স্নেহা সেনগুপ্ত
সিরিয়ালের আয়ু তিন মাস। চাকুরিরতা বউমাদের নিয়ে রেষারেষি। কোন জায়ের বউমাদের কর্মজীবনে কতখানি সফল, তাই নিয়ে গল্প বুনেছিল সুশান্ত দাসের প্রযোজনা সংস্থা। বাড়ির দুই মাঝবয়সি জায়ের মধ্যে চলতে থাকা কোন্দল নিয়ে শুরু হয়েছিল ধারাবাহিক। গতকাল (রবিবার, ৩১.০৭.২০২২) শেষদিনের শুটিং করলেন সিরিয়ালের অভিনেতা ও কলাকুশলীরা। আবেগঘন মুহূর্তের পরিবেশ আবর্তিত হয়েছিল সেটে। সকলেরই ছিল মনখারাপ। চোখে জল নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন সকলে। আসলে টেকনিশিয়ান কিংবা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দিনের অনেকটা সময় কাটাতে হয় শুটিং সেটে। পরিবারের মতো হয়ে যায় বিষয়টা। প্লাইউডের তৈরি সেট ভাঙার সঙ্গে পর্দার পরিবারগুলোও ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। দুই জায়ের একজন চৈতি ঘোষাল ভয়ানক মন খারাপ করে আছেন সেই থেকে। TV9 বাংলাকে তিনি জানালেন, এই ধারাবাহিকে তাঁর কাজ করতে তাঁর কোনও সমস্যা হয়নি। আয়ু তিন মাসের হলেও, খুব সুন্দর সহকর্মী পেয়েছিলেন তিনি। বন্ধুত্ব জমে উঠেছিল কলাকুশলীদের সঙ্গেও। রাজেশ খান্না ও অমিতাভ বচ্চনের ‘আনন্দ’ ছবির সংলাপ কোট করেছেন তিনি—’জিন্দেহি লম্বি নেহি বড়ি হোনি চাহিয়ে’। সেই সঙ্গে এটাও জানিয়েছেন ঠিক কোন কারণে সিরিয়ালের ঝাঁপি বন্ধ হল এত তাড়াতাড়ি।
মন খারাপ?
চৈতি—আছে। থাকবেই… ‘বউমা একঘর’-এর টিমটাকে আমি মিস করছি খুব। রিল্যাক্সিং টিম ছিল। এখন নেগেটিভিটি সর্বত্র। তার মধ্যেও সেটে কমেডি চলত সারাক্ষণ। অরিন্দমদার (অভিনেতা অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়) সঙ্গে কাজ করলাম। আমার স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। আজ বারবার একটা কথাই মনে হচ্ছে , ‘জিন্দেহি লম্বি নেহি বড়ি হোনি চাহিয়ে’… ‘বউমা একঘর’-এর ‘জিন্দেহি’ (জীবন) লম্বা ছিল না, কিন্তু বড় ছিল নিঃসন্দেহে… স্মৃতিটুকুই থাক… অভিনেত্রী হিসেবে কীই আর চাইতে পারি।
শেষ শুটিং ছিল, তাই তো?
চৈতি—আগামী বেশ কিছুদিন টেলিকাস্ট হবে। কিন্তু গতকাল (রবিবার, ৩১.০৭.২০২২) শেষ শুটিং ছিল।
মনে আছে, সিরিয়াল নিয়ে আপনি খুবই এক্সাইটেড ছিলেন?
চৈতি—ছিলাম। কাজটা করতে ভাল লাগছিল।
হঠাৎ কেন বন্ধ হল?
চৈতি—এটা আমারও একটা খুব বড় প্রশ্ন।
শুনছি টিআরপি বড় কারণ?
চৈতি—এ কথা সত্যি, ‘বউমা একঘর’-এর খুব বেশি টিআরপি ছিল না। কিন্তু এরকম আরও অনেক সিরিয়াল আছে, সেগুলোর টিআরপিও ভাল না। কিন্তু সেগুলো তো বন্ধ হচ্ছে না? তবে একজন প্রফেশনাল হিসেবে বলতে পারি, আমাদের সিরিয়ালটা চ্যানেল বন্ধ করেছে। এটা ওদের সিদ্ধান্ত। ওরা নিশ্চয়ই কিছু ভাবনাচিন্তা করছে।
তা হলে কি অন্যরকমের গল্প দর্শকের ভাল লাগছে না?
চৈতি—জানি না জানেন। দর্শকের মন বোঝা কঠিন। তবে গল্পটা নিঃসন্দেহে অন্যরকম ছিল। আমার নিজেরও চরিত্রটা করতে ভাল লাগছিল। কিন্তু যে কেনও কারণেই হোক, বন্ধ হচ্ছে। প্রথমে সময় বদলানো হয়। তারপর বন্ধই হয়ে যায়…
আপনি কি জানতেন সিরিয়ালটা হুট করে বন্ধ করা হবে, আভাস পেয়েছিলেন?
চৈতি—আমি জানতামই না। রাতারাতি খবর আসে।
এরপর কী করবেন?
চৈতি—আমার পরবর্তী একটা কাজ আসছে। সিরিয়ালেই। দু’-একদিনের মধ্যেই শুটিং শুরু হবে। সব পরে বলব। একটা ছবি করেছিলাম পরিচালক দীপক সান্যালের সঙ্গে। নাম ‘জীবন খাতার প্রতি পাতায়’। সেটা ছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় শেষ অভিনীত ছবি। কিছুদিন পর ছবিটা মুক্তি পাবে। স্কুলের প্রিন্সিপালের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম।