে, প্যানেল ডিসকাশনে কঠোর আক্রমণ করেছেন তিনি। কিন্তু শিল্পের খাতিরে ব্রাত্য বসুর প্রতিভাকে কুর্নিশ জানাতে কখনই কার্পণ্য করেননি ইতিমধ্যে একটি তথ্যচিত্র পরিচালনা করা শতরূপ ঘোষ। তবে ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবিতে ব্রাত্যর অভিনয়ের প্রশংসার পাশাপাশি তাঁর এই পোস্টে এক চরম রাজনৈতিক কটাক্ষ যে রয়েছে তা বুঝতে নেটিজেনদের মোটেই বেগ পেতে হয়নি। অনেকেই মনে করছেন, শতরূপ সুকৌশলে অভিনয়ের প্রশংসা করার আড়ালে মন্ত্রী ও রাজনীতিক ব্রাত্য বসুকে কটাক্ষ করেছেন। এ বিষয়ে টিভি ৯ বাংলার তরফে ব্রাত্য বসুর মতামত জানতে চাওয়া হলে, তিনি মন্তব্য করা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন।
উল্লেখ্য, রাজনীতির আঙিনায় পা দেওয়ার অনেক আগেই নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা হিসাবে চূড়ান্ত স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছেন একদা বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক ব্রাত্য বসু। একাধিক সিনেমার পরিচালনাও করেছেন রাজ্যের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর লেখা ‘উইঙ্কেল টুইঙ্কেল’ নাটক বাংলা থিয়েটার জগতে এক অনন্য মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।