অতীতে এক সাক্ষাৎকারে কিশোরকুমার জানিয়েছিলেন, তিনি বেশ রক্ষণশীল। মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে’। স্ত্রী কেরিয়ার তৈরি করবেন, বিষয়টি একেবারেই মেনে নিতে পারতেন না। মনে করতেন, স্ত্রীদের কাজ কেবলই ঘরকন্যা সামলানো, সন্তানের প্রতিপালন করা। তাঁর সেই ধ্যানধারণা প্রথম স্ত্রী রুমা গুহ ঠাকুরতার উপর প্রয়োগ করতেই অচিরে ভেঙে যায় সেই সংসার। পথ আলাদা হয়ে যায় কিশোর-রুমার।
রুমা গুহ ঠাকুরতা। বহুমুখী প্রতিভা কিশোর কুমারের প্রথম স্ত্রী। কিশোর কুমারের একমাত্র সন্তান অমিত কুমারের মা। এই রুমাকে ভালবেসে ১৯৫১ সালে বিয়ে করেছিলেন কিশোর। সেই সময় কিশোরের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন রুমা। কেবল গান-বাজনা নয়, রুমা অভিনয়ও করতেন দুর্দান্ত। যে কারণে বাংলা-হিন্দি দুই জগতেই কদর ছিল তাঁর। নিন্দুকেরা বলেন, স্ত্রীর এই জনপ্রিয়তা নাকি কিছুতেই সহ্য করতে পারতেন না কিশোর।
সেই থেকে বাড়িতে নিত্য অশান্তিও হত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। সংসার ছেড়ে রুমার কেরিয়ার গড়তে যাওয়ায় তাগিদ কিশোর মানতে পারতেন না। কখনওই তাঁকে সমর্থন করতেন না। এগিয়ে দিতেন না সাহায্যের হাত। রুমার এগিয়ে যাওয়ার পথ রুদ্ধ করতে চেষ্টা করতেন। ভালবাসার মানুষের এমন মূর্তি দেখে ভীষণ আঘাত পেতেন রুমা। সেই সময় ইন্ডাস্ট্রিতে একাধিক মহিলাকে ঘিরে কিশোরের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জল্পনার কথাও শোনা যাচ্ছিল। তাতে আরও আহত হয়েছিলেন রুমা। মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছিল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। দু’জনেই সিদ্ধান্ত নিলেন সংসার ভাঙবেন। দীর্ঘ আট বছরের দাম্পত্যে দাড়ি টানলেন। ১৯৫৮ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ হল রুমা-কিশোরের। এরপর আরও তিনটে বিয়ে করেছেন কিশোর কুমার। রুমার সঙ্গে ছাড়াছাড়ির দু’বছর পর মধুবালাকে বিয়ে করেন কিশোর। ১৯৬৯ সালে মধুবালার অকাল মৃত্যুর পর ১৯৭৬ সালে বর্ষীয়ান অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর বর্তমান স্ত্রী অভিনেত্রী যোগিতা বালিকে বিয়ে করেন কিশোর। সেই বিয়ে ভাঙে ১৯৭৮ সালে। তারপর অভিনেত্রী লীনা চন্দ্রভারকরকে বিয়ে করেন ১৯৮০ সালে। সেই বিয়ে টিকে যায় কিশোর কুমারের মৃত্যু পর্যন্ত।