গাড়ি আটকে চাঁদা চাওয়া, পাড়ার টিমের রেষারেষি …সরস্বতী পুজোর স্মৃতি হাতড়ালেন টেলিপাড়ার তিন নায়িকা

utsha hazra |

Feb 16, 2021 | 10:09 PM

তিয়াসার মনে পড়ে যাচ্ছিল গোবরডাঙায় তাঁদের পাড়ার সেই ছোট্ট পুজোটার কথা। মালদার সোনামণির মনে পড়ে যাচ্ছে সরস্বতী পুজোর আগের দিনের প্রস্তুতির কথা, শ্রুতি মিস করছিলেন সেই ছোট্ট বয়স থেকে হয়ে আসা বাড়ির পুজোর আনন্দ। শহরতলিতে বেড়ে ওঠা এই তিন ব্যস্ত টেলি তারকার স্মৃতির পুজোর টুকরো ছবির গল্প শুনল টিভিনাইন বাংলা। শোনালেন ওই তিন তারকা।

গাড়ি আটকে চাঁদা চাওয়া, পাড়ার টিমের রেষারেষি ...সরস্বতী পুজোর স্মৃতি হাতড়ালেন টেলিপাড়ার তিন নায়িকা
বাঁ দিক থেকে সোনামণি, তিয়াসা এবং শ্রুতি।

Follow Us

কোনও এক ফাল্গুনের সরস্বতী পুজোর দিন। অভিনেত্রী শ্রুতি দাসের তখন ক্লাস ফাইভ। সে বারেই প্রথম শাড়ি পরেছিলেন তিনি। ‘কৃষ্ণকলি’ তিয়াসাকে আবার মা পরিয়ে দিয়েছিলেন টপের উপর শাড়ি, কানে ছিল ‘টিপের দুল’। ‘মোহর’ সোনামণি দাসের স্মৃতি আজও মনে করিয়ে প্রথম বার শাড়ি সামলাতে না পেরে প্রায় হাতে করে শাড়ি নিয়ে আসার মজার গল্প। আজ সবই অতীত। গাড়ি আটকে চাঁদা চাওয়া, রাত জেগে তরকারি কাটা, সন্ধেবেলা পাড়ার অনুষ্ঠান, অঞ্জলি দিতে গিয়ে আড়চোখে তাকানো হয় না বহুদিন…
আজ বসন্তপঞ্চমীতে যখন রাস্তায় ঢল নেমেছিল হলুদ শাড়ি, কমলা পাঞ্জাবির, অনভ্যস্ত হাতে যখন কুঁচি সামলাচ্ছিল পঞ্চদশী কন্যে তখন তিয়াসার মনে পড়ে যাচ্ছিল গোবরডাঙায় তাঁদের পাড়ার সেই ছোট্ট পুজোটার কথা। মালদার সোনামণির মনে পড়ে যাচ্ছে সরস্বতী পুজোর আগের দিনের প্রস্তুতির কথা, শ্রুতি মিস করছিলেন সেই ছোট্ট বয়স থেকে হয়ে আসা বাড়ির পুজোর আনন্দ। শহরতলিতে বেড়ে ওঠা এই তিন ব্যস্ত টেলি তারকার স্মৃতির পুজোর টুকরো ছবির গল্প শুনল টিভিনাইন বাংলা। শোনালেন ওই তিন তারকা।

তিয়াসার নস্টালজিয়া
গোবরডাঙাতেই জন্ম তিয়াসার। সেখানেই বেড়ে ওঠা। সরস্বতী পুজোর তাঁর কাছে নেহাতই পুজো ছিল না। ছিল উদযাপন। তিয়াসার মনে পড়ে যাচ্ছে, তাঁর ছোটবেলার পাড়ায় খুদেদের দু’টো টিম ছিল। কে বেশি ভাল সরস্বতী পুজো আয়োজন করতে পারবে- তা নিয়ে চলত নিরন্তর রেষারেষি। তাঁর কথায়, “মারামারি পর্যন্ত করেছি আমরা। প্যান্ডেল বাঁধা নিয়ে কী ঝামেলা…ওরা এসে আমাদের প্যান্ডেল ভেঙে দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এসে ওদের প্যান্ডেল ভেঙে দিচ্ছি।” “সাইকেল আটকেও চাঁদা তুলেছি…”, অকপট স্বীকারোক্তি বর্তমানে টেলিপাড়ার অন্যতম ব্যস্ত অভিনেত্রীর। প্রথম শাড়ি পরার অভিজ্ঞতা আজ অনেকটাই ফিকে অভিনেত্রীর কাছে। গায়ে ব্লাউজ আঁটত না। মা টপের উপরেই পরিয়ে দিতেন শাড়ি। “কানে ফুটো ছিল না, টিপ দিয়ে দুলও পড়েছি। টপের উপর শাড়ি পরতাম আর পেটটা কী মোটা লাগত আমার”, হাসতে হাসতে বললেন তিনি।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরস্বতী পুজোর দিনও তার চরিত্র বদলাল। ক্লাস নাইন-টেনের কথা… বয়েজ স্কুল থেকে নিমন্ত্রণ করতে যখন আসত সে এক আলাদাই উন্মাদনা। ফিসফাস, কানে কানে কথা… চলত সবই। শুধু স্কুলেই নয়, টিউশনের পুজোরও ছিল এক আলাদা উন্মাদনা। ভোগ রান্না, ফল কাটা, রাত জেগে আলপনা দেওয়া… একই সঙ্গে পাড়ার দুই পুজোর টক্কর। “ওরা খিচুড়ি করলে আমরা রান্না করব ফ্রায়েড রাইস… হাড্ডাহাড্ডি কম ছিল না…”, যোগ করলেন তিয়াসা।
তবে সরস্বতী পুজোর প্রেম বলতে যা বোঝায় তা তিয়াসার হয়েছে সুবানের সঙ্গেই। বাইকে করে একসঙ্গে ঘোরা…তিয়াসার কথায়, “সারাদিন ঘুরছি…কোথায় ঘুরছি নিজেরাও জানি না…”।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে সরস্বতী পুজোর আমেজ। এখন রাস্তায় বেরলেই অনুরাগী ঘিরে ধরে তাঁকে। তুলতে চায় সেলফি…তিয়াসা মিস করেন সেই ছোট্ট মেয়েটাকে… যে শাড়ি পরে, সেজে গুজে অঞ্জলি দিতে ভোরবেলায় উঠে পড়ত, সারা রাত জেগে প্যান্ডেল বাঁধত।। সেই মেয়ে আর কেউ নয়, তাঁর নস্টালজিয়া…যা আঁকড়ে আগামী দিনগুলোও কাটিয়ে দিতে চান তিনি।

 

সোনামণির হারানো দিন
আজ তাঁকে সবাই চেনে। তিনি টলিপাড়ার মোহর। ছোটবেলা কেটেছে মালদায়। খ্যাতি তাঁকে ছুঁয়ে ফেললেও তিনি ভোলেননি তাঁর ছোটবেলা। ভোলেননি মালদায় কাটান সেই সব পুরনো দিনের কথা… “আমার কাছে সরস্বতী পুজোর থেকেও বেশি মজার ছিল তার আগের দিনটা। যখন ক্লাস নাইন টেনে উঠলাম তখন যাবতীয় দায়িত্ব ছিল আমাদের উপরেও। ঠাকুর নিয়ে আসা, বাজার হাট করা… সব করতে হত”, বললেন তিনি। এমনই এক সরস্বতী পুজোয় প্রথম বার শাড়ি পরেছিলেন সোনামণি। সে এক কাণ্ড। “তখন খুব ছোট। দিদি শাড়ি পরে। আমিও জেদ করলাম শাড়ি পড়ব। শাড়িটাড়ি পরে স্কুলে গেলাম। শাড়ি গেল খুলে। গেলাম শাড়ি পরে, ফিরলাম শাড়িকে পুঁটলি বানিয়ে”, শেয়ার করলেন সোনামণি।
‘বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ হলেও সরস্বতী পুজোয় প্রেম হয়নি তাঁর কোনওদিন। জীবন জুড়ে ছিল বন্ধু বান্ধব, খাওয়া দাওয়া, সাজগোজ। চেনা জায়গার অলিগলির গন্ধে মোহিত মেয়েটা মেতে থাকতেন পাড়ার সরস্বতী পুজো নিয়ে…
সন্ধেবেলায় বসত পাড়ার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সোনামণির কথায়, “সেচদপ্তরে চাকরি করতেন বাবা। আমরা ইরিগেশন ডিপার্টমেন্টের কোয়ার্টারে থাকতাম। সন্ধেবেলা মজার মজার খেলা হত পাড়ায়। সবাই আসতো… মিউজিকাল চেয়ার…অন্তক্ষরী…কত কী…”।
কতকাল হয় না সে সব। সাফল্যের সঙ্গে বেড়েছে দায়িত্ব। কলকাতার রাস্তা আর সপ্তাহান্তে টিআরপি’র মার্কশিট তাঁকে আরও ভাল কাজের দিকে ঠেলে দেয় প্রতিনিয়ত। আজও তাই শুটিং করেই দিন কেটেছে তাঁর। শুধু কাজের ফাঁকে মনে পড়ছে বাড়ির বাইরে বন্ধুদের ডাক, সকালবেলা মায়ের চিৎকার, “ওরে চান কর রে…দেরি হয়ে গেল তো…কখন করবি…”।

শ্রুতির ফিরে দেখা
আজ দুপুর পর্যন্ত প্রিয় মানুষ স্বর্ণেন্দু সমাদ্দারের অফিসেই সরস্বতী পুজো কেটেছে কাটোয়ার মেয়ে শ্রুতির। তাঁর কাধে দায়িত্ব পড়েছিল অতিথিদের আপ্যায়নের। সেই কাজ ভাল ভাবে পালন করে বিকেল থেকে আবার শুটে ফিরেছেন শ্রুতি। বাবা-মা এসেছেন কাটোয়া থেকে। কিন্তু শ্রুতি মিস করছেন তাঁর বাড়ির পুজো। “সেই ছোট থেকে আমার বাড়িতে পুজো হয়ে এসেছে। গত দু’বছর স্বর্ণর এখানে পুজো হওয়ায় বাড়ির পুজো মিস করছি খুব…” আর স্কুল? তাঁর স্মৃতি মনে পড়ছে না? অকপট শ্রুতি। বললেন, ” কাটোয়াতে খুব নামকরা গার্লস স্কুল আর বয়েজ স্কুল পাশপাশি। সেই গার্লস স্কুলটিতেই পড়তাম আমি। সরস্বতী পুজোর দিন স্কুলের বাইরে ‘প্রেমের লাইন’। সবাই অপেক্ষা করছে প্রিয়তমের জন্য। বয়েজ স্কুলের ছেলেরা আসতো স্কুলে। আমার দায়িত্ব পড়ত আপ্যায়নের। এক সঙ্গে দুই কাজই হয়ে যেত”, আর প্রেম ” “কাকতালীয় ভাবে আমার প্রত্যেকটা বাচ্চা বয়সের প্রেম এই সরস্বতী পুজোর আগেই ভেঙে যেত। কেন হত নিজেই জানি না…বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে আমার সিঙ্গল হয়েই কাটতো।” এখন শ্রুতি সিঙ্গল নন। তাঁর জীবনে ভালবাসা নিয়ে এসেছেন স্বর্ণেন্দু। এ বার বাবা-মাও এসেছেন স্বর্ণেন্দুর পুজোয়। সবাইকে একসঙ্গে পেয়েও কোথাও গিয়ে শ্রুতির মনে পড়ে যাচ্ছে সেই সব মুহূর্তের কথা…বাবার সঙ্গে ঠাকুর কেনা, ঘুরে ঘুরে বাজার করা… শাড়ি অঞ্জলি…আরও কত কী। চাইলেও সে দিন ফিরবে না আর। ভরসা শুধুই হাতড়ান স্মৃতি…।

Next Article